কলকাতা: কলকাতা হাইকোর্টের দুই বিচারপতির মধ্যে বেনজির সংঘাত। স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে তাতে হস্তক্ষেপ করেছে সুপ্রিম কোর্ট। সেই আবহেই উচ্চ প্রাথমিকের নিয়োগ সংক্রান্ত একটি মামলা থেকে নিজেকে সরিয়ে নিলেন হাইকোর্টের বিচারপতি সৌমেন সেন। জানালেন, কোনও মামলা নিয়েই আলাদা করে উৎসাহী নন। যাঁর সঙ্গে তাঁর সংঘাত, সেই বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় সম্পর্কেও কোনও কথা শুনতে চাইলেন না বিচারপতি সেন। (Justice Soumen Sen)
শিক্ষায় নিয়োগ সংক্রান্ত সব মামলার ডিভিশন বেঞ্চ বদল হয়েছে আগেই। বিচারপতি সেনের ডিভিশন বেঞ্চ থেকে মামলা গিয়েছে বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর কাছে। তার পর বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় এবং বিচারপতি সেনের মধ্যে সংঘাত পরিস্থিতি নিয়ে শোরগোল পড়ে যায়। সেই আবহেই এবার উচ্চ প্রাথমিকের নিয়োগ সংক্রান্ত একটি মামলা থেকে সরে দাঁড়ালেন বিচারপতি সেন। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে নিজের সংঘাত নিয়েও মুখ খুললেন তিনি। জানালেন, বিচারপতির অধিকার, শুধুমাত্র নির্দেশ দেওয়ার ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ। (Calcutta High Court)
মঙ্গলবার নিজের সিদ্ধান্তের কথা আদালতে জানান বিচারপতি সেন। তিনি বলেন, "এই আদালত অপমানিত হয়েছে। সংবাদমাধ্যমের সামনে কথা বলার অধিকার সবার আছে। কিন্তু বিচারপতির অধিকার, নির্দেশ দেওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। কোনও মামলাতেই আলাদা করে উৎসাহী নই আমরা।" বিচারপতি সেনের কাছে এর পর বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়কে নিয়ে কথা বলার ইচ্ছে প্রকাশ করেন আইনজীবী কল্যাণ গঙ্গোপাধ্যায়।
বিচারপতি সেনের উদ্দেশে এদিন কল্যাণ বলেন, "আমি শুধু বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে নিয়ে কিছু বলতে চাই।" কিন্তু মাঝপথেই তাঁকে তামিয়ে দেন বিচারপতি সেন। তিনি বলেন, "দয়া করে কিছু বলবেন না। আমাদের কাউকে কিছু বলার নেই। আমি সকলকে শ্রদ্ধা করি। আমার এই অভ্যাস নেই। এই মামলা থেকে সরে দাঁড়ালাম।"
রাজ্যের সরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলিতে ভর্তির অনিয়ম সংক্রান্ত মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় এবং বিচারপতি সেনের মধ্যে সংঘাত সৃষ্টি হয়েছে। মামলায় CBI তদন্তের নির্দেশ দেয় বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্য়ায়ের সিঙ্গল বেঞ্চ। সেই নির্দেশকে চ্য়ালেঞ্জ জানিয়ে বিচারপতি সৌমেন সেনের ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয় রাজ্য সরকার। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সেই নির্দেশের উপর অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দেয় বিচারপতি সেনের ডিভিশন বেঞ্চ।
কিন্তু, ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশের পরেও CBI-কে অবিলম্বে FIR দায়ের করার নির্দেশ দেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। বিচারপতি সৌমেন সেন শাসকদলের ঘনিষ্ঠ বলেও অভিযোগ করেন তিনি। সেই নিয়ে পরিস্থিতি চরমে উঠলে স্বতঃপ্রণোদিত হস্তক্ষেপ করে সুপ্রিম কোর্ট। বিষয়টির আঁচ পড়েছে রাজ্য রাজনীতিতেও।