ঝিলম করঞ্জাই, কলকাতা : সাম্প্রতিক কালে বারবার সামনে আসছে একের পর এক গণপিটুনির ঘটনা। কিছুদিন আগেই ছেলেধরা আতঙ্কে উত্তর ২৪ পরগনার একাধিক জায়গায় গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে। আর এবার খাস কলকাতায়। চোর সন্দেহে এক যুবককে প্রকাশ্য রাস্তা থেকে তুলে এনে হস্টেল বন্ধ করে চলল নৃশংস মারধর। আর তারপর তাঁকে যখন শেষপর্যন্ত উদ্ধার করল পুলিশ, তখন প্রাণটা প্রায় নিভু নিভু।  কালশিটে পরা, ভাঙা পায়ের শরীরটা বয়ে নিয়ে এগনোর ক্ষমতাও ছিল না ইরশাদের। তারপর মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে গেলে তাঁর মৃত্যু হয়। 


কলকাতার বুকে এমন ঘটনায় সামনে আসছে একের পর এক গা-শিউরে ওঠা তথ্য। ১০ বছর ধরে চাঁদনি চকে টেলিভিশন সারাইয়ের দোকানে কাজ করতেন ইরশাদ আলম। মোবাইল চোর সন্দেহে তাঁকে পিটিয়ে মারা হয়েছে এই অভিযোগ শুনে স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছেন ওই TV মেকানিকের সহকর্মী মুকেশ পাসোয়ান। তাঁর দাবি, ঘটনার দিন সকাল ৮টা ৫৫ মিনিটে তাঁর কাছে ফোন আসে। তিনি জানতে পারেন, ইরশাদকে হস্টেলে আটকে রেখে টাকা চাওয়া হচ্ছে, মালিকের সঙ্গে কথা বলতে চাওয়া হয়। এরপর দোকান মালিক ইমরান মুকেশকে ফোন করে জানান, কোথায় যেতে হবে। মুকেশের দাবি, এরপর তিনি বউবাজারে ওই হস্টেলে যান। গিয়ে দেখেন হস্টেলের দরজায় তালা। বউবাজার থানার পুলিশ পৌঁছলে বলা হয়, মুচিপাড়া থানার পুলিশ এলে দরজা খোলা হবে। মুকেশের দাবি, তাঁর সহকর্মী ইরশাদকে হস্টেল থেকে বার করার সময় তিনি দাঁড়াতে পারছিলেন না। এরপর পুলিশই ইরশাদকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়।  


পুলিশের দাবি, বউবাজারে বিখ্যাত মিষ্টির দোকানের সামনে থেকে একরকম জোর করেই TV মেকানিক ইরশাদ আলমকে টেনে-হিঁচড়ে হস্টেলের ভিতরে ঢোকান আবাসিকরা। এরপর পৌনে ২ ঘণ্টা ধরে তাঁর ওপর অকথ্য অত্যাচার চলে বলে প্রাথমিক তদন্তে অনুমান পুলিশের। আরও ভয়ংকর তথ্য এসেছে সামনে। পুলিশের দাবি, তথ্যপ্রমাণ গোপন করতে এরপর কনফেকশনারির দোকানে গিয়ে CC ক্যামেরার ফুটেজ পরীক্ষার নামে কিছুটা অংশ ডিলিট করে দেওয়া হয়। ধৃত ১৪ জনের বিরুদ্ধে খুন, অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র ও অপহরণের অভিযোগে মামলা রুজু করেছে মুচিপাড়া থানার পুলিশ।           


আরও পড়ুন : 


ভাঙা পা, শরীরজুড়ে জমাট রক্ত ! চোর সন্দেহে ছাত্রাবাসে যুবককে 'পিটিয়ে খুন' বউবাজারে