কলকাতা: কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে ঢোকার চেষ্টার মামলায় বিস্ফোরক তথ্য। জিএসটি দফতরের ডিজি পর্যায়ের অফিসারের সঙ্গে যোগাযোগ ধৃত নুর আমিনের। কলকাতার পাঁচতারা হোটেলে একাধিক বার বৈঠক। বিভিন্ন সংস্থার জিএসটি ফাঁকি নিয়ে তথ্য সরবরাহ করত নুর। নুরের তথ্যের উপর ভিত্তি করে হানা দিয়ে কোটি কোটি টাকা কর আদায় করে কেন্দ্রীয় সংস্থা। আদালতেসরকারি আইনজীবীর দাবি তথ্য সরবরাহ করায় নুর আমিনকে ১৮ লক্ষ টাকা পুরস্কারও দেয় কেন্দ্রীয় সংস্থা।


দিনটা ছিল ২১ জুলাই, সমাবেশের ব্যস্ততা শহরজুড়ে। ঠিক সেইসময়ে মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় ২১ জুলাইয়ের সভার উদ্দেশে রওনা হওয়ার, মাত্র কয়েকঘণ্টা আগে, ভুয়ো পরিচয় দেওয়া ও বেআইনি অস্ত্র রাখার অভিযোগে, মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির কাছ থেকে সন্দেহভাজন এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। চলন-বলনে কেতাদুরস্ত। প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছিল তাঁর ইন্টিরিয়র ডেকরেশনের ব্যবসা রয়েছে। ধৃত নুর আমিন আদতে পশ্চিম মেদিনীপুরের লোক। ডেবরা এবং মেদিনীপুর শহর, এই দুই জায়গাতেই যাতায়াত ছিল নুর আমিনের। সেই নুর আমিনকেই মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির সামনে থেকে অস্ত্র-সহ গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। 


এর পর নুর আমিনের গাড়ির ফ্লোর ম্যাটের নীচ থেকে ১৫ ইঞ্চির কুকরি এবং বেসবল ব্যাট উদ্ধার হয়। সূত্রের দাবি, মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে, এই সংক্রান্ত বিশেষ তথ্য তাঁর কাছে ছিল। সেই খবর সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীকে জানাতেই তাঁর বাড়িতে যাচ্ছিলেন বলে জেরায় দাবি করেন অভিযুক্ত।


সূত্রের খবর, নুরকে জেরা করে তদন্তকারীরা জানতে পারেন, গত ৬-৭ মাস ধরে বিভিন্ন জায়গায় নিজেকে পুলিশ বলে পরিচয় দিচ্ছিলেন তিনি। টোল ফাঁকি দিতেই নাকি তিনি এমনটা করেছিলেন বলে জেরায় দাবি করেছেন ওই ব্যক্তি। পাশাপাশি নুরকে জেরা করে এক তরুণীরও হদিশ মেলে বলে পুলিশ সূত্রের দাবি। ২১ জুলাইয়ের সমাবেশের সকালে, মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির অদূরে সন্দেহভাজন শেখ নুর আমিনের গ্রেফতারি ঘিরে হলুস্থূল পরিস্থিতি তৈরি হয়। পুলিশের বোর্ড লাগানো গাড়ি ব্যবহার করার পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির কাছে ধরা পড়ার পরে, নিজেকে BSF-এর DG বলেও পরিচয় দেন নুর আমিন। উদ্ধার হয় অস্ত্র। পুলিশ সূত্রের খবর মেলে, দ্বিতীয়বার তল্লাশি চালিয়ে নুর আমিনের গাড়ির ফ্লোর ম্যাটের নীচে ১৫ ইঞ্চির কুকরি এবং বেসবল ব্যাট উদ্ধার করা হয়। 


এর পর আদালতে নুর আমিনের আইনজীবী সওয়াল করেন, পুলিশের সিজার লিস্টে বলা হয়েছে, কালো নাইন এমএম পিস্তলের মতো দেখতে একটি জিনিস উদ্ধার করা হয়।
নাইন এমএম পিস্তলের মতো দেখতে আর নাইন এমএম পিস্তলের আকাশ-পাতাল পার্থক্য। যে বেসবল ব্যাট মিলেছে, সেটা উনি ছেলের জন্য কিনেছিলেন। গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। নুর আমিন ধূমপান করতেন। সেই জন্য ওনার কাছে একটা বন্দুকের মত লাইটার ছিল। সিজার লিস্ট অনুযায়ী একটি ছুরি পাওয়া গেছে। নুর ইন্টিরিয়র ডেকরেশনের ব্যবসা করেন। সল্টলেকে অফিস। অনেক সময় বিভিন্ন সামগ্রী কাটার প্রয়োজন হয়, তাই ওটা গাড়িতে ছিল।নুর আমিনের আইনজীবী আরও বলেন, উনি মানসিকভাবে অসুস্থ। চিকিৎসা চলছে। প্রাথমিক তদন্তে মনে করা হচ্ছিল, আরও কিছু লোক এর সঙ্গে থাকতেও পারেন।