অর্ণব মুখোপাধ্যায়, সাঁইথিয়া : বকটুই গ্রামে ফটিক শেখের বাড়ি যেন ধ্বংসস্তূপ। আগুন লাগানোর আগে ঘরের জিনিসপত্র ধরে ধরে ভাঙা হয়েছে। আক্রোশের ছাপ স্পষ্ট। সিলিং ফ্যান দুমড়ে মুচড়ে পড়ে আছে। রান্নাঘরে তোবড়ানো বাসনের স্তূপ। ভাঙচুরের পরেই আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটে বলে অনুমান। 

অগ্নিদগ্ধদের আত্মীয়রা কী জানাচ্ছেন 

অগ্নিদগ্ধ হওয়ার আগে তাঁরা হয়ত ভেবেছিলেন লোহার গেটের ভিতর তাঁরা সুরক্ষিত আছেন। কিন্তু না, শেষরক্ষা হয়নি। নিহতদের আত্মীয়রা জানালেন, শেষমেষ গেট কেটে ভিতরে ঢুকে পড়ে দুষ্কৃতীরা। তারপর সবাইকে একটি ঘরে আটকে রেখে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। অগ্নিদগ্ধ হওয়ার আগে অবধি সাহায্যের জন্য আত্মীয়দের ফোন করেছিলেন ভিতরে আটকে পড়ারা। কিন্তু কেউ তাঁদের বাঁচাতে পারেনি। 
ভয়ঙ্কর হত্যালীলার পর, প্রাণভয়ে সাঁইথিয়ায় আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে নিহতের আত্মীয় মিহিলাল শেখের পরিবার। শনাক্তকরণ ছাড়াই কী করে শেষকৃত্য হল, সেই প্রশ্ন তুলছে তারা। নিহতের অভিযোগ, পুলিশের সামনেই আগুনে পুড়িয়ে মারার ঘটনা ঘটেছে। তাই রাজ্য পুলিশের ওপর আস্থা নেই, সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়েছেন নিহতের আত্মীয় মিহিলাল শেখ। 
তাঁদের অভিযোগ, রাজ্য পুলিশ চাইলেই এই হত্যালীলা আটকাতে পারত। সেদিন ভিতরে আটকে পড়া বাড়ির লোকেদের থেকে ফোন পেয়ে পুলিশকে ফোন করেও লাভ হয়নি বলে দাবি পরিবারের। 


'' মাকে চোখের সামনে পুড়তে দেখে ফোন করেছিল  নাতনি ''

মিহিলাল শেখের সঙ্গেই থাকা আরেকজন বলেন, তাঁর মেয়ে, জামাই, নাতি, নাতনি সবাইকে জ্যান্ত পুড়িয়ে মারা হয়েছে। চোখের সামনে মাকে দগ্ধ হতে দেখে ৮ বছরের নাতনি। সে শেষমেষ ফোন করেছিন তার 'নানা'কে। বলেছিল ,  '' ৮ বছরের মাকে চোখের সামনে পুড়তে দেখে ফোন করেছিল 'বাঁচাও' বলে ''


ভয়ঙ্কর হত্যালীলার পর থমথমে গোটা গ্রাম। খাঁ-খাঁ করছে বাড়ি। আতঙ্কে গ্রাম ছেড়েছে নিহত তৃণমূল উপপ্রধান ভাদু শেখের পরিবারও। শিশু, মহিলা-সহ ৮ জনকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারার পর একদিন পেরিয়ে গেলেও এখনও খড়ের গাদা থেকে ধোঁয়া বেরোচ্ছে।