কলকাতা:  কয়লাপাচারকাণ্ডে অভিযুক্ত বিকাশ মিশ্রকে আদালত কক্ষ থেকেই হেফাজতে নিল সিবিআই। জামিনে মুক্ত বিকাশকে ৪ দিনের হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিলেন আসানসোলের বিশেষ সিবিআই আদালতের বিচারক রাজেশ চক্রবর্তী। ২০২১-এর ডিসেম্বরে কয়লা পাচারকাণ্ডে মূল অভিযুক্ত বিনয় মিশ্রর ভাই বিকাশ মিশ্রকে দিল্লি থেকে গ্রেফতার করে সিবিআই। কিন্তু, গ্রেফতারির পর, বেশিরভাগ সময় তিনি হাসপাতালেই ছিলেন। পুলিশ হেফাজতে পেলেও বিকাশকে হেফাজতে পায়নি সিবিআই। CBI অভিযোগ করে, জেরা এড়াতেই হাসপাতালে ভর্তি হন বিকাশ। সম্প্রতি হাইকোর্টের নির্দেশে জামিনে ছাড়া পান বিকাশ।


কিন্তু সেই সিদ্ধান্তকে চ্য়ালেঞ্জ করে, সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় সিবিআই। গত মাসের ১০ তারিখ সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দেয়, বিকাশকে ৪ দিনের জন্য় হেফাজতে নিতে পারে সিবিআই। কিন্তু চারদিনের পর পঞ্চম দিন থেকে কী হবে, তা নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়। এই জটিলতা কাটাতে পাল্টা সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন বিকাশ। এর জন্য়, সিবিআই আদালত তাঁকে সময়ও দেয়। কিন্তু সেই সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরও, সুপ্রিম কোর্টের পরবর্তী নির্দেশ দেখাতে না পারায়, আজ আদালত কক্ষ থেকেই বিকাশকে হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক।


এদিন, সিবিআইয়ের তদন্তকারী অফিসারের উদ্দেশে বিচারক প্রশ্ন করেন, তাঁরা এই মুহূর্তে বিকাশকে হেফাজতে নিতে প্রস্তুত কিনা। কয়লা পাচারকাণ্ডের তদন্তকারী আধিকারিক উমেশ কুমার সম্মতি জানালে, সঙ্গে সঙ্গে বিকাশকে হেফাজতে নেওয়ার নির্দেশ দেন বিচারক। রায় পুনর্বিবেচনার আর্জি জানান বিকাশ। আরও কিছুদিন সময় চান তিনি। কিন্তু সেই সময় দিতে রাজি হননি বিচারক। বিচারক বলেন, সুপ্রিম কোর্ট যে নির্দেশ দিয়েছে, তা পালন করা তাঁদের কাজ। এরপরই বিকাশকে ৪ দিনের সিবিআই হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক। মঙ্গলবার ফের তাঁকে আদালতে পেশ করা হবে।  


কয়লা পাচার মামলায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের অধীনস্থ CISF-এর ইন্সপেক্টর আনন্দ সিংহ এবং কেন্দ্রীয় কয়লামন্ত্রকের ECL-এর প্রাক্তন ডিরেক্টর সুনীলকুমার ঝা-কে গ্রেফতার করেছে কেন্দ্রীয় এজেন্সি সিবিআই। আজ তাঁদের তোলা হয় আসানসোল কোর্টে। ২ জনেরই চারদিনের সিবিআই হেফাজতের নির্দেশ দিল আদালত।


কয়লামন্ত্রকের অধীনস্থ ECL’এর খনির নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের অধীনে থাকা CISF এবং ECL’এর নিজস্ব নিরাপত্তারক্ষী। অভিযোগ উঠেছে, খনি থেকে, কয়লা মাফিয়া, ECL আধিকারিকদের একাংশ এবং রাজনীতিবিদদের যোগসাজশে বেআইনিভাবে বেশি পরিমাণ কয়লা তোলা হত। তারপর তা লরিতে বোঝাই করে বার করে দেওয়া হত। সিবিআই সূত্রে দাবি, তদন্তে জানা গেছে, কয়লা পাচারকারীদের সঙ্গে যোগসাজশ করে তাদের থেকে প্রোটেকশন মানি বাবদ মোটা টাকা নিতেন CISF-এর ইন্সপেক্টর, ধৃত আনন্দ সিংহ। বিনিময়ে তিনি কয়লা মাফিয়াকে সুবিধা পাইয়ে দিতেন বলে অভিযোগ। বেআইনি কয়লা পাচারের টাকা ধৃত ECL-এর প্রাক্তন ডিরেক্টর সুনীলকুমা ঝা-র কাছেও পৌঁছেছে বলে সিবিআই সূত্রে দাবি।