কলকাতা: পেঁয়াজের সঙ্গে তুলনা টানা হলেও, নিয়োগ দুর্নীতিতে খোসা ছাড়িয়ে যাওয়াই সার। নিত্যনতুন তথ্য হাতে এলেও, জট বেড়েই চলেছে। সেই আবহে প্রাথমিক নিয়োগে দুর্নীতি নিয়ে তীব্র কটাক্ষ ছুড়ে দিলেন কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court) বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় (Justice Abhijit Ganguly)। একই সঙ্গে যৌথ ভাবে তদন্তভার তুলে দিলেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা  (CBI) এবং এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের কাঁধে (ED)। 


প্রাথমিক নিয়োগে দুর্নীতি নিয়ে তীব্র কটাক্ষ বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের


২০১৪-র টেটের ভিত্তিতে ২০২০-তে যে নিয়োগ প্রক্রিয়া হয়েছিল, তা নিয়ে একাধিক অভিযোগ উঠেছে। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্য়ায়ের নির্দেশে ২০২০ সালের নিয়োগপ্রক্রিয়ার প্যানেল প্রকাশ করে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। সেই প্য়ানেলে একাধিক অসঙ্গতি আছে, এই অভিযোগ তুলে আদালতের দ্বারস্থ হন একাধিক চাকরিপ্রার্থী। মামলাকারীদের অভিযোগ, পর্ষদের প্রকাশিত মেধাতালিকায় নম্বরের গরমিল রয়েছে। যে বিভাগের জন্য় যত বরাদ্দ, তার থেকে বেশি নম্বর দেওয়া হয়েছে। যাঁদের বিরুদ্ধে বেআইনিভাবে চাকরি পাওয়ার অভিযোগ, তাঁরা নাকি Extra Curricular activitiy-র জন্য কোনও নম্বরই পাননি। 


বৃহস্পতিবার সেই মামলার শুনানি চলাকালীন কটাক্ষ ছুড়ে দেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। প্রশ্ন তোলেন, "অন্য ক্ষেত্রে তো বরাদ্দের থেকে বেশি নম্বর দেওয়া হয়েছে। এখানে নম্বর দেওয়া হয়নি কেন?" তিনি বলে যান, "বোমা বাঁধতে পারলে কি বাড়তি নম্বর পাওয়া যায়? কত নম্বর পাওয়া যায় বীরভূমে পেটো বাঁধলে?" নম্বর গরমিলের অভিযোগ প্রসঙ্গে এমন মন্তব্য় করেন বিচারপতি। 


আরও পড়ুন: Titlagarh to Howrah Ispat Express: মোবাইল চার্জার ফেটে বিপত্তি! টিটলাগড়-হাওড়া ইস্পাত এক্সপ্রেসে আগুন


শুধু তাই নয়, রাজ্য পুলিশের উপর সরকারের প্রভাব রয়েছে বলেও এ দিন মন্তব্য করেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি বলেন, "রাজ্য পুলিশের উপর আমার ভরসা আছে। কিন্তু পুলিশের ওপর সরকারের প্রভাব রয়েছে। "


এ দিন মামলায় সিবিআই এবং ইডি-কে যৌথ তদন্তের নির্দেশ দেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। প্রশ্ন তোলেন, কী ভাবে পর্ষদের কাজের দায়িত্ব এস বসু রায় অ্যান্ড কোম্পানিকে দেওয়া হল? এই মামলায় নতুন এফআইআর দায়ের করে তদন্ত করবে ইডি এবং সিবিআই। এমনই নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। 


এই মামলায় সরকারের অধীনে থাকা প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের বিরুদ্ধে অভিযোগ।  সেই পর্ষদের সভাপতি ছিলেন তৃণমূল বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্য, যিনি এখনও বিধায়ক পদে বহাল রয়েছেন। এ দিন বিচারপতি জানান, পুলিশ এবং পর্ষদ রাজ্য প্রশাসনেরই অঙ্গ। তাই এই নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় CBI ও ED নিজেদের মধ্যে তথ্যের আদানপ্রদান করবে। 


সিবিআই এবং ইডি-কে যৌথ তদন্তের নির্দেশ দেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়


কিন্তু ইডি-র তদন্ত আদালতের নজরদারিতে হবে না। সিবিআই-এর বিশেষ তদন্তকারী দল বা SIT তদন্ত করবে। সিবিআই এবং ইডি পৃথকভাবে আগামী ২০ এপ্রিলের মধ্যে প্রাথমিক রিপোর্ট পেশ করবে।