শুভেন্দু ভট্টাচার্য, কোচবিহার: ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়, এই প্রবাদবাক্যটিকেই বাস্তবের রূপ দিয়েছেন কোচবিহারের তুফানগঞ্জ ১ ব্লকের বলরামপুর মাতৃমন্দির জুনিয়ার হাই স্কুলের শিক্ষকরা। সরকারি তহবিলের আশায় না থেকে নিজেরাই পকেট থেকে টাকা দিয়ে স্কুলের মেরামতির কাজ করিয়েছেন। যে স্কুলে চাকরি করতে আশায় অনীহা ছিল বর্তমানের প্রধান শিক্ষকের, আজ সেই স্কুলই হয়ে উঠেছে স্বপ্নের পাঠশালা। 


২০১১ সালে তৈরি হওয়া এই স্কুলে রয়েছেন দুইজন স্থায়ী শিক্ষক ও একজন গ্রুপ ডি কর্মী, আর ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণি মিলিয়ে ছাত্র ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ৯০ জন। প্রথম দিকে একজন অতিথি শিক্ষক দিয়েই স্কুল চলছিল, পরে ২০১৩ সালের শেষে স্কুলে যোগদান করেন সিদ্ধার্থ চৌধুরি ও সুজয় বণিক ও পরে নবকুমার বর্মন নামে এক গ্রুপডি কর্মী যোগদান করেন। আর সেই সময় থেকেই শুরু হয় স্কুলের উন্নয়নের কাজ। মূলত ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সিদ্ধার্থ চৌধুরির উদ্যোগে এই কাজ শুরু হয়। 


সিদ্ধার্থ চৌধুরি প্রায় অনিচ্ছা সত্ত্বেও এই স্কুলে যোগদান করেছিলেন। সবচেয়ে কাছের উচ্চমাধ্যমিক স্কুলটি ছিল প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরে, তাই কিছুটা অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাঁকে এই স্কুলে যোগদান করতে হয়, এই স্কুল ছিল তার বাড়ি থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে। তবে ধীরে ধীরে এই স্কুলটিকে ভালবেসে ফেলেন তিনি।  


প্রথমে কিছু সরকারি ফান্ডে একটি ঘর তৈরি হয় স্কুলে, ছাত্র ছাত্রীদের ক্লাসের সমস্যা কিছুটা মেটার পর, স্কুলের স্কুলের রূপ বদলে জোর দেন শিক্ষকরা। লাগানো হয় গাছ, মাঠ তৈরি করা হয়, ছাত্র ছাত্রীদের জন্য তৈরি হয় পেভার্স ব্লকের রাস্তা। সংস্কার করা হয় ছাত্রীদের জন্য শৌচাগার । কিছু  স্কুল ফান্ড, কিছু সরকারি প্রকল্পের টাকা বাচিয়ে আর বাকিটা নিজেদের পকেট থেকে খরচ করে স্কুলের রূপ বদল করা হয়। 


আরও পড়ুন, 'বিজেপি পরিচালিত পঞ্চায়েতে আসছে না টাকা'! কোদাল হাতে রাস্তা সংস্কারে নামলেন প্রধান


কিছুদিন আগে তিন জন মিলে স্কুলের চেহারাই বদলে দিয়েছেন, ক্লাসের দেওয়ালে ছাত্র ছাত্রীদের পড়াশুনার প্রতি আগ্রহ তৈরির জন্য তৈরি করা হয়েছে দেওয়াল চিত্র, কথাও ভারতের ইতিহাস, কোথাও বিজ্ঞান, কোথাও ছবিতে ফুটে উঠেছে প্রাজাপতির জীবন চক্র আবার কোথাও ঋতু বদলের পাঠ। যা স্কুলকে আকর্ষনীয় করে তুলেছে ছাত্র ছাত্রী ও অভিভাবকদের কাছে। কোন সরকারি সাহায্য না পেয়ে , সেই অপেক্ষাতেও না থেকে নিজেরা খবচ করে এই চালচিত্র তৈরি করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন সকলকে।


স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সিদ্ধার্থ চৌধুরি বলেন “ যখন স্কুলে যোগদান করি কোনও পরিকাঠামো ছিলনা, দুটো ক্লাস রুম ও একজন অতিথি শিক্ষক ছিলেন, তখন থেকেই ইচ্ছে ছিল স্কুলটিকে সাজিয়ে তোলার। কিন্তু আর্থিক কারণে হয়নি, বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা বাঁচিয়ে কাজ শুরু করি আর কিছুটা টাকা  আমরা তিন জন মিলে দিয়ে কাজ শেষ করি।” 
বর্তমানে স্কুলে বিজ্ঞানের শিক্ষক নেই, গ্রপডি কর্মীও ক্লাস নেন। সম মিলিয়ে সমস্যা থাকলেও সেই সমস্যা পেছনে ফেলে দুই শিক্ষক ও এক গ্রুপ ডি কর্মীর ঐকান্ত প্রচেষ্টায় এগিয়ে চলছে এই স্কুলটি।