কলকাতা: বউবাজারে ফাটল-বিপর্যয়ের (Bowbazar House Cracks) ঘটনায় মেট্রোর (East West MEtro) জেনারেল ম্যানেজারের সঙ্গে দেখা করলেন বিজেপির তিন কাউন্সিলর। ফাটল-বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। শনিবার মেট্রো ভবনে গিয়ে জেনারেল ম্যানেজারের সঙ্গে দেখা করেন বিজেপির (BJP) তিন কাউন্সিলর সজল ঘোষ, মীনাদেবী পুরোহিত এবং বিজয় ওঝা। বউবাজারে দুর্গা পিটুরি লেনের বহু বাসিন্দা বাড়িতে ফাটল ধরার পর অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন।


বার বার কেন বিপত্তি, উঠছে প্রশ্ন


ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর নির্মাণে বারবার এক জায়গাতেই কীভাবে বিপত্তি ঘটছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। কারণ ২০১৯-এর অগাস্টে যে বাড়িগুলিতে ফাটল ধরেছিল, এ বারও সেই বাড়িগুলিতেও ফাটল ধরেছে বলে অভিযোগ। আড়াই বছর আগে মেট্রো সেই বাড়িগুলির সংস্কারের দায়িত্ব নিয়েছিল। তার পরেও কেন ফাটল ধরল, আরও কী কী বিপদ অপেক্ষা করছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। যদিও বিজেপি-র দাবি, ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর রুট পরিবর্তনের জেরেই এই বিপত্তি।


সেই নিয়ে এক দিন আগেই রাজ্য সরকারকে একহাত নেন রাজ্য বিজেপি-র মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, "কাদের বাঁচাতে সরকার রুট বদলেছিল? তুষ্টিকরণের রাজনীতি সর্বত্র। তুষ্টিকরণের রাজনীতি তৃণমূলের রাজনীতি। বিভাজনের রাজনীতি তৃণমূলের রাজনীতি। দুধেল গাইদের বাঁচানোর রাজনীতি তৃণমূলের রাজনীতি।"


তাতেই একাধিক প্রশ্ন আসছে। স্থানীয়রা জানতে চাইছেন, সত্যিই কি রুট পাল্টানোতেই বারবার বিপর্যয় ঘটছে? ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রের রুট পাল্টানোর পরামর্শ কারা দিয়েছিল? কারা সেই পরামর্শ গ্রহণ করে রুট পাল্টেছিল? কেন রুট পাল্টানো হয়েছিল?


আরও পড়ুন: Burrabazar: বড়বাজারে নেতাজি সুভাষ রোডে ধস, ফাটল জলের পাইপও।Bangla News


প্রাথমিকভাবে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর জন্য যে রুট নির্ধারিত হয়, সেখানে বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিটের নীচ দিয়ে সরাসরি শিয়ালদহ এবং লালদিঘিকে সংযুক্ত করা হবে বলবে ঠিক ছিল। ২০০৮-এর ২৭ অক্টোবর  সল্টলেক সেক্টর ফাইভ থেকে শিয়ালদহ, বউবাজার, লালদিঘি হয়ে হাওড়া ময়দান পর্যন্ত প্রস্তাবিত সেই রুট অনুমোদন পায়। 


কিন্তু সেন্ট্রালের কাছে নতুন স্টেশন করা নিয়ে জমি জট তৈরি হয়। ২০১২ সাল থেকে কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে এই নিয়ে চিঠি বিনিময় চলে। এরই মধ্যে সেক্টর ফাইভ থেকে শিয়ালদা অবধি হয়ে মেট্রোর কাজ থমকে যায়। ২০১৪ সালের পরে মেট্রোর রুট পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। লালদিঘি থেকে এসপ্ল্যানেডে নিয়ে যাওয়া হয় মেট্রোর সুড়ঙ্গ। সেখান থেকে সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার হয়ে বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিট।


KMRCL সূত্রে খবর, এই রুট বদলের জন্য, ১ হাজার ৮৭৮ মিটার অতিরিক্ত যাত্রাপথ তৈরি করতে হচ্ছে।  আগের রুটে এই প্রজেক্টে খরচ হত ৪ হাজার ৮৭৪ কোটি টাকা।  আর এখন হবে ৮ হাজার ৯৯৬ কোটি টাকা।  অর্থাত্‍, রুট বদলের ফলে অতিরিক্ত ৪ হাজার ১২২ কোটি টাকা খরচ হচ্ছে। 


রুট বদল নিয়েও চলছে চাপানউতোর


ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো তৈরিতে মেট্রো রেলকে সাহায্য করছে জাপানি সংস্থা JICA বা জাপান ইন্টারন্যাশনাল কর্পোরেশন এজেন্সি। এই প্রকল্পে তারা ২ হাজার ২৫৩ কোটি টাকা খরচ করবে বলে শুরুতে ছিক হয়েছিল। রুট বদলের পর এই সংস্থা খরচ করছে ৪ হাজার ১৩৮ কোটি টাকা। 


মেট্রো রেল সূত্রে খবর, প্রথমে, KMRCL ও জাইকা, উভয়ই পরিবর্তিত রুটে সম্মতি দেয়নি। পরবর্তী সময়ে নতুন রুটে মেট্রো চালানোর জন্য পৃথক সার্ভে করে জাইকা। এরপরই রুটবদলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। কিন্তু, বারবার বিপর্যয়ের পর তৈরি হওয়া বিতর্কে রুদ বদল নিয়েই এখন প্রশ্ন উঠছে।