শুভেন্দু ভট্টাচার্য, কোচবিহার : মেখলিগঞ্জের ফুলকাডাবরিতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্য়ু হল যুবকের। পরিবারের অভিযোগ, যুবককে গুলি করে খুন করেছে বিএসএফ। যদিও বিএসএফ সূত্রে দাবি, গরুপাচারে জড়িত যুবক, বাধা পেয়েই বিএসএফ-এর ওপর আক্রমণ চালিয়েছিল। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের অধীনে থাকা বিএসএফের (BSF) বিরুদ্ধে তোলাবাজির অভিযোগ তৃণমূলের (TMC)। বিএসএফের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও (Chief Minister Mamata Banerjee) । পাল্টা জবাব দিয়েছে বিজেপি। 


আর কখনও বাবার ডাকে সাড়া দেবে না ছেলে। আর কখনও ভিন রাজ্য থেকে ফিরে এসে ডাকবে না বাবা বলে। গ্রামবাসীর অস্বাভাবিক মৃত্য়ুতে কোচবিহারে ফের বিতর্কে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের অধীনে থাকা বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (Border Security Force)।  গীতালদহ, শীতলকুচির পর এবার ফুলকাডাবরি। সীমান্তে গুলি করে খুনের অভিযোগ উঠল সীমান্তরক্ষীদের বিরুদ্ধেই। আর যে ঘটনা ঘিরে ফের শিরোনামে কোচবিহার। মৃত যুবকের নাম গৌতম বর্মন (২৮)।


পরিবার সূত্রে দাবি, ভিন রাজ্য়ে কাজ করতেন গৌতম। পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভোট দেওয়ার জন্য ৭ দিন আগে বাড়ি ফিরেছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতে পাশেই তিনি মাসির বাড়িতে যান। পরে শৌচকর্মের জন্য় বাড়ি থেকে বেরোন। অভিযোগ, তখনই তাঁকে গরুপাচারকারী সন্দেহে গুলি করে খুন করে বিএসএফ। পরিবারের দাবি, গুলি করার পর দেহ নিয়ে গিয়ে ২ কিলোমিটার দূরে সীমান্তে ফেলে দেওয়া হয়। শুক্রবার সকালে দেহ উদ্ধার হওয়ার পর এলাকায় উত্তেজনা দেখা দেয়। মৃতের পরিবার অভিযোগ তোলে, গৌতমকে খুন করা হয়েছে। 


মৃত যুবকের বাবা নৃপেন বর্মনের অভিযোগ, 'আমার ছেলে দীর্ঘ ধরে বাইরে কাজ করে। ভোট দেওয়ার জন্য সাতদিন আগেই বাড়ি ফিরেছে। গতকাল রাত্রে সে মাসির বাড়িতে ঘুরতে গিয়েছে। এরপর রাত ১০টা নাগাদ তারা গুলির আওয়াজ শুনতে পাই। পরে ছেলের খোঁজ করতেই বুঝতে পারি বিএসফের গুলিতে তার মৃত্যু হয়েছে।'


এদিন সকালে ঘটনার খবর পেয়ে পৌছায় কুচলিবাড়ি থানার পুলিশ। উদ্ধার করা হয় দেহ। সংগ্রহ করে নমুনা। ঘটনা নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। বিএসএফের বিরুদ্ধে তোলাবাজির অভিযোগ করেছে তৃণমূল। এদিন এনিয়ে সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীও।


তোলাবাজির অভিযোগ অস্বীকার করে, বিএসএফ সূত্রে দাবি, গরুপাচারে জড়িত ছিলেন ওই যুবক। পাচারে বাধা পেয়ে বিএসএফ-এর ওপর আক্রমণ চালিয়েছিলেন। পাল্টা গুলিতে তাঁর মৃত্যু হয়। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হয়েছে একটি গুলির খোল।


বিএসএফের গুলিতে মৃত্যুর ঘটনা এই প্রথম নয়। গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর কোচবিহারের গীতালদহে ২৪ বছরের রাজবংশী যুবক প্রেম বর্মনকে ব্রাশ ফায়ার করে মারার অভিযোগ ওঠে বিএসএফের বিরুদ্ধে।  যা নিয়ে খোদ মুখ্যমন্ত্রী পর্যন্ত তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। কেন্দ্রের সমালোচনায় সরব হন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। BSF'এর তরফে দাবি করা হয়, গরুপাচারে বাধা দিলে, পাল্টা হামলা চালায় পাচারকারীরা। এরপরই রবার বুলেট ছোড়া হলে যুবকের মৃত্যু হয়। গত ১ এপ্রিল ফের বিতর্কে জড়ায় BSF কোচবিহারের শীতলকুচিতে জেলাল মিয়া নামে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে মারার অভিযোগ ওঠে সীমান্তরক্ষীদের বিরুদ্ধে। পরিবারের দাবি, দিল্লিতে শ্রমিকের কাজ করতেন তিনি।


আরও পড়ুন- 'গুলি চালিয়ে বাংলার মানুষ মেরেছিল সেন্ট্রাল ফোর্স' কেন্দ্রীয় বাহিনীকে আক্রমণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়


ভিনরাজ্যে কাজ করতেন ফুলকাডাবরির যুবকও। একমাত্র উপার্জনকারী ছেলেকে হারিয়ে শোকে পাথর পরিবার।