সৌভিক মজুমদার, কলকাতা: নিয়োগ দুর্নীতির (Recruitment Scam) প্রতিবাদ করায় বঞ্চিত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে পরপর মামলা পুলিশের (Case against police in calcutta high court), অভিযোগে মামলা দায়ের কলকাতা হাইকোর্টে। প্রায় ৭০০০ বঞ্চিত প্রার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ, এমনই অভিযোগ। বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত রাজ্যকে প্রশ্ন করেন, 'বেআইনি কিছু করেছে ? কোথাও ১৪৪ ধারা জারি ছিল? এভাবে মামলা বাড়াচ্ছেন কেন? যেসব ধারায় মামলা দেওয়া হয়েছে সেগুলো দেওয়া যায় ?' আগামী ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে কেস ডায়েরি তলব করেন তিনি।


ফিরে দেখা...
সাম্প্রতিক অতীতে একাধিক ঘটনায় বারবার আতসকাচের নিচে এসেছে পুলিশের ভূমিকা। জয়নগরে তৃণমূল নেতার 'খুনের' পর দলুয়াখাকিতে সিপিএম কর্মী-সমর্থকদের বাড়িতে যে ভাবে আগুন লাগানোর অভিযোগ ওঠে, সেখানেও প্রশ্নের মুখে পড়েছিল পুলিশ। গ্রামবাসীরা অভিযোগ করেন, পুলিশের সামনেই সবটা ঘটেছে। অন্য একটি ঘটনায় গত মাসে আবার রাজ্যের ৩ সিআইডি ও পুলিশ আধিকারিকের বিরুদ্ধে তোলাবাজির মামলার তদন্ত শুরু করে সিবিআই। যদিও এডিজি সিআইডি রাজশেখরণ দাবি করেন, পুরোটাই বানানো অভিযোগ। কয়েকদিন আগে আবার মিথ্যা মামলায় বিজেপি নেতাকে গ্রেফতারের অভিযোগ ওঠে মারিশদা থানার বিরুদ্ধে। মারিশদা থানায় দাঁড়িয়েই পুলিশের বিরুদ্ধে অপহরণের মামলা করার হুঁশিয়ারি দেন শুভেন্দু অধিকারী। এবার মামলা দায়ের হল কলকাতা হাইকোর্টে।


প্রেক্ষাপট...
নিয়োগ দুর্নীতি মামলা ঘিরে গত বছরদেড়েক যাবৎ উত্তাল বঙ্গ রাজনীতি। বিশেষত, প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেফতারির পর থেকে তুমুল আলোড়ন শুরু হয় রাজ্যে। গত বছর জুলাই মাসে, রাতভর জিজ্ঞাসাবাদ ও তল্লাশির পর পার্থকে স্কুল সার্ভিস কমিশনের নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার করে ইডি। সূত্রের খবর, তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের নামও উঠে এসেছিল। এই অর্পিতার বাড়ি থেকে কোটি কোটি টাকা নগদ উদ্ধার হয়েছিল বলে দাবি ইডি-র। মেলে বিপুল অর্থমূল্য়ের গয়না। পাশাপাশি, বিপুল সম্পত্তির হদিশও পাওয়া যায়। বঙ্গ রাজনীতিতে যখন পার্থর গ্রেফতারির  তুমুল আলোড়ন চলছে, তখন ধীরে ধীরে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের হাতে ধরা পড়েন  সুবীরেশ ভট্টাচার্য, কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়-সহ ৭ জন। তদন্ত এগোতে শুরু করলে একের পর এক বিস্ফোরক তথ্য সামনে আসে। কয়েক মাস আগেই কুন্তল ঘোষকে গ্রেফতার করেছিল ইডি। তদন্তে অসহযোগিতার অভিযোগে যুব তৃণমূল নেতাকে গ্রেফতার করা হয়। প্রায় ২৪ ঘন্টা তল্লাশি চালানোর পর গ্রেফতার হন কুন্তল। গ্রেফতারের আগে কুন্তল ঘোষকে টানা জিজ্ঞাসাবাদ করেন কেন্দ্রীয় এজেন্সির গোয়েন্দারা। সেখান থেকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথিও উদ্ধার হয়, দাবি ইডি সূত্রে। খোঁজ মেলে এক ধূসর রংয়ের ডায়েরির যার প্রতিটি পাতাতেই রয়েছে বিস্ফোরক তথ্য। সূত্রের খবর, সেখানেই কোটি কোটি টাকার হিসেব রয়েছে। নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে নজর যায় এমনই একটি ডায়েরিতে। অভিযোগ, সেটি মানিক ভট্টাচার্য ঘনিষ্ঠ তাপস মণ্ডলের ডায়েরি। ইডি দাবি করেন, সেখানেই রয়েছে কুন্তল ঘোষকে দেওয়া কোটি কোটি টাকার হিসেব। রয়েছে কুন্তল ঘোষের সইও। ইডি সূত্রে দাবি এর মধ্যে বেশ কয়েকটি তাঁর সই বলেও স্বীকার করেছেন যুব তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক। তার আগেই, গত মে মাসে গ্রেফতার হয়েছেন গ্রেফতার 'কালীঘাটের কাকু' ওরফে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ।


আরও পড়ুন:কেন্দ্রের দেওয়া প্রকল্পের নাম বদলের জের? স্বাস্থ্য খাতে টাকা আটকানোর অভিযোগ