ঝিলম করঞ্জাই, কলকাতা: বাংলায় বাড়ছে করোনার সংক্রমণ (Covid Cases)। চিন্তা বাড়ছে প্রবীণদের (old people) নিয়ে। শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে ক্রিটিক্যাল কেয়ার (Critical Care) বেডের চাহিদা উত্তরোত্তর বাড়ছে। কীভাবে করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসা চলছে সেখানে? চিকিৎসকরা কী পরামর্শ দিচ্ছেন? আইসিইউ (ICU) থেকে এক্সক্লুসিভ প্রতিবেদন। 


করোনার প্রকোপ, চাহিদা বাড়ছে ICU-র


চিকিৎসকরা বলছেন, করোনার এবারের ঢেউয়ে সর্বাধিক প্রভাব পড়ছে বয়স্কদের ওপরে। কলকাতার বিভিন্ন হাসপাতালে ক্রিটিক্যাল কেয়ার বেডের চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে। পরিসংখ্যান বলছে, বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে ৩৫টি সিসিইউ বেডের মধ্যে ২২টিতে রোগী ভর্তি। শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে ১৯টি ক্রিটিক্যাল কেয়ার বেড। সবক’টিই এখন ভর্তি। এম আর বাঙ্গুর হাসপাতালে ২০টি ক্রিটিক্যাল কেয়ার বেডের মধ্যে ১৮টিতেই রোগী ভর্তি।


কলকাতার বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালেও একই অবস্থা। সূত্রের খবর, বেলভিউয়ে করোনার ১৪টি ক্রিটিক্যাল কেয়ার বেডের মধ্যে ১০টিতেই রোগী ভর্তি। আর এন টেগোর হাসপাতালে ২৫টির ক্রিটিক্যাল কেয়ার বেডের মধ্যে ২১টিতে রোগী ভর্তি। কলকাতায় আমরির ৩টি হাসপাতাল মিলিয়ে করোনার জন্য মোট বেডের সংখ্যা ৭৭। এর মধ্যে ৫৭টিতেই রোগী ভর্তি।


বিভিন্ন হাসপাতালের ICU কিংবা ITU বিভাগের পরিস্থিতি কেমন? কীভাবে করোনা রোগীদের চিকিৎসা চলছে সেখানে? সেই সমস্ত কিছুই জানতে এবিপি আনন্দ পৌঁছে গিয়েছিল শহরের দুই নামী বেসরকারি হাসপাতালের কোর এরিয়ায়। 


প্রথম গন্তব্য, দ্য ক্যালকাটা মেডিক্যাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট অর্থাৎ CMRI। করোনার ফোর্থ ওয়েভের ধাক্কায় আক্রান্তের সংখ্যাটা বাড়ছে। চিকিৎসকরা বলছেন, বেশিরভাগই আসছেন মৃদু উপসর্গ নিয়ে, বেশিরভাগকেই হাসপাতালে ভর্তি হতে হচ্ছে না বটে, কিন্তু যাঁদের ভর্তি হতে হচ্ছে, তাদের মধ্যে অনেকের শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত সঙ্কটজনক হচ্ছে। 


CMRI হাসপাতালের দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এখানে করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য বরাদ্দ ২১টি ICU বেডের মধ্যে ১৯টিতেই রোগী ভর্তি। চিকিৎসক রাজা ধরের কথায়, 'কিছু লোক আছেন যাঁদের হাই অক্সিজেন রিকোয়ারমেন্ট আছে। কিছু লোক আছে, যাদের কম অক্সিজেন রিকোয়ারমেন্ট আছে। আর কিছু পেশেন্ট আছেন, যাঁরা নিজেদের কোমর্বিডিটির জন্য ভর্তি হয়েছেন। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে দেখেছি, খুব বেশি রোগী অক্সিজেন রিকোয়ারমেন্ট নিয়ে ভর্তি হননি, কিন্তু ফোর্থ ওয়েভে খুব অল্প সংখ্যক হলেও কিছু রোগী সঙ্কটজনক হয়ে আসছেন, যাঁদের হাই অক্সিজেন রিকোয়ারমেন্ট আছে। ডেল্টা-র মতো সিটি স্ক্যানে নিউমোনিয়া দেখা যাচ্ছে।'


সিএমআরআইয়ের ICU’তে ভর্তি অধিকাংশ রোগীই বয়স্ক। তাঁদের কেউ কেউ দ্বিতীয়বার করোনায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন হাসপাতালে। যেমন, ৭৫ বছরের প্রেমকুমার দিওয়ান। বর্ষীয়ান এই আইনজীবীর একটাই মত, সতর্কতা অবলম্বন না করলে পড়তে হতে পারে করোনার কবলে। 


চতুর্থ ঢেউয়ে সর্বাধিক প্রভাবিত বয়স্করা। বেশিরভাগই ভুগছেন শ্বাসকষ্টে। করোনা আক্রান্ত অজিতচন্দ্র গোপের বক্তব্য়, 'শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল, টান ধরছিল, এখানে আমি যখন আসি তখন প্রবল জ্বর ছিল। তারপর কোভিড টেস্টে পজিটিভ ধরা পড়ে।'


করোনা আক্রান্ত অঞ্জু ধাড়া বলছেন, 'শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল, হঠাৎ বাড়াবাড়ি জ্বর। ৯৭, ৯৭ প্লাস মতো ছিল টেম্পারেচর ছিল। দুর্বলতা ছিল।'


চিকিৎসক রাজা ধরের কথায়, 'আপাতত কেস ধরা পড়ছে যত, তার পাঁচ গুণ আসলে। সাবধান থাকতে হবে। বাড়ির লোকের মধ্যে সংক্রমণ ১-২%, হাসপাতালে এভাবে ভর্তি হলে ভরে যাবে, সচেতনতা অবশ্যই জরুরি।'


আরও পড়ুন: Online Fraud: ঋণের জন্য অনলাইনে সার্চ? সামান্য অসাবধানতায় হারাতে পারেন সর্বস্ব


শহরের আরেক বেসরকারি হাসপাতাল পিয়ারলেসেও চাপ বাড়ছে রোগীদের। বেশিরভাগই বয়স্ক রোগী বলে হাসপাতাল সূত্রের খবর। জানা যাচ্ছে, এই মুহূর্তে ICU-এর ১১টি বেডের সবকটিতেই রোগী ভর্তি। ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিশেষজ্ঞ ইন্দ্রনীল দাশগুপ্ত বলছেন, 'ITU-র ডিমান্ড বেশি, সিনিয়রদের মধ্য বেশি চাহিদা।'


ITU সেকশনের কোভিড রোগীদের ওয়ার্ডে দেখা যায় প্রবীণদের অবস্থা কয়েকজনের অত্যন্ত সঙ্কটজনক। তাঁদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হচ্ছে।