প্রকাশ সিনহা, আবীর ইসলাম ও মনোজ বন্দ্যোপাধ্যায়, বোলপুর : গরুপাচার মামলায় তৎপর সিবিআই। গতকাল হাজিরা এড়ানোর পর আজ সকালে বোলপুরের নীচুপট্টিতে অনুব্রত মণ্ডলের (Anubrata Mandal) বাড়িতে তল্লাশি অভিযান। সূত্রের খবর, আদালতের নির্দেশনামা ও মেডিক্যাল রিপোর্ট নিয়ে এদিন বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতির বাড়িতে যান সিবিআই অফিসাররা। 


যাবতীয় নথি সঙ্গে নিয়ে পৌঁছে যায় ১০-১২টি গাড়ির কনভয়। অনুব্রতর বাড়ির চারপাশ ঘিরে ফেলে কেন্দ্রীয় বাহিনী। বাড়িতে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেন সিবিআই আধিকারিকরা। অনুব্রত মণ্ডলের ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষীদের ফোন বাজেয়াপ্ত করে নিয়ে তাঁদেরও বাড়ির বাইরে বের করে দেওয়া হয়। আর এভাবে তৃণমূল নেতাদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষীদের ফোন বাজেয়াপ্ত করে তাঁদের বাড়ির বাইরে বের করে দেওয়ার পরই জোরালো হয়েছে অনুব্রত মণ্ডলের গ্রেফতারির সম্ভাবনা।


কিছুদিন আগে ঠিক একইভাবে সাতসকালে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের (Partha Chatterjee) নাকতলার বাড়িতে হানা দিয়েছিলেন ইডি আধিকারিকরা। সেখানে পৌঁছেই ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষীদের ফোন কেড়ে নিয়ে তাঁদের বের করে দেওয়া হয়। তারপর শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ম্যারাথন জিজ্ঞাসাবাদের পর প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীকে গ্রেফতার করেছিল ইডি (ED)। এবারেও কার্যত একইভাবে গরুপাচারকাণ্ডে অনুব্রত মণ্ডলের বাড়িতে হানা দিয়েছে সিবিআই।


সিবিআই (CBI) আধিকারিকদের দাবি, গরু পাচারকারীদের সঙ্গে সরাসরি অনুব্রত মণ্ডলের যোগ মিলেছে। তাঁদের থেকে টাকাও অনুব্রত পেতেন বলেই দাবি করেছেন সিবিআইয়েক তদন্তকারী অফিসাররা। প্রসঙ্গত ইতিমধ্যে অনুব্রত মণ্ডলের দেহরক্ষী সায়গল হোসেনকে (Saigal Hossain) গ্রেফতার করেছে সিবিআই। তিনি রয়েছেন হেফাজতে। তার সঙ্গে অনুব্রত-র যোগাযোগ থেকে শুরু করে সম্প্রতি দাখিল করা চার্জশিট, সবেতেই অনুব্রত মণ্ডলের নাম রেখেছেন তদন্তকারী অফিসাররা।


গরুপাচার মামলায় (Cow Smuggling Case) ১০ বার অনুব্রতকে তলব করে সিবিআই। মাত্র একবার হাজিরা দেন তৃণমূল জেলা সভাপতি। অসুস্থতার কথা বলে গতকালও হাজিরা এড়ান অনুব্রত। সিবিআই সূত্রে বলা হয়েছে, গতকাল বোলপুর মহকুমা হাসপাতালের চিকিত্সক চন্দ্রনাথ অধিকারীর সঙ্গে কথা বলেন তদন্তকারীরা। আজ ওই চিকিত্সকের বয়ান রেকর্ড করা হতে পারে। সিবিআই সূত্রে খবর, অনুব্রত প্রভাব খাটিয়ে চিকিত্সককে দিয়ে প্রেসক্রিপশন লেখানোর চেষ্টা করেছিলেন কিনা, তা জানতে চাওয়া হয়। কার নির্দেশে ওই সরকারি চিকিত্সক বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতির বাড়িতে গিয়েছিলেন, তাও জানতে চায় সিবিআই। খবর সূত্রের। 


এদিকে এলাকায় এমন কেন্দ্রীয় বাহিনীর আচমকা হানা এবং সিবিআই আধিকারিকদের চলে আসায় রীতিমতো উত্তেজনার পরিবেশ তৈরি হয়েছে। অনেকেই ভিড় জমিয়েছেন কী হয়েছে তা দেখতে। অনেকে ছবি তুলছেন। এক বাসিন্দা জানান, বাজার করতে বেড়িয়েছিলাম হঠাৎ দেখলাম ভিড়। সংবাদমাধ্যমও এসেছে তাই দাঁড়িয়ে গেলাম। আরেক বাসিন্দা বলেন, "দাদার জন্যই এসেছি এখানে। আমরা অনেক দিনের বাসিন্দা। দাদার জন্য আমাদের দুঃখ, কষ্ট হচ্ছে।" 


আরও পড়ুন- 'গরু পাচারকারীদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ, অনুব্রত-র কাছে পৌঁছত টাকা' দাবি সিবিআইয়ের, আজই গ্রেফতার ?