শিবাশিস মৌলিক, সুনীত হালদার, কলকাতা: ট্রেন বাতিলে হয়রানি। কারও চাকরিতে যোগ দিতে বিজয়ওয়াড়ায় যাওয়ার কথা ছিল। কারও রাজমিস্ত্রির কাজে কেরালায় যাওয়ার কথা ছিল। কেউ আবার তিরুপতি দর্শনে যাবেন বলে ট্রেনের টিকিট কেটেছিলেন। বালেশ্বরে ভয়াবহ দুর্ঘটনার জেরে একাধিক দুরপাল্লার ট্রেন বাতিল হওয়ায় বাড়ি ফিরতে হল তাঁদের।


হাড়হিম করা ট্রেন দুর্ঘটনা। বগির উপর উঠে গেছে বগি। উপড়ে গেছে রেললাইন, বিদ্যুতের খুঁটি। মৃত্যুপুরী বালেশ্বর। তার জেরে বাতিল একাধিক দুরপাল্লার ট্রেন। বিপাকে পড়লেন রেলযাত্রীরা। দক্ষিণ কলকাতার নেতাজি নগরের বাসিন্দা সুদীপ্তা সাহা। বিজয়ওয়াড়ায় একটি বেসরকারি স্কুলে চাকরি পেয়েছেন। ৫ জুন চাকরিতে যোগ দেওয়ার কথা ছিল। ফলকনুমা এক্সপ্রেসের টিকিট কেটেছিলেন। সময় মতো পৌঁছেও গিয়েছিলেন হাওড়া স্টেশনে। কিন্তু, ট্রেন বাতিল শুনে মাথায় হাত তরুণীর। দক্ষিণ ২৪ পরগনার পিয়ালির বাসিন্দা পেশায় রাজমিস্ত্রি ভবেশ কাঠুরিয়া। কেরালায় কাজে যাওয়ার কথা ছিল। 


তাঁর সঙ্গে যাওয়ার কথা ছিল আরও ৭ জনের। অন্ত্য়োদয় এক্সপ্রেসের টিকিট কেটেছিলেন। কিন্তু, ট্রেন বাতিল হওয়ায়, কীভাবে কাজে যাবেন কুল কিনারা পাচ্ছেন না তাঁরা। বাতিল হওয়া ট্রেনের যাত্রী ভবেশ কাঠুরিয়া বলেছেন, 'বলছে যে গাড়ি সব বন্ধ আছে, বাতিল আছে। যখন আমাদের কাছে সঠিক খবর আসবে তখন জানাব। এখন আমরা কী করব সেটা ভেবে পাচ্ছি না। হয় তো ঘরে ফিরে যেতে হবে।' 
 
পূর্ব মেদিনীপুরের কোলাঘাটের বাসিন্দা সুজিত কুমার। সপরিবারে তিরুপতি দর্শনে যাবেন বলে হামসফর এক্সপ্রেসের টিকিট কেটেছিলেন। বালেশ্বরে ভয়াবহ দুর্ঘটনার জেরে বাতিল করা হয়েছে ট্রেন। বাতিল হওয়া ট্রেনের যাত্রী সুজিত কুমার বলেন, তিরুপতি দর্শন করতে যাব। এর আগে একটা টিকিট ক্যান্সেল হয়েছিল। তারপর তৎকালে কেটেছি। অনেক পরিশ্রম করে আসার পর দেখলাম ট্রেটা বাতিল। খুবই অসুবিধা হল। আমরা পরিবার যাচ্ছিলাম। চিকিৎসা করাতে দক্ষিণ ভারতে যাওয়ার কথা ছিল।একাধিক দুরপাল্লার ট্রেন বাতিল হওয়ায় দুশ্চিন্তায় তাঁরা এবং তাঁদের পরিজনরাও।   


কেন ঘটল এই দুর্ঘটনা ? দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য কবচের সুবিধা কি ছিল না এই লাইনে ? শনিবার উদ্ধারকাজ শেষে বালেশ্বরের রেলওয়ে মুখপাত্র অমিতাভ শর্মা জানালেন, 'উদ্ধারকাজ শেষ হয়েছে, এখন আমরা পুনরুদ্ধারের কাজ শুরু করছি। দুটি ট্রেনের মধ্যে সংঘর্ষ প্রতিরোধকাারী কবচের সুবিধে এই রুটে উপলব্ধ ছিল না '। তিনি আরও জানান, বর্তমানে এই কবচের সুবিধা হাওড়া - দিল্লি ও দিল্লি - মুম্বই লাইনে উপলব্ধ রয়েছে। সব লাইনে এই কবচের সুবিধে নেই। 


গত ২৩ শে মার্চ , রেলমন্ত্রক কবচ নামক দেশীয় স্বয়ংক্রিয় ট্রেন সুরক্ষা (ATP) ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ঘোষণা করে। এই পদক্ষেপ বড় দুর্ঘটনা এড়ানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। দেশের ৩ হাজার কিলোমিটার রেলপথে ধাপে ধাপে ওই ব্যবস্থা চালু  করা হবে। কবচ পরিষেবা থাকলে দুটি ট্রেনের মুখোমুখ সংঘর্ষ যেমন এড়ানো সম্ভব, তেমন পিছন থেকে ধাক্কা লাগলে, তাও সামলে দেওয়া সম্ভব। Signal Passing At Danger (SPAD) এড়াতে সাহায্য করতে পারে এই ব্যবস্থা। সেই সঙ্গে ঘন কুয়াশার সময় দুর্ঘটনা এড়াতে সাহায্য করবে এই বন্দোবস্ত। ট্রেনের গতি নিয়ন্ত্রণ করতে ও আপৎকালীন ব্রেক কষতেও সাহায্য করে কবচ পরিষেবা। কিন্তু এই রুটে এই পরিষেবা চালুই হয়নি। 


আরও পড়ুন, সাঁতারে কী কী রোগ থেকে মুক্তি ? কী বলছেন চিকিৎসক ?


আরও পড়ুন, জানেন কি রান্নাঘরের এই মশলা জীবন বদলে দিতে পারে ?


কয়েক মাস আগে প্রসঙ্গক্রমে রেলমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, কবচ সুবিধে লাগু করার জন্য রেলপথের আধুনিকীকরণ হচ্ছে। কিন্তু রেলওয়ে মুখপাত্রর থেকে জানা গেল, করমন্ডল এক্সপ্রেস যে রুটে ছোটে, সেখানে কবচের ব্যবস্থা নেই। এখন কবচ থাকলে কতটা সুবিধে হত দুর্ঘটনা এড়ানোর ক্ষেত্রে, সেই প্রশ্নই উঠছে মানুষের মনে।