কমলকৃষ্ণ দে, বর্ধমান :  সাধারণত সামান্য কয়েক মিনিটের ফারাকে পৃথিবীর আলো দেখে যমজ সন্তানরা। কিন্তু কোনও কারণে যদি একজনকে আগে প্রসব করাতে হয় ও আরেকজনকে তখনও মায়ের গর্ভে রাখতে হয়, তাহলে তা ডাক্তারদের কাছে চ্যালেঞ্জিং হয়ে যায়। বর্ধমানে এমনই এক ঘটনা ঘটল। প্রথম বাচ্চাটিকে বিশেষ মেডিক্যাল কন্ডিশনে ১৭ সপ্তাহেই মায়ের গর্ভ থেকে বের করে আনতে হয়। সময়ের আগেই জন্ম হয় তাঁর। আর আরেক সন্তানকে রাখা হয় মাতৃগর্ভেই। এ পরিস্থিতি খুবই চ্যালেঞ্জিং।  প্রসব হয়ে যাওয়ার পরও প্রসূতিকে সরকারী পরিকাঠামোয় বিশেষভাবে পর্যবেক্ষণে রাখা হয় ও ১২৫ দিন পর জন্ম হয় দ্বিতীয় বাচ্চার। চিকিৎসা শাস্ত্রের ভাষায় একে বলে "delayed delivery of second twin's baby"। এক্ষেত্রে নজির গড়ল  বর্ধমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল। চিকিৎসকদের বিরল সাফল্যকে কুর্ণিশ জানিয়ে শিশুর নামকরণও করা হয়েছে "সাফল্য"।


জামালপুরের কুলিনগ্রামের বাসিন্দা পম্পা প্রামাণিক।  তার প্রথম আইভিএফ ফেল হওয়ার পর দ্বিতীয় আইভিএফ করান এবং সেটা সফল হয়। যমজ বাচ্চা হওয়ার কথা ছিল তাঁর । হঠাৎ ১৭ সপ্তাহ নাগাদ অসুস্থ হয়ে পড়েন পম্পা । গত ১১ ই জুলাই তাঁকে বর্ধমান হাসপাতালের প্রসূতিবিভাগে ভর্তি করা হয়। ১২ ই জুলাই সময়ের আগেই অবস্থায় তার একটি বাচ্চার জন্ম হয়। কিন্তু দ্বিতীয় সন্তানকে তখনও গর্ভেই রাখতে হয়। 


প্রসূতির বয়স প্রায় ৪১ বছর । তার উপর দ্বিতীয় আইভিএফ। এই রকম পরিস্থিতিতে দ্বিতীয় সন্তানকে সুস্থ অবস্থায় মায়ের কোলে তুলে দেওয়াই ছিল চ্যালেঞ্জ, জানালেন বর্ধমান মেডিকেলের সুপার তাপস ঘোষ। 


ডাক্তারদের কাছে এই সময়টা চ্যালেঞ্জিং কেন ? প্রথমত, এই ধরনের পরিস্থিতিতে মা এর শরীরে ইনফেকশনের ১০০% সম্ভবনা থাকে। দ্বিতীয়ত, প্রথম  সন্তান হওয়ার পর দ্বিতীয়ও সন্তানও খুব তাড়াতাড়ি হয়ে যাওয়ার প্রবণতা খুব বেশি থাকে।তৃতীয়ত, প্লাসেন্টা বা গর্ভফুলে লিকুইড কমে গেলে বাচ্চার বৃদ্ধি ব্যহত হতে পারে এবং অনেক ক্ষেত্রে মাতৃজঠরে umbilical cord এ  বাচ্চা জড়িয়ে গিয়েও বিপদ হতে পারে।


এই চ্যালেঞ্জকে মাথায় রেখেই বর্ধমান হাসপাতালের স্ত্রী ও প্রসূতি চিকিৎসক মলয় সরকারের নেতৃত্বে ডাক্তার এস.পি সরকার, ডাক্তার কৃষ্ণপদ দাস, ডাক্তার মুকুট ব্যানার্জী, ডাক্তার সুমন্ত ঘোষ মৌলিক ও ডাক্তার অর্পিতা প্রামাণিক-দের নিয়ে ১০ সদস্যের মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়।


প্রথম ভূমিষ্ট হয়ে যাওয়া বাচ্চার প্লাসেন্টার কর্ডটিকে ব্লক করে পুনরায় সমগ্র প্ল্যাসেন্টাকে জরায়ুতে স্থাপন করা হয় এবং প্রসূতিকে একটি বিশেষ ওয়ার্ডে সরিয়ে রেখে শুরু হয় কঠোর পর্যবেক্ষন ও চিকিৎসা। এইভাবে প্রায় ১২৫ দিন প্রসূতিকে রাখার পর গত ১৪ই নভেম্বর,  শিশু দিবসের দিন ৩৬ সপ্তাহের মাথায় সিজারের মাধ্যমে দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম হয়। দ্বিতীয় বাচ্চাটির ওজন হয়েছে প্রায় ২ কেজি ৯০০ গ্রাম এবং বর্তমানে সে সুস্থ। এই ধরনের ঘটনা রাজ্যে ,দেশ তো বটেই বিশ্বের মধ্যে বিরল।


বর্ধমান হাসপাতালের চিকিৎসকদের এই অভাবনীয় সাফল্যকে কুর্ণিশ জানিয়েছেন প্রসূতির স্বামী পেশায় মুদি ব্যবসায়ী অনুপ প্রামানিক এবং এই বিরল কৃতিত্বকে সম্মান জানাতে ডাক্তারদের কথামত ছেলের নামকরণ করেন "সাফল্য"।