সন্দীপ সরকার, কলকাতা: দীর্ঘদিনের লড়াই শেষে বুধবার চন্দ্রপৃষ্ঠে (Moon Mission) অবতরণ করে ইসরো (ISRO) এবং ভারতবাসীর স্বপ্ন সার্থক করেছে চন্দ্রযান-৩। চন্দ্রযান-২ পরিকল্পনামাফিক পাঠানো হলেও হার্ড ল্যান্ডিংয়ের জেরে ভেঙে চুরমার হয় সব স্বপ্ন। এবার তাই লক্ষ্যই ছিল সফট ল্যান্ডিংয়ের (Soft Landing) ওপর। চন্দ্রপৃষ্ঠে পালকের মতো নামার জন্য বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করার বিষয়টি মাথায় রাখা হয়েছিল।
এই চন্দ্রযান মিশনের নকশা তৈরির জন্য বিশেষ প্রজেক্ট তৈরি করেছিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় (Jadavpur University)। প্রজেক্টের নাম ভিশন গাইডেড অটো ল্যান্ডার ফর প্ল্যানেটরি এক্সপ্লোরেশন। দায়িত্বে ছিলেন পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক অমিতাভ গুপ্ত এবং ইলেকট্রনিক ও টেলিকমিউনিকেশন বিভাগের অধ্যাপক সায়ন চট্টোপাধ্যায়।
কীভাবে কোন পথে চন্দ্রযান এগোবে, কীভাবে নিজের পথ নিজেই করে নেবে, কীভাবে নিজে থেকেই খুঁজে নেবে ল্যান্ডিংয়ের জায়গা? এই সংক্রান্ত প্রজেক্ট তৈরি করার জন্য ইসরো দায়িত্ব দিয়েছিল পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগকে। সময়সীমা দেওয়া হয়েছিল ২০২২ এর জুলাই। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা এই প্রজেক্ট সময়ের মধ্যে শেষ করে পাঠিয়ে দেন ইসরোকে। সফট ল্যান্ডিংয়ের জন্য সিমুলেশন মডেল বানিয়েছিলেন তাঁরা।
বুধবার সন্ধ্যায় চাঁদের বুকে চন্দ্রযান-৩-এর ল্যান্ডার বিক্রম যখন সফট ল্যান্ডিং করেন, সেই সময় প্রচুর ধুলো উড়তে শুরু করে। পৃথিথীর তুলনায় চাঁদের মাধ্যাকর্ষণ অনেক কম হওয়ায় সেই ধুলো ঝড় থামতে সময় লাগে প্রায় আড়াই ঘণ্টা। ঝড় থামতেই ল্যান্ডার বিক্রমের পেটের ভিতর থেকে চাঁদের বুকে নেমে আসে রোভার প্রজ্ঞান।
আরও পড়ুন, 'আমি নজর রাখছি' কক্ষপথ থেকে ল্যান্ডারকে বার্তা অরবিটারের
ল্যান্ডারের চাকায় খোদাই করা ছিল অশোক স্তম্ভ ও ইসরোর লোগো। চাঁদের মাটিতে নামার সঙ্গে সঙ্গেই সেই ছবি আঁকা হয়ে যায় চাঁদের বুকে। চাঁদের বায়ুমণ্ডলের মৌলিক গঠনের উপর তথ্য সংগ্রহ করবে রোভাবের ২টি পেলোড। তার মধ্যে আলফা পার্টিকল এক্স-রে স্পেকট্রোমিটার বা APXS চন্দ্রপৃষ্ঠে কী কী রাসায়নিক ও খনিজ উপাদান রয়েছে সেসব বিষয়ে তথ্য অন্বেষণ করবে।
বুধবার থেকেই শুরু হয়েছে চন্দ্রদিন অর্থাৎ চাঁদের দিন। এই সময় চাঁদের এই প্রান্তে পড়ছে সূর্যের হালকা আলো। সেই আলোকে কাজে লাগিয়ে পৃথিবীর হিসেবে মাত্র ১৪ দিন। চাঁদের নিরিখে এক চন্দ্রদিন কাজ করবে চন্দ্রযান-৩।