কলকাতা: 'ট্রেন দুর্ঘটনা', নামকরণে পঞ্চায়েত ভোট ঘোষণার দিনেই কবিতা লিখে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সদ্য গত সপ্তাহেই হয়ে গিয়েছে ওড়িশায় ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা। আর এবার সেই বিষয়ই এসে পড়ল মুখ্যমন্ত্রীর কবিতায়। স্বাভাবিকভাবেই ভোটযুদ্ধের আগে কবিতায় প্রশ্ন তুলে রাখলেন রাজ্য়ের মুখ্যমন্ত্রী।


 '..প্রশ্ন করো, কী করেই বা এল এটা ? নের্তৃত্ব নিতে হবে তোমাকেই', না শুধু মমতাই নন, রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যও কবিতা প্রেমী ছিলেন বলেই পরিচিত। তাঁরও বক্তব্যে লেখাতেও বারাবার উঠে এসেছে বড় প্রশ্ন চিহ্ন। ক্ষুরধার আবহ। তবে দীর্ঘ ৩৪ বছরের বাম শাসনের পর, তিন তিনবার যিনি ক্ষমতায় এসেছেন বঙ্গে, এবার তাঁর লেখাতেও উঠে এল একটা বড় প্রশ্ন। তিনি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়। ওড়িশায় ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনার পর তৃণমূল সুপ্রিমো প্রশ্ন তুলে লিখেছেন, 'সমুদ্র-পাহাড়, পরিবার..আমরা একটু ভাবলাম কি ?।' 


তবে মুখ্যমন্ত্রী এর আগেও কবিতা লিখেছেন। 'এপাং-ওপাং-ঝপাং...'। যা নিয়ে বিস্তর জলঘোলা হয়েছে। নাম না করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের  কবিতা লেখার ধরন নিয়ে মন্তব্যও করেছিলেন  কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court) বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় (Justice Abhijit Ganguly) । সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত গ্রন্থাগারের হাল নিয়ে কথা বলতে গিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছিলেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর লেখা কবিতা উল্লেখ করে বলেছিলেন, 'এই অখাদ্য জিনিসগুলি গ্রন্থাগারে রাখবেন না।' যদিও তারপর গঙ্গা দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে। কবিতায় কটাক্ষ এসেছে বিজেপির তরফেও। নাম না করে কবিতায় শব্দবাণ ছুড়েছেন রুদ্রণীলও। তারপরেও কি বদলে গিয়েছে কবিতার সমীকরণ ? বরং পঞ্চায়েত ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণার দিনেই মমতার পোস্ট করা 'ট্রেন দুর্ঘটনা' কবিতা রীতিমত তাৎপর্যপূর্ণ বলেই চাপানউতোর রাজনৈতিক মহলে।


প্রসঙ্গত, রেল দুর্ঘটনার পর মৃতদেহের সংখ্যা বেড়েই চলছিল। তারই মধ্যে চলছে মৃতদের ভিড়ে প্রিয়জনকে শনাক্তকরণ করছিল একের পর এক পরিবার। একদিকে একদল মানুষ উপার্জনের আশায় পাড়ি দিয়েছিলেন ভিনরাজ্যে। কেউবা ভ্রমণে। কিন্তু শেষঅবধি ট্রেনযাত্রায় জীবনের যবনিকা পতন। একের পর এক মর্মান্তিক মৃত্যু। যা সত্যিই কেউ ভাবেনি। এদিন মমতা বলেন, '..এখনও ভাসছে ঘ্রাণে দুর্গন্ধ, লাশকাটা ঘরে ওরা ঘুমোচ্ছে।' 


বলা হয়, কথার থেকে দামী কিছু নেই। শব্দ, 'ব্রক্ষ্ম'। চিরতরে চলে যাওয়ার পরেও শুধু কথাটাই রয়ে যায়। বাংলায় একাধিক কবি