কোচবিহার: আসন সমঝোতা নিয়ে বিরোধের জেরে বাংলায় একা লড়ার বার্তা দিয়েছেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু বাংলায় এসে I.N.D.I.A জোটের পক্ষেই কথা বলতে শোনা গেল কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গাঁধীকে (Rahul Gandhi)। জানালেন, BJP এবং RSS-এর বিরুদ্ধে একজোট হয়েই লড়বে I.N.D.I.A জোট। রাহুল যখন এই কথা বলার সময় তাঁর পাশেই ছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী, যাঁর একরোখা অবস্থানের জেরেই মমতা বাংলায় একা লড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জোর জল্পনা রাজ্য রাজনীতিতে। (Bharat Jodo Nyay Yatra)


বৃহস্পতিবার 'ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা' নিয়ে বাংলায় প্রবেশ করেছেন রাহুল এবং কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকেরা। এদিন কোচবিহারের বক্সীরহাট হয়ে এদিন অসম থেকে বাংলায় প্রবেশ করেন রাহুল। সেখানে তাঁকে স্বাগত জানাতে ভিড় জমিয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেসের নেতা-কর্মী এবং সমর্থকেরা। ভিড় জমিয়েছিলেন সাধারণ মানুষও। তাঁদের উদ্দেশে রাহুল বলেন, "বাংলায় এসে অত্যন্ত আনন্দিত আমি। আপনাদের কথা শুনতে এসেছি। ধন্যবাদ সকলকে যে এত ভালবেসে আমাকে স্বাগত জানালেন আপনারা।"


বাংলায় 'ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা' নিয়ে আগমনের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বিজেপি-বিরোধী জোটের হয়ে ফের সওয়াল করতে শোনা যায় রাহুলকে। তিনি বলেন, "ভারত জোড়োর সঙ্গে ন্যায় শব্দটি যুক্ত করেছি আমরা। কারণ BJP এবং RSS দেশে ঘৃণা ছড়াচ্ছে, হিংসা ছড়াচ্ছে, দেশবাসীর সঙ্গে অন্যায় করছে। এই ঘৃণা, হিংসা এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে একজোট হয়ে লড়াই করতে চলেছে I.N.D.D.I.A. আপনাদের সকলকে ধন্যবাদ জানাই। আপনাদের ভালবাসি আমি।"


আরও পড়ুন: Mamata Banerjee: বর্ধমানে আহত মুখ্যমন্ত্রী, আঘাত পেলেন মাথায়


একদিন আগেই, বাংলার ব্যাপারে কংগ্রেসের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্নের কথা জানিয়েছেন মমতা। সেই নিয়ে এই মুহূর্তে উত্তাল জাতীয় রাজনীতি। কংগ্রেস যদিও তড়িঘড়ি বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, মমতাকে ছাড়া I.N.D.I.A জোটের কথা কল্পনাই করা যায় না। মমতা এবং তৃণমূল জোটের অন্যতম শক্তিশালী স্তম্ভ। আসন নিয়ে এমন মতভেদ চলতেই থাকে। তাই বলে জোটে ভাঙন ধরার সম্ভাবনা নেই। আলোচনার মাধ্যমেই বিষয়টি মিটিয়ে ফেলা সম্ভব। মমতা তাঁদের কাছে অনুপ্রেরণা বলেও জানান প্রবীণ কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ। 


যদিও তৃণমূলের তরফে এখনও পর্যন্ত সুর নরম করা হয়নি। আসন সমঝোতা নিয়ে কংগ্রেসের একরোখা অবস্থান তাদের এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করেছে বলে দলের তরফে জানানো হয়েছে। জোড়াফুল শিবিরের দাবি, গত দুই লোকসভা নির্বাচনে অত্যন্ত খারাপ ফল করেছে। বিধানসভায় শূন্যে নেমে গিয়েছে তারা। তার পরও আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে ১০ থেকে ১২টি আসন চাওয়া অযৌক্তিক বলে মত তৃণমূলের। জোটের শরিক হওয়া সত্ত্বেও রাহুলের 'ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা'র বাংলায় প্রবেশ নিয়ে মমতাকে কিছু জানানো হয়নি বলেও অভিযোগ। যদিও কংগ্রেসের দাবি, সকলকেই আহ্বান জানানো হয়েছিল। 


রাহুল যদিও সাফ জানিয়েছেন, মমতার সঙ্গে ব্যক্তিগত সুসম্পর্ক রয়েছে তাঁর। কিন্তু বুধবার মমতা একা লড়াইয়ের যে ঘোষণা করেছেন, তাতে I.N.D.I.A জোটের ভবিষ্যৎ, বিশেষ করে জোটে মমতার থাকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। তবে কংগ্রেস আপাতত বাংলায় রাহুলের 'ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা'য় মনোনিবেশ করছে। সূচি অনুযায়ী, যাত্রার দ্বাদশ দিনে কোচবিহারের খাগড়াবাড়ি চকে আজ জনসভা করবেন কংগ্রেস সাংসদ। এরপর মা ভবানী মোড় থেকে ১৫ কিলোমিটার পদযাত্রা করার কথা রয়েছে রাহুলের। আজ আলিপুরদুয়ারের ফালাকাটা পর্যন্ত যাবে ন্যায় যাত্রা। ২৬ এবং ২৭ জানুয়ারি যাত্রার বিরতি। দু’দিন বিশ্রামের পর, ২৮ জানুয়ারি আবার ফালাকাটা থেকেই 'ন্যায় যাত্রা' শুরু করবেন রাহুল।