আবির দত্ত, কলকাতা : এ যেন মৃত্যুকে সামনাসামনি দেখে ফিরে আসা। একেই বোধহয় বলে পুনর্জন্ম। একেই বোধ হয় বলে, রাখে হরি মারে কে ! ছোট্ট মেয়েকে নিয়ে করমণ্ডল এক্সপ্রেসের A1 বগিতে থাকা মহিলা চোখের সামনে দেখলেন মৃত্যুর ভয়াবহতা।
১১ বছরের মেয়ের জন্মদিন পালন করে চেন্নাইয়ে স্বামীর কাছে ফিরছিলেন সায়ন্তনী ঘোষ। বালেশ্বরে ভয়াবহ অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হলেন পিকনিক গার্ডেনের বাসিন্দা মা-মেয়ে। একবার নয়, দু’-দু’বার ধাক্কা। সেই সঙ্গে বিকট শব্দ।
সময়টা ছিল সন্ধে। তাই বসেছিলেন সিটেই। হঠাতই ভয়ঙ্কর শব্দ , সেই সঙ্গে প্রবল ধাক্কার অনুভূতি। এক মুহূর্তে সিট থেকে ছিটকে যাওয়া। সেই রেশ মিলোতে না মিলোতেই আবার ধাক্কা। এবার কামরা হেলে পড়ল বাঁদিকে। সায়ন্তনীর কথায় 'বাইরে তখন দেখছি শুধু আগুনের ফুলকি, দেখলাম সামনে কামরার বাথরুম প্রবল ধাক্কায় ঢুকে এল আমাদের কামরায়। বুঝলাম ট্রেন ডিরেইলড হয়ে গিয়েছে। কী ভাগ্যিস আমাদের কামরাটা পুরো উল্টে যায়নি। একদিকে হেলে পড়ে রইল। কোনও ক্রমে মেয়েকে আঁকড়ে ধরলাম। বাইরে থেকে ভেসে আসছে প্রবল চিৎকার। কেউ এসে জানলা ধাক্কা দিচ্ছে। বুঝতে পারছিলাম না কীভাবে বের হব। যদি উপরের বার্থে শুয়ে পড়তাম, তাহলে বেঁচে ফিরতাম কি না জানি না। '
পাশের কামরার শৌচাগার ভেঙে ঢুকে যায় তাঁদের কামরায়। মেয়েকে আঁকড়ে কীভাবে ফিরেছেন, তা ভাবলেই শিউরে উঠছেন এই মহিলা।
মৃতদেহের নিচে চাপা পড়ে ছিলেন বলেই হয়তো প্রাণে বেঁচেছেন ক্যানিংয়ের পারুল !
অন্যদিকে, চারজনের মৃতদেহের নিচে চাপা পড়ে কার্যত বেঁচে গেলেন ক্যানিংয়ের এক মহিলা।
ত্রস্ত পারুল বিবি বলছেন, মৃতদেহের নিচে চাপা পড়ে ছিলেন বলেই হয়তো প্রাণে বেঁচেছেন। ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে শুয়ে এমনইটাই মনে হচ্ছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসন্তীর নেবুখালির বাসিন্দা এক মহিলা।
স্বামী ব্যাঙ্গালোরে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করেন। সেখানে কাজ করেন খুড়শ্বশুর শহিদুল ইসলাম মোল্লাও। করমণ্ডল এক্সপ্রেসে চড়ে খুড়শ্বশুরের সঙ্গে ব্যাঙ্গালোরে যাচ্ছিলেন পারুল। দুর্ঘটনার পর গাড়ি ভাড়া করে এখানে ফেরেন। শ্বশুর-বৌমা দু’জনেই ভর্তি রয়েছেন হাসপাতালে। গোসাবা থেকে কাজের খোঁজে চেন্নাই পাড়ি দিয়েছিলেন ১২ জন পরিযায়ী শ্রমিক। এখনও কারও খোঁজ মেলেনি।
দুর্ঘটনাগ্রস্ত করমণ্ডল এক্সপ্রেসের কামরা যেন দেশলাইয়ের বাক্স। ধাক্কার অভিঘাতে রেললাইন ভেঙে ঢুকে গেছে কামরার ভিতর। ভেঙেচুরে, দুমড়ে-মুচড়ে গিয়েছে গোটা কামরা। এর মধ্যেও যাঁরা প্রাণে বেঁচেছেন, তাঁরা নিজেদের ভাগ্যবানই মনে করছেন।