নান্টু পাল, বীরভূম: স্বপ্নাদেশ ছিল। সেই কারণেই নাকি শুরু হয়েছিল এই দুর্গা পুজো। কিন্তু, সাধারণত বাংলায় যেভাবে, যে রূপে দুর্গাপুজো হয়। তার থেকে বেশ কিছুটা আলাদা বীরভূম জেলার এই পুজো। বীরভূমের রামপুরহাটের কাছেই রয়েছে মাড়গ্রাম। সেখানেই মাধবীতলা পাড়ায় হয় এই দুর্গাপুজো। স্থানীয়দের একটি অংশের দাবি। মাধবীতলা পাড়ায় মজুমদার বাড়ির এই পুজো নাকি সাতশো বছরের পুরনো। এখন ওই এলাকায়, রামপুরবাটে একাধিক পুজো হয়। কিন্তু মাড়গ্রামের বাসিন্দাদের কাছে মজুমদার বাড়ির পুজোর গুরুত্ব বরাবরই আলাদা।
দশভুজা নয়, চতুর্ভুজা:
বাংলায় যে দুর্গাপুজো হয়, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেবী দুর্গার দশভুজা রূপের আরাধনা করা হয়। কিন্তু মাড়গ্রামের মজুমদার বাড়িতে যে দুর্গাদুর্গাপুজো" href="https://bengali.abplive.com/topic/vijayadashami" data-type="interlinkingkeywords">পুজো হয়।, সেখানে দেবী পূজিতা হন চতুর্ভুজা রূপে। নবপত্রিকায় দেবীর ছিন্নমস্তা রূপ এঁকে, সেই রূপেই নাকি পুজোর সূচনা হয়েছিল। তারপর থেকে এতদিন টানা সেই প্রথা মেনে চতুর্ভুজা রূপেই পূজিতা হয়ে আসছেন দেবী।
এলাহি ভোগের আয়োজন:
পুজো আগের মতো জাঁকজমক করে হয় না। কিন্তু ভোগের মাপকাঠিতে তা বিচার করা যাবে না। কারণ মজুমদার বাড়ির পুজোয় প্রথা মেনে এখনও ভোগ হয়। পুজোয় সপ্তমী থেকে নবমী, এই তিনদিন ভোগের আয়োজন করা হয়। কথিত রয়েছে মায়ের স্বপ্নাদেশে অন্নের ভোগ দেওয়া হয়। তার সঙ্গেই থাকে ঢালাও আয়োজন। অন্নভোগের সঙ্গে থাকে তেরো রকমের ভাজা, চোদ্দো রকমের তরকারি। তার সঙ্গে কলার মোচার বড়া ভাসা, কলার মোচার বড়া রসা। থাকে মুগের ডাল, আমসত্ত্ব দিয়ে পায়েস, এলাচ দেওয়া চাটনি। শেষে থাকে দারচিনি দিয়ে লবঙ্গ গেঁথে এক খিলি পান। ভোগ পরিপাটি করে সাজিয়ে রাখা হয় এক গ্লাস জলও। সন্ধিপুজোয় থাকে আরও আয়োজন। সন্ধি পুজোয় দুধ, সর, দই, মাখন, চাঁছি ও ক্ষীর দেওয়া হয় দেবীকে। দশমীতে দেবীকে দেওয়া হয় চিঁড়ে, খই, দই, ধান, ধুতরো এবং সিদ্ধি। মজুমদার বাড়ির এই প্রাচীন পুজোয় কোনও বলি হয় না। নবমীর দিন যজ্ঞের পরেও বলি হয় না। সেই সময় চালকুমড়ো বা কুষ্মাণ্ড শুধুমাত্র উৎসর্গ করা হয়। কোনও হাঁড়িকাঠ নেই।
সপ্তমী থেকে নবমী পর্যন্ত ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে প্রায় হাডার দেড়েক লোক নাকি একসঙ্গে পাত পেড়ে খায়। আগে জমিদারি ছিল তখন সব খরচা চলত জমিদারির অর্থেই। কিন্তু এখন সেই সময় নেই। বাড়ির পুজো এখন পরিণত হয়েছে বারোয়ারি পুজোতে। গ্রামের বাসিন্দাদের সাহায্য এবং সরকারের তরফে দেওয়া পুজোর আর্থিক অনুদানে চলে এই পুজো। মজুমদার পরিবারের বর্তমান সদস্য শ্রীমন্ত মজুমদার বলেন, 'অর্থাভাবে আজ পারিবারিক পুজো বারোয়ারি পুজো হয়েছে। মুখ্যমুন্ত্রীর অর্থ সাহায্যে এই পুজো হয়। আমি কৃতজ্ঞ।'
আরও পড়ুন: সাবেকি সুতির পোশাক, আরামদায়ক জুতো, ঋতাভরীর পুজোর সাজ সাতকাহন