কলকাতা: সঙ্গীতশীল্পী কে কে-র মৃত্যুতে (Singer KK Death) শোকের ছায়া নেমে এসেছে। কিন্তু কলকাতায় তাঁর মৃত্যু নিয়ে চরমে রাজনৈতিক তরজা। কে কে-র মৃত্যুতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) ইস্তফা দেওয়া উচিত বলে আগেই দাবি করেছিলেন বাংলায় বিজেপি-র (BJP) সর্বভারতীয় সভাপতি সুকান্ত মজুমদার (Sukanta Majumdar)। এ বার তাঁকে খুন করা হয়েছে বলে আক্রমণের ধার আরও বাড়ালেন বিজেপি-র সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh)। জোর করে গান গাইয়ে তাঁকে মেরে ফেলে হয়েছে বলে দাবি করলেন তিনি।


তৃণমূলকে কাঠগড়ায় তুললেন দিলীপও


বুধবার কলকাতায় গান স্যালুট জানানোর পর মুম্বই নিয়ে যাওয়া হয়েছে কে কে-র দেহ। কিন্তু বাংলায় রাজনৈতিক উত্তাপ বেড়েই চলেছে। বৃহস্পতিবার সকালে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে গোটা ঘটনার দায় তৃণমূলের ঘাড়ে চাপান দিলীপ। তিনি বলেন, "একটা লোককে হত্যা করা হল। অমিত শাহ বলেছিলেন, বাংলায় গেলে মরতে হবে। সেই নিয়ে বিতর্ক হয়েছিল। কিন্তু আজ বাংলায় এসে বেঘোরে মারা গেল লোকটা। এটা কোনও কলেজের অনুষ্ঠান নাকি, তৃণমূল দলের অনুষ্ঠান ছিল। তারাই লোক জুটিয়েছে। দলের নেতারা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন। জোর করে গান গাইয়েছেন। উনি পারছিলেন না। অসুস্থ হয়ে পড়ছিলেন। ঘাম দিচ্ছিল। চলে যেতে চাইছিলেন। কিন্তু যেতে দেওয়া হয়নি। একপ্রকার চক্রান্ত করে তাঁকে মেরে ফেলা হয়েছে। হত্যা করা হয়েছে ওঁকে।"



দিলীপের এই মন্তব্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh)। তিনি বলেন, "দিলীপ ঘোষের এই মন্তব্যে আমি তো বিস্ফোরক কিছু পাচ্ছি না। তাহলে তো পাগলা গারদে যে কোনও পাগলের সঙ্গে কথা বললে, তার কথাকেও বিস্ফোরক বলতে হয়! একটি চরম দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যু। তা নিয়ে রাজনীতি হচ্ছে। ওঁর ম্যানেজারই বলেছেন যে, কে কে শারীরিক অসুস্থতার কথা বলেননি। হয়ত অসুস্থ ছিলেন, কিন্তু ডাক্তারের কাছে যাওয়ার কথআ জানাননি আয়োজকদের। পুরোদস্তুর পেশাদার শিল্পী হিসেবে অনুষ্ঠান করে গিয়েছেন।" 


আরও পড়ুন: Kunal Sarkar on KK Death : 'হাতের কাছে হাসপাতাল থাকতেও ২ ঘণ্টা নষ্ট' কে কে-র মৃত্যুতে প্রশ্ন তুললেন চিকিৎসক কুণাল সরকার


দিলীপের জোর করে গান গাওয়ানোর অভিযোগও খারিজ করে দেন কুণাল। বলেন, "কোথাও মঞ্চ ছেড়ে চলে যেতে চেয়েছেন, গান থামাতে চেয়েছেন, জোর করে গান গাওয়ানো হয়েছে কি না, দিলীপবাবুর থেকে কাছ থেকে দেখেছেন কে কে-র ম্যানেজার। সমস্যাটা অন্য জায়গায়। কুৎসিৎ রাজনীতি সুকান্তবাবুদের সংস্কৃতির মধ্যে পড়ে। আর দিলীপবাবু অস্তিত্ব সঙ্কটে ভুগছেন।"


দিলীপকে পাল্টা আক্রমণ কুণালের


প্রকাশ্যে আলটপকা মন্তব্য করা থেকে সম্প্রতি দিলীপের উপর প্রতিবন্ধকতা জারি করেছে বিজেপি। সেই প্রসঙ্গেই দিলীপকে বেঁধেন কুণাল। বলেন, "ওঁকে কথা বলতে বারণ করেছে। ফলে আপনাদের কাছে উনি তৃণমূলের বিরুদ্ধে কথা বলছেন, আমি যা দেখছি তা হল, কহিঁ পে নিগাহেঁ, কহিঁ পে নিশানা। কথা বলতে হবে, দল যা বলছে, তার চেয়ে আরও বেশই খারাপ কথা বলতে হবে তৃণমূলকে, যাতে সেন্সরশিপ দুর্বল করা যায়। বেঁচে থাকতে হবে, কথা বলতে হবে, ক্যামেরার সামনে থাকতে হবে, যাতে দল ঠান্ডা হয়। এটাকে সিরিয়াসলি নেওয়ার কিছু নেই। এমনিতেই মস্তিষ্কের গন্ডগোল রয়েছে ওঁর। তার উপর সেন্সরশিপ নিয়ে পাগলামি করছেন বেশি। এই ক'টা দিন ছেড়ে দিন ওঁকে। উনি মানসিক চাপের মধ্যে রয়েছেন।"


চোখের জলে আজ গোটা দেশ শেষ বিদায় জানাবে গানের শিল্পী কে কে-কে। মুম্বইয়ে ভারসোভা শ্মশানে কে কে-র শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে। শেষ শ্রদ্ধা জানাতে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত অন্ধেরী ওয়েস্টে পার্ক প্লাজার বাসভবনে শায়িত থাকবে মরদেহ। এরপর দুপুর ১টা থেকে শুরু হবে শেষযাত্রা।