সোনামুখী: বিজেপি-র (BJP) নবান্ন অভিযান (Nabanna Abhijan) ঘিরে সকাল থেকে উত্তেজনা। নবান্ন যাওয়ার পথে দফায় দফায় বাধার মুখে পড়লেন সোনামুখীর বিজেপি বিধায়ক দিবাকর ঘরামি (Dibakar Gharami)। প্রথমে সোনামুখী স্টেশনের বাইরে আটকানো হয় তাঁকে। সেখানে মোট ২৫ জন বিজেপি কর্মীকে আটক করে পুলিশ।  প্রতিবাদে সোনামুখী থানায় গিয়ে বিক্ষোভ দেখান বিধায়ক এবং বিজেপি কর্মীরা। এর পর পাত্রসায়রের রসুলপুর বাজারে ফের আটকানো হয় বিধায়কের গাড়ি।


বিজেপি-র নবান্ন অভিযান ঘিরে সকাল থেকে উত্তেজনা


বিধায়কের অভিযোগ, তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরাই তাঁকে বাধা দেয়। সোনামুখীর বিজেপি বিধায়ক দিবাকর ঘরামীকে নবান্ন অভিযানে যাওয়ার পথে বাঁকুড়ার পাত্রসায়ের আবারও বাধার মুখে পড়তে হয়। পাত্রসায়ের থানার সামনে বসে পড়েন দিবাকর। বেশ কিছুক্ষণ বিক্ষোভ দেখিয়ে আবারও তিনি নবান্নের পথে রওনা দেন।


একের পর এক দুুর্নীতির অভিযোগে যখন বিদ্ধ শাসকদলের একাধিক নেতা, সেই সময় 'চোর ধরো, জেল ভরো' রব তুলে নবান্ন অভিযানে নেমেছে বিজেপি। মঙ্গলবার তিন দিক থেকে নবান্ন ঘেরার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। তার জন্য গত কয়েক দিন ধরেই প্রস্তুতি মিছিল চলছিল জেলায় জেলায়। মঙ্গলবার সকাল থেকেই কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে মিছিল করে এগোতে থাকেন বিজেপি নেতারা। 


তবে পদে পদে তাঁরা বাধার মুখে পড়েন বলে অভিযোগ বিজেপি নেতা-কর্মী এবং সমর্থকদের। হলদিয়ার এসডিপিও রাহুল পাণ্ডের নেতৃত্বে ১১৬ বি জাতীয় সড়কে চণ্ডীপুরের মগরাজপুরে চলছে পুলিশের চেকিং। গাড়ি, বাস থামিয়ে পরীক্ষা করা হচ্ছে। রুটিন তল্লাশি বলে যদিও দাবি পুলিশের।


অন্য দিকে, নবান্ন অভিযানে যাওয়ার সময় দুর্গাপুর স্টেশনেও বাধা পড়েন গেরুয়া শিবিরের কর্মী-সমর্থকেরা। বিক্ষোভের মুখে পড়ে বিজেপি কর্মীদের সামনে হাতজোড় করে শৃঙ্খলা বজায় রাখার অনুরোধ জানাতে দেখা যায় দুর্গাপুর জিআরপি-র আইসি তাপস বিশ্বাসকে। 


আরও পড়ুন: BJP Nabanna Abhijan Live : ডানকুনিতে কলকাতা ও হাওড়ামুখী রাস্তায় তীব্র যানজট

ঝাড়গ্রামেও গিধনি স্টেশনে বিজেপি কর্মীদের জমায়েত আটকাতে তৎপর পুলিশ। স্টেশনে ঢোকার সমস্ত রাস্তায় ব্যারিকেড করে রাখা হয়েছে বলে বিজেপি-র অভিযোগ। গেরুয়া শিবিরের দাবি, একসঙ্গে অনেকে জড়ো হয়েছে দেখলেই পুলিশ আটক করে ফেরত পাঠাচ্ছে। বিভিন্ন জায়গায় বাস, গাড়িও আটকানো হচ্ছে বলে অভিযোগ।  


তার মধ্যেও 'পুলিশ তুমি যতই ধরো, ট্রেনে করে নবান্ন যাব' স্লোগান মুখে নিয়ে কাটোয়া থেকে লোকাল ট্রেনে চড়ে হাওড়া রওনা দেন বিজেপি কর্মী, সর্মথকরা। বিজেপির দাবি, তৃণমূলের বাধা এড়াতে কৌশলী ভূমিকা নেন তাঁরা। গ্রাম থেকে স্বাভাবিক ভাবে স্টেশনে এসে পতাকা হাতে নিয়ে স্লোগান দিতে শুরু করেন বিজেপি কর্মীরা। 


