পার্থপ্রতিম ঘোষ, বীরভূম: রামপুরহাটে বাড়িতে আগুন লাগিয়ে হত্যাকাণ্ডের (Rampurhat Fire) তদন্ত চালাচ্ছে সিবিআই। কিন্তু, এই আগুন লাগানো হয়েছিল কার নির্দেশে? তা নিয়ে বিস্ফোরক দাবি করেছেন অগ্নিকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শী এবং স্বজনহারা মিহিলাল শে (Mihilal Sheikh)। তাঁর দাবি, এর পিছনে রয়েছেন ভাদু শেখের ((Bhadu Sheikh) ছায়াসঙ্গী লালন শেখ। এফআইআর দায়েরের দিন গ্রামে থাকলেও, তারপর থেকে এলাকাছাড়া লালন।
আদালতের নির্দেশে বগটুইকাণ্ডের তদন্তে সিবিআই
ভাদু শেখ খুন ও তারপর বগটুই গ্রামে, ৯ জনকে পুড়িয়ে হত্যার তদন্তে নেমেছে সিবিআই (CBI)। তদন্তকারীরা জানার চেষ্টা চালাচ্ছেন যে, পর পর বাড়িগুলিতে আগুন লাগিয়েছিল কে বা কারা? গোটা অপারেশনের মূল পাণ্ডা কে ছিল?
এই প্রসঙ্গে বিস্ফোরক দাবি করেছেন, অগ্নিকাণ্ডে প্রায় গোটা পরিবার হারানো, মিহিলাল শেখ। তাঁর দাবি, গোটাটাই হয়েছিল, ভাদু শেখের ডান হাত লালন শেখের নির্দেশে। মিহিলালের বক্তব্য, "ঘটনার দিন কয়েকটা মিটার দূরে সবটা দেখি। লালনই হচ্ছে মূল পাণ্ডা। ঘটনার দিন পরিষ্কার দেখলাম, লালন বলছে, সব জ্বালিয়ে দাও। কেউ আসবে না, পুলিশ আসবে না। আমার বাড়ির সামনে দেখেছি।একশোবার দেখেছি লালনকে।"
আরও পড়ুন: Tapan Kandu Murder Case: ফোন বাজেয়াপ্ত সিবিআইয়ের, তলব এসডিপিও-কে
লালন শেখের শ্বশুর সমীর শেখও চাঞ্চল্যকর দাবি করেছেন। তাঁর কথায়, "জামাই রাত ২টোর পর এল খুব নার্ভাস হয়ে। বলল, 'এ করল কী? কী হবে'? ওর মধ্যে ভয় ঢুকে গেছিল।" প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, অগ্নিসংযোগের আগে ভাদুকে লক্ষ্য করে বোমা উড়ে আসার সময়ও তৃণমূল নেতার সঙ্গেই ছিলেন লালন শেখ।
রামপুরহাট হত্যাকাণ্ডের পর থেকে এই লালন শেখ এলাকাছাড়া। বগটুইকাণ্ডের পরদিন অর্থাৎ ২২ মার্চ পুলিশ এই ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিত এফআইআর দায়ের করে। যেখানে ১২ নম্বরে নাম রয়েছে লালন শেখের। লালনের পরিবার স্বীকার করে নিয়েছে যে, সেদিনও লালন শেখ গ্রামেই ছিলেন। সমীর বলেন, "শেষ দেখা হয়, ভাদু মার্ডারের পরের দিন। কোথায় জানি না।"
লালনের ভূমিকা নিয়ে জল্পনা
তাহলে এখনও পর্যন্ত লালনকে গ্রেফতার করা হল না কেন? স্থানীয় সূত্রে খবর, ভাদুর ছায়াসঙ্গী লালন শেখ এলাকায় অত্যন্ত প্রভাবশালী ছিলেন। লালন তৃণমূলের কোনও পদে ছিলেন না। তবে তৃণমূলের উপপ্রধান ভাদু পর্যন্ত লালনকে বস বলে ডাকতেন। টাকা পয়সার লেনদেনের বিষয়টা লালনই দেখতেন। লালনের শ্বশুরের দাবি, পুলিশকেও নিয়ন্ত্রণ করতেন ভাদু এবং তাঁর ঘনিষ্ঠরাই।
সমীর বলেন, "পুলিশের সঙ্গে ভাদুর ভাল সম্পর্ক ছিল। পুলিশের ঝামেলা ভাদু দেখে নিত। গ্রামে পুলিশকে আসতে দিত না। ঝামেলা হলে পুলিশ কম আসত। পলাশ, সোনা, লালন এরাই সব মিটিয়ে দিত।"
ভাদুর মতো লালনের বাড়িও সিসিটিভি নজরদারিতে মোড়া। আর তাঁর উল্টো দিকে, সোনা শেখের বাড়ি, যে বাড়ি থেকে সবথেকে বেশি, সাতটি পোড়া মৃতদেহ উদ্ধার হয়। তদন্তে সূত্রের খোঁজে, লালনের বাড়ির সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করতে, তালা ভেঙে ঢুকেছিল সিবিআই। যদিও, সেই সিসিটিভি ফুটেজের হার্ড ডিস্ক লালন শেখ আগেই সরিয়ে ফেলেন দেন বলে অভিযোগ।