প্রদ্যোত্‍ সরকার, নদিয়া: পঞ্চায়েত ভোটের (Panchayet Election) দিন বিজেপি (BJP) বা সিপিএম (cpm)-কে ঘর থেকে বেরোতে দেওয়া হবে না। ময়দানে শুধু থাকবে তৃণমূল (TMC)। এই বলেই গতকাল বিরোধীদের উদ্দেশে হুমকি দিতে শোনা গেছে নদিয়ার চাপড়ার তৃণমূল ব্লক সভাপতিকে। মন্তব্য ঘিরে শুরু হয়েছে বিতর্ক। পাল্টা সরব হয়েছে বিরোধীরা।  


পঞ্চয়েত ভোটের আগে ক্রমেই রাজনীতির উত্তাপ বাড়ছে। জেলায় জেলায় শোনা যাচ্ছে গরমাগরম মন্তব্য। এবার ভোটের দিন বিরোধীদের ঘর থেকে বেরোতে না দেওয়ার হুমকি দিলেন নদিয়ার চাপড়ার এক তৃণমূল নেতা।  


শনিবার চাপড়ায় নতুন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সভা ছিল শাসকদলের। সভায় উপস্থিত ছিলেন চাপড়ার তৃণমূল বিধায়ক রুকবানুর রহমান, নাকাশিপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক কল্লোল খাঁ ও মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস। সেই সভা থেকেই বিরোধীদের উদ্দেশে হুমকি দেন তৃণমূলের ব্লক সভাপতি। শাসকদলের এই হুমকির মুখে পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে বিজেপি ও সিপিএম। 


নদিয়া উত্তর সাংগঠনিক জেলার বিজেপি সম্পাদক প্রকাশ অধিকারীর কথায়, ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল কী করে বলে, পঞ্চায়েত ভোটে তারা যোগদান করতে দেবে না? চাপড়া বিধানসভায় মানুষের সমর্থন সরে গেছে তৃণমূলের থেকে। তাই মানুষকে ভয় দেখিয়ে, পুলিশকে ব্যবহার করে ভোটে জেতা ছাড়া এদের দ্বিতীয় রাস্তা নেই। আগাম প্রস্তুতি আমরা নিয়েছি। এই সন্ত্রাস, এই ভোট লুঠ আমরা রুখব।


তৃণমূলের শীর্ষ স্তরের নেতারা যদিও ইদানীং প্রায়ই বলছেন, পঞ্চায়েত ভোট শান্তিতে, সুষ্ঠুভাবে করাই তাঁদের লক্ষ্য, তাহলে কি সেই বার্তা দলের নিচু তলায় পৌঁছোচ্ছে না? তৃণমূল ব্লক সভাপতির ভোট নিয়ে হুঁশিয়ারি, সেই জল্পনাই উস্কে দিল। 


উদয়নের মন্তব্য: এদিন ফের বিস্ফোরক মন্তব্য করেন উদয়ন গুহও। পঞ্চায়েত ভোটের আগে দলের সংগঠন নিয়েই প্রশ্ন তুললেন উদয়ন গুহ। দলে অনেকে আছে, যাদের জন্য আগেরবার হেরেছিলাম। সেই বিভীষণদের চিহ্নিত করতে হবে। বিভীষণরা ক্ষতি করতে চাইলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিভীষণদের চিহ্নিত করতে পারলে তৃণমূলকে কেউ হারাতে পারবে না। দিনহাটায় দলীয় কর্মিসভায় মন্তব্য উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী উদয়ন গুহর। পায়ের তলায় জমি হারিয়ে এই মন্তব্য, কটাক্ষ বিজেপির। 


বছর ঘুরলেই রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন। তার আগে কোমর বেঁধে নেমে পড়েছে, শাসক বিরোধী দু’পক্ষই। আর এই প্রেক্ষাপটে ফের একবার কোচবিহারে দলের মধ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের আশঙ্কার কথা শোনা গেল উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী ও হিনহাটার তৃণমূল বিধায়ক উদয়ন গুহর গলায়! নাম না নিয়ে ফের একবার নিশানা করলেন কোচবিহারের বিজেপি সাংসদ ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিককেও। 


রাজ্যে শেষ পঞ্চায়েত নির্বাচন হয় ২০১৮ সালে। সেইসময় কোচবিহারে যুব তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন নিশীথ প্রামাণিক। সেবার কোচবিহারে পঞ্চায়েত ভোটের মুখে বিশেষ করে দিনহাটায় মাথাচাড়া দিয়েছিল শাসকদলের অন্তরের দ্বন্দ্ব! অনেক জায়গায় টিকিট না পেয়ে, নির্দল হিসেবে ভোটে দাঁড়িয়ে পড়েন তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ নেতারা। ভোটের ফলেও তার প্রভাব দেখা যায়। 


২০১৮’য় কোচবিহারে গ্রাম পঞ্চায়েতের ১ হাজার ৯৬৬টি আসন ছিল। সেখানে ১১১টি পঞ্চায়েত আসনে জয়লাভ করে নির্দলরা। বিজেপি জয়লাভ করেছিল ১১৫টি গ্রাম পঞ্চায়েতের আসনে। ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে বিজেপির টিকিটে নিশীথ প্রামাণিক জিতে যাওয়ার পর এই নির্দলদের একটা বড় অংশই চলে যায় বিজেপিতে। কিন্তু ২১’এর বিধানসভা ভোটের পর আবার দেখা যায় উলটপূরাণ! এই পরিস্থিতিতে ফের একবার সামনে পঞ্চায়েত ভোট! কিন্তু এবার আগেভাগেই সতর্ক শাসকদল।