দুর্গাপুর স্টেশন চত্বর ঘিরে রেখেছে দুর্গাপুর-আসানসোল কমিশনারেটের বিশাল পুলিশ বাহিনী, সঙ্গে কমব্যাট ফোর্স। এই কড়া নজরদারি এড়িয়েই ঘুরপথে স্টেশনে এসে কোলফিল্ড এক্সপ্রেসে কলকাতা রওনা দেন শতাধিক বিজেপি কর্মী, সমর্থক। 

রানিগঞ্জ স্টেশনে বিজেপি কর্মীদের ঢুকতে বাধা পুলিশের। বিজেপি কর্মীদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি। কয়েকজন জোর করে স্টেশনে ঢুকে পড়লে ৫ জন বিজেপি কর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। কুলটির বরাকর স্টেশনেও বিজেপি কর্মীদের দেখে লাঠি উঁচিয়ে তেড়ে যেতে দেখা যায় পুলিশ কর্মীদের। একজনকে গ্রেফতার করা হয়। 

ঘুরপথে পানাগড় স্টেশনে এসে অগ্নিবীণা এক্সপ্রেসে চড়ে কলকাতার উদ্দেশে রওনা দিলেন কাঁকসার বিজেপির কর্মীরা। চারদিকে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পানাগড় স্টেশনে ঢোকার মুখেও পুলিশ। তাই পুলিশি বাধা এড়াতেই ঘুরপথে স্টেশনে আসা, জানিয়েছেন বিজেপির কাঁকসা ২ নম্বরের মণ্ডল সভাপতি ইন্দ্রজিৎ ঢালি। 


বিজেপি-র এই অভিযান ঘিরে চূড়ান্ত তৎপরতা হাওড়াতেও। নবান্ন থেকে ছয় কিলোমিটার দূরত্বে, হাওড়ার বেলেপোলেই আটকে দেওয়া হচ্ছে কলকাতামুখী সব গাড়ি। শুধুমাত্র পুলিশের গাড়ি এবং অ্যাম্বুল্যান্সে ছাড়। 


সাঁতরাগাছিতে আবার বিজেপি-র নবান্ন অভিযান ঘিরে চূড়ান্ত হয়রানির শিকার নিত্যযাত্রীরা। মিলছে না বাস বা গাড়ি। হাওড়া থেকে বর্ধমান যাওয়ার গাড়ির ভাড়া ১৫০০ টাকা। সুযোগ বুঝে ৪ হাজার টাকা ভাড়া হাঁকছেন চালকরা। অভিযোগ যাত্রীদের। বাধ্য হয়ে অনেককেই ফিরে যেতে হচ্ছে। হাওড়া ময়দানের কাছে ফোরশোর রোডে নবান্নমুখী চলন্ত বাস থামিয়ে চলছে পুলিশের চেকিং। পরীক্ষা করা হচ্ছে দূরপাল্লার বাসও। 

শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে মিছিল আসবে সাঁতরাগাছি থেকে। তার আগে সকালেই গার্ড রেল দিয়ে ঘিরে দেওয়া হল কোনা এক্সপ্রেসওয়ের একাংশ। গার্ড রেল ঝালাই করে রাস্তায় গর্ত খুঁড়ে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। মজুত রয়েছে ২টি জল কামান। মোতায়েন করা হয়েছে প্রচুর পুলিশ। হাওড়া ময়দান থেকে সুকান্ত মজুমদারের নেতৃত্বে মিছিল আসার কথা। সেখানে জিটি রোডের ওপর তৈরি করা হয়েছে পুলিশি ব্যারিকেড।


জায়গায় জায়গায় বিজেপি কর্মীদের বাধা দেওয়ার অভিযোগ

নবান্ন অভিযানে যাওয়ার আগে বোলপুর স্টেশনে বিজেপি কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের বচসা। স্টেশন চত্বর থেকে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করায় বোলপুর স্টেশনের সামনে বিক্ষোভ দেখান বিজেপি কর্মীরা। কলকাতায় যাওয়ার পথে রামপুরহাট স্টেশনে আটক ১০ জন বিজেপি কর্মী। বিজেপির বীরভূম সাংগঠনিক জেলার সভাপতি ধ্রুব সাহার নেতৃত্বে আরেকটি দল ট্রেনে চড়ে রওনা দেয়। তৃণমূলের সবাই চোর স্লোগান তুলে, ব্যানার নিয়ে সিউড়ি স্টেশনে আসেন বিজেপি কর্মী, সমর্থকরা। রওনা দেন কলকাতার উদ্দেশে।