কলকাতা: বুধ ও বৃহস্পতিবার হাওড়া ও হুগলির বন্যাদুর্গত এলাকাগুলিতে গিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার ও ডিভিসি কর্তৃপক্ষকে এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। ডিভিসি না জানিয়ে সাড়ে তিন লক্ষ কিউসেক জল ছাড়ার ফলে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি। বৃহস্পতিবার তার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে তৃণমূলের নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকারই এই বন্যা পরিস্থিতির (flood situation) জন্য দায়ী বলে দাবি করলেন পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী (BJP leader Suvendu Adhikari)।


এপ্রসঙ্গে নিজের এক্স হ্যান্ডেল থেকে একটি টুইট করে তিনি দাবি করেন, "পশ্চিমবঙ্গের গঙ্গাতীরবর্তী এলাকা ও ঝাড়খণ্ডে নিন্মচাপের ফলে ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রবল বর্ষণ হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের অন্তর্গত নিন্ম দামোদর উপত্যকায়। পাশাপাশি ঝাড়খণ্ডে প্রবল বর্ষণ হয়েছে ১৫ ও ১৬ সেপ্টেম্বর। এর ফলে পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে বাঁধের নিরাপত্তার জন্য ডিভিসি ও পশ্চিমবঙ্গ সরকার আলোচনা করে মাইথন ও পাঞ্চেত বাঁধ থেকে জল ছাড়া হয়েছে। আর এই জল ছাড়ার ঘটনা ঘটেছে সমস্ত প্রোটোকল মেনে ও সংশ্লিষ্ট সমস্ত কর্তৃপক্ষকে জানিয়েই। কিন্তু, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বর্ষার আগে বন্যা পরিস্থিতি আটকানোর জন্য রাজ্য সরকারের তরফ থেকে কোনও রকম প্রস্তুতি নেননি বলেই রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। নিজের সরকারের ব্যর্থতা ধামাচাপা দেওয়ার জন্যই মিথ্যা অভিযোগ এনেছেন তিনি। বর্ষার আগে রাজ্য সরকারের তরফে কোনও প্রস্তুতিই নেওয়া হয়নি। আর এই সংক্রান্ত ফান্ডের টাকা হয় ওনার সরকার অনৈতিকভাবে অন্য খাতে ব্য়বহার করেছেন নয়তো ওই ফান্ডের টাকা তাঁর দলের সহকর্মীরা লুটে পুটে খেয়েছে তাই এখন তিনি ডিভিসির নামে দোষ চাপিয়ে নিজের দায়দায়িত্ব অস্বীকার করছেন।"


 



টুইটে মুখ্যমন্ত্রীর বন্যাদুর্গত এলাকা পরিদর্শনকে 'ফটো সেশন' বলেও কটাক্ষ করেছেন শুভেন্দু অধিকারী। নিজের এক্স হ্যান্ডেল থেকে অভিযোগ জানিয়েছেন, "বন্যা কবলিত এলাকায় মুখ্যমন্ত্রী যাওয়ায় আরও সমস্যা হচ্ছে মানুষের। একইসঙ্গে প্রশাসনও ত্রাণের কাজের পরিবর্তে ব্যস্ত থাকছে মুখ্যমন্ত্রীর তদারকিতে। নিজের সরকারের দায় অন্যের ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করছেন মুখ্যমন্ত্রী। আজও পাঁশকুড়ায় মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তায় ১ হাজার পুলিশ কর্মী মোতায়েন ছিলেন। এই পুলিশ কর্মীরা ত্রাণের কাজে লাগতে পারতেন। মানুষের ক্ষোভের ভয়েই কি এত পুলিশ মোতায়েন করতে হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তায়? তবে এইসব এলাকার মানুষ মুখ্যমন্ত্রীর ভুয়ো প্রতিশ্রুতি ও অক্ষমতা শুনতে শুনতে ক্লান্ত।"


বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সাংবাদিক বৈঠক থেকে শুভেন্দু আরও অভিযোগ করেন, "বর্ষার আগে বন্যা পরিস্থিতি আটকানোর জন্য যে কাজ করার কথা তা গত তিন বছরে হয়নি। এই সংক্রান্ত পরিকাঠামো তৈরি ও তা রক্ষণাবেক্ষণের কাজ সরকার করেনি গত ৩-৪ বছর। এই রাজ্য সরকার মূলত দুটো কাজে ব্যস্ত রয়েছে। প্রথমটি হল ৩০ শতাংশ ভোট ব্যাঙ্ক তুষ্ট করা ও পোল ডিস্ট্রিবিউশন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার এই রাজ্য সেচকে পুরোপুরি শেষ করে দিয়েছে। যার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কমপক্ষে ১৫-২০ লক্ষ মানুষ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে ব্যর্থ হয়েছে। তাঁর সরকারের ব্যর্থতার ফলে একের পর এক বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে। কারণ বর্ষার আগে বন্যা পরিস্থিতির মোকাবিলা করার জন্য কোনও ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি।"


এ প্রসঙ্গে ডিভিসি জানিয়েছে, ১৪  সেপ্টেম্বর থেকে যে জল ছাড়া হবে মাইথন এবং পাঞ্চেত বাঁধ থেকেসেই সিদ্ধান্ত পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সঙ্গে পরামর্শ করেই নেওয়া হয়েছিল। নির্ধারিত পরিমাণে জল-ছাড়া সংক্রান্ত বিষয়টি সমস্ত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে পূর্বে জানানো হয়। 





আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।


আরও পড়ুন: Bankura News: দ্বারকেশ্বর নদে ভয়ঙ্কর ভাঙন, আতঙ্কে ঘুম ছুটেছে তীরবর্তী বাসিন্দাদের