ভাস্কর মুখোপাধ্যায়, দীপক ঘোষ ও বিটন চক্রবর্তী, শান্তিনিকেতন: ইউনেসকোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের (UNESCO World Heritage) সম্মান পাওয়ার পরে বিশ্বভারতীর ক্যাম্পাস জুড়ে বসানো হয়েছে ফলক। কিন্তু, সেই ফলকে ব্রাত্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। (Rabindranath Tagore) নতুন বিতর্ক বিশ্বভারতীকে ঘিরে। সম্মান-প্রাপ্তির ফলকে আচার্য-প্রধানমন্ত্রী এবং উপাচার্যের নাম থাকলেও, কেন কবিগুরুর নাম নেই? এই প্রশ্ন ঘিরে হইচই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। প্রতিক্রিয়া মেলেনি বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের।


বিতর্ক কেন?
শান্তিনিকেতন, বিশ্বভারতী। বিশ্বকবির এই অমর সৃষ্টিকে বিশ্ব ঐতিহ্যের সম্মান দিয়েছে ইউনেসকো। তারই শ্বেত-ফলকে ফের লেগেছে বিতর্কের কালি আর রাজনীতির রং!বাঙালির প্রাণের কবি, বিশ্বভারতীর প্রতিষ্ঠাতা, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরেরই নাম নেই এই ফলকে! আছেন কেবল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী! বিষয়টি নিয়ে ঠাকুর পরিবারের সদস্য সুপ্রিয় ঠাকুর বলেন, 'এটা নতুন কথা কি৷ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কোন আদর্শকে মানা হয় এখন বিশ্বভারতীতে? এই নিয়ে নিন্দার ভাষা নেই।' কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্থ বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়। আর সেই প্রতিষ্ঠানের প্রাণপুরুষের নামই নেই ফলকে! স্বাভাবিকভাবেই এই ইস্যু উঠে এসেছে জাতীয় রাজনীতির পরিসরে। শান্তিনিকেতনের প্রাক্তনী ইন্দিরা গান্ধীর দল, কংগ্রেসের সাংগঠনিক সাধারণ সম্পাদক কে সি ভেণুগোপাল সোশাল মিডিয়ায় নাম না করে নরেন্দ্র মোদিকে কটাক্ষ করে লিখেছেন,'আজ, ভয়, ঘৃণা, বিভেদের প্রধান হোতা, নিজেকে মহান শান্তিনিকেতনের আচার্য হিসাবে তুলে ধরতে চাইছেন! তাও ঠাকুরকে মুছে ফেলে!' কংগ্রেস সাংসদ জয়রাম রমেশও তাঁর পোস্টে লিখেছেন, 'নেহরুকে মুছেও শান্তি নেই! এবার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে মুছে ফেলতে চাইছে এরা!' কোন যুক্তিতে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ তাঁকে ব্রাত্য করে দিল? তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ জহর সরকার লিখেছেন, 'এক পাগল উপাচার্য আর তাঁর মালিক মনে করছেন যে, ইউনেসকো তাদেরকেই এই সম্মান দিয়েছে।' তীব্র সমালোচনার মুখে বিষয়টি নিয়ে কিছু প্রতিক্রিয়া দেয় রাজ্য বিজেপি। কিন্তু তাতে কি লাভ হবে? গত ১৭ সেপ্টেম্বর বিশ্বভারতীকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ ঘোষণা করে ইউনেসকো। আর তা নিয়ে শুরু থেকে বিতর্ক। এ বিষয়ে বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত জনসংযোগ আধিকারিক মহুয়া বন্দ্যোপাধ্যায়ও মন্তব্য করতে চাননি। 

ফিরে দেখা...
১৯৩০ সালের ২৫ অক্টোবর, অর্থাৎ আজ থেকে প্রায় ৯৩ বছর আগে ইন্দিরা দেবীকে পাঠানো চিঠিতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, তাঁর ইচ্ছার কথা জানিয়ে লিখেছিলেন, 'আমার শ্রাদ্ধ যেন ছাতিম গাছের তলায় বিনা আড়ম্বরে বিনা জনতায় হয় - শান্তিনিকেতনের শালবনের মধ্যে আমার স্মরণের সভা মর্মরিত হবে, মঞ্জরিত হবে, যেখানে যেখানে আমার ভালোবাসা আছে, সেই সেইখানেই আমার নাম থাকবে।' আজ সেই বিশ্বভারতীরই বিশ্ব-ঐতিহ্যের সম্মান প্রাপ্তির ফলকে নেই খোদ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরেরই নাম।


 


আরও পড়ুন:লাল জামা, কোঁকড়া চুলের এই খুদেই এখন টলিউডের জনপ্রিয় নায়িকা!


Education Loan Information:

Calculate Education Loan EMI