শুভেন্দু ভট্টাচার্য, কোচবিহার: দুর্নীতির অভিযোগে যে দলীয় প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা এনেছিলেন তৃণমূল সদস্যরা, তিন মাস পর সেই প্রধানকেই পঞ্চায়েতের কাণ্ডারী হিসেবে মেনে নিলেন তাঁরা। কোচবিহারের নাজিরহাট এক নম্বর গ্রামপঞ্চায়েতের ঘটনা। পঞ্চায়েত সদস্যদের সাফাই, উন্নয়নের স্বার্থেই এই সিদ্ধান্ত। বিজেপির কটাক্ষ, কোন্দল ঢাকতে চাপ দিয়ে অনাস্থা বানচাল করিয়েছে তৃণমূল নেতৃত্ব।


রেহেনা সুলতানা। কোচবিহারের দিনহাটা দুনম্বর ব্লকের নাজিরহাট ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান। এক সময় নিজেরই দলের সদস্যদের কাছে ছিলেন দুর্নীতিতে অভিযুক্ত। ৩ মাস পরেই পাল্টে গেল ছবিটা।সৌজন্যে, তৃণমূলের বিরুদ্ধে তৃণমূলের অনাস্থা এবং তা থেকে পিছিয়ে আসার সিদ্ধান্ত। 


দুর্নীতির অভিযোগে রেহেনার বিরুদ্ধে অনাস্থা আনার ৩ মাস ৪ দিন পর তাঁকেই প্রধান হিসেবে মেনে নিলেন অনাস্থা আনা সদস্যরা। নাজিরহাট ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত তৃণমূল সদস্য কল্যাণ রায় বলেছেন, এলাকার উন্নয়নের কথা মাথায় রেখে সকলে মিলে একসঙ্গে কাজ করবার সিদ্ধান্ত নেওয়া হল। উনিই প্রধান থাকছেন।


নাজিরহাট ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান রেহেনা সুলতানা বলেছেন, 
আমাদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। সেটা মিটে গিয়েছে। আজ আমরা সবাই মিলে বৈঠক করেছি সব পঞ্চায়েত সদস্যদের নিয়ে।  আমরা আগের মতো নাজিরহাট পঞ্চায়েতের উন্নয়ন করব। সেই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।


১২ আসনের নাজিরহাট ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতে তৃণমূল নিরঙ্কুশ। গত ১১ জুন প্রধান প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনেন ৯ জন তৃণমূল সদস্য। দুর্নীতির অভিযোগ এনে দিনহাটা ২ নম্বর ব্লকের বিডিওকে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। 
কিন্তু কোচবিহার জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের তরফে দলীয় প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থার তীব্র বিরোধিতা করা হয়। 


জেলা তৃণমূল সূত্রে খবর, দলের অন্দরের বিবাদ এড়াতে ১০ দিনের মধ্যে পদত্যাগ করতে বলা হয় প্রধানকে। কিন্তু তিনি পদত্যাগ করেননি। 


এই পরিস্থিতিতে কোচবিহার জেলায় দলের সাংগঠনিক রদবলের পর নতুন জেলা সভাপতি বিভিন্ন পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতিতে অনাস্থা রুখতে তদন্ত কমিটি গঠন করেন। 


বুধবার পঞ্চায়েত অফিসে প্রধান এবং তাঁর বিরোধী তৃণমূল সদস্য সহ বারোজনকে নিয়ে বৈঠক হয়। সেখানে রেহেনাকেই প্রধান পদে সর্বসম্মতি ক্রমে মেনে নেওয়া হয়। 


এই ঘটনায় তীব্র কটাক্ষ করেছে বিজেপি। কোচবিহার জেলা বিজেপির সম্পাদক রাজু রায় বলেছেন, অনাস্থা আনার মধ্যে দিয়েই প্রমাণিত হয়েছে প্রধান দুর্নীতি করেছেন। তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দল চলছে। তা ঢাকতেই তৃণমূল অনাস্থা প্রত্যাহার করাচ্ছে। সাধারণ মানুষ যা বোঝার বুঝতে পারছেন।
এরপরে তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েতে তৃণমূলের অনাস্থা আনার প্রবণতা কোচবিহারে কমে কি না, এখন সেটাই দেখার।