কলকাতা: সংবিধান দিবসে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকার ও বিজেপি-কে তীব্র আক্রমণ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের। বিজেপি-র আমলে দেশের গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা বিপন্ন বলে দাবি করলেন। দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাকে ভেঙে দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করলেন মমতা। জানালেন, এই সঙ্ককালে সংবিধানের দেখানো পথে এগোতে হবে দেশকে। ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। (Mamata Banerjee)
বুধবার সংবিধান দিবসে রেড রোডে বিআর আম্বেডকরের মূর্তিতে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন মমতা। সেখানে সংবিধানের প্রস্তাবনাও পাঠ করে সকলকে শোনান তিনি। আর অম্বেডকর মূর্তির পাদদেশ থেকেই বিজেপি ও কেন্দ্রের মোদি সরকারকে তীব্র আক্রমণ করেন তিনি। মমতা বলেন, "সংবিধান খসড়া কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন বাবাসাহেব। অবিভিক্ত বাংলা থেকেই নির্বাচিত হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। তাই আমাদের গর্বই সবচেয়ে বেশি। এই ইতিহাস অনেকে জানেন না। আজ দেশের গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা বিপন্ন। সার্বভৌমত্ব নিয়ে কিছু বলব না, ওটা দেশের বিষয়। সবসময় চাই দেশ ভাল থাকুক। স্বাধীনতার এত বছর পর প্রশ্ন তোলা হচ্ছে, নতুন করে সকলকে প্রমাণ দিতে হচ্ছে আমরা দেশের নাগরিক কি না। এর পিছনে NRC কাজ করছে। আমরা স্তম্ভিত, দুঃখিত, মর্মাহত এহং শোকাহত। তাই বাবাসাহেবের মূর্তির সামনে শপথ নিয়ে গেলাম। দেশের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে রক্ষা করতে হবে।" (Constitution Day)
সরাসরি বিজেপি-কে নিশানা করে মমতা বলেন, "ভারত বৃহত্তম গণতন্ত্র। এখন যারা ক্ষমতায় আছে, তাদের দয়ায় এটা আসেনি, তারা স্বাধীনতা আন্দোলন করেনি। যাঁরা স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলে, তাঁদের ৯০ শতাংশ বাঙালি। ফাঁসির দড়িতে ঝুলে যাঁরা মৃত্যুবরণ করেছেন, তাঁদের ৯৯ শতাংশ বাঙালি। যাঁরা জেলে বন্দি ছিলেন, তাঁদের অধিকাংশই বাঙালি ও পঞ্জাবি। দুঃখের বিষয়, যে বাংলা দেশের জন্য এত লড়াই করেছে, দেশকে স্বাধীনতা দিয়েছে, নবজাগরণ দিয়েছে, সামাজিক সংস্কার দিয়েছে...দেখলাম সংসদে নাকি 'জয় হিন্দ', 'বন্দে মাতরম' বলা যাবে না! স্বাধীনতা আন্দোলনে স্লোগান ওগুলি। তার মানে কি বাংলার পরিচিতি নষ্ট করতে চায়! ভুলে যাচ্ছে, বাংলা এই ভারতের অংশ। বাংলা বরাবর গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, ঐক্য ও বৈচিত্রের জন্য লড়াই করেছে, যা আমাদের সংবিধান দিয়েছে।"
বিহারের পর বাংলাতেও SIR শুরু হয়েছে। সংবিধানকে সামনে রেখে এদিন তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন মমতা। বলেন, "এই সংবিধান দিবসে দুঃখের সঙ্গে দেখছি, মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার, ভোটাধিকার, ধর্মনিরপেক্ষতা কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। মানুষে মানুষে ভাগ করে দেওয়া হচ্ছে, নিপীড়িত, নিঃশেষিত হচ্ছেন স, দকলে। কুৎসিত ভাষায় আক্রমণ চলছে। তফসিলি, দলিত, আদিবাসী, সংখ্যালঘু, সাধারণ হিন্দু ভোটার, যাঁরা মারা যাচ্ছেন...কালও গিয়েছেন। বেশি কিন্তু হিন্দু। অসমেও হয়েছিল। এটা হিন্দু-মুসলিমের ব্যাপার নয়, নাগরিকত্বের ব্যাপার। যেভাবে গণতন্ত্রকে ভূলুণ্ঠিত করা হচ্ছে, নাগরিক অধিকার নিয়ে সকলকে আজ 'জীবন মৃত্যু পায়ের ভৃত্য' করে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়েছে। যাঁরা ঢাক বাজাচ্ছিলেন, কাল মিছিলের শেষে হাউ হাউ করে কাঁদছিলেন। বলছিলেন, 'মা বাঁচান'। যারা এটা নিয়ে রাজনীতি করে, তারা দেশের লজ্জা। বিহারে জেতার পর কত বাড়ি ভেঙে দিয়েছে কাল। বিজেপি এমনই। নির্বাচনের আগে ১০ হাজার, পরে লুঠ। ঝুট আর লুঠ। দেশে এটাই চলছে। এর বিরুদ্ধে একজোট হতে হবে সকলকে।"
নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন মমতা। বলেন, "দেশে একপাক্ষিক ব্যবস্থা চলছে। কোথায় নিরপেক্ষতা? একপক্ষ পক্ষপাতদুষ্ট। যারা ভাবছে আজ ক্ষমতায় আছি... কাল থাকবে না। ২০২৯ সালে কোনও ভাবেই আসবে না ক্ষমতায়। তার আগেও পড়ে যেতে পারে সরকার। গুজরাত, রাজস্থান, কেরল, তামিলনাড়ু, মধ্যপ্রদেশেও BLO মারা গিয়েছেন। দেখা করতে ৪৮ ঘণ্টা সময় নিয়েছে! এত অহঙ্কার কেন? তিন বছর সময় নিয়ে করো না! আমাদের আপত্তি নেই। তিন মাসের কাজ দু'মাসে হয় কী করে? এটা চাষের মরশুম, মানুষজন বাইরে যান। এনুমারেশন ফর্ম দিলেই হল না। কাল দেখলাম ১১৫ শতাংশ বলছে। সেটাও তো ভুল! গোটাটাই গায়ের জোরে চলছে। বিহার জ্বলন্ত প্রমাণ। সংবিধান দিবসে বলছি, অম্বেডকরের সংবিধান মেনে চলব আমরা, তাঁর সংবিধান মাথায় নিয়ে চলবয স্বাধীনতা আন্দোলনের মহান নেতৃত্ব যে দেশ গড়েছেন, তাঁদের দেখানো পথে চলব। বিজেপি-র গাইডলাইন মেনে চলব না। খুদেবাবু BLO-দের ৪৮ ঘণ্টা বসিয়ে রাখলেন। এত তাড়া কেন? সবাই অনুপ্রবেশকারী, বিজেপি কে? সবার অধিকার কেড়ে নিচ্ছে, বলছে BLO-দের জেলে দেবে। মনে রাখবেন, গণতন্ত্র থাকবে, আপনারা থাকবেন।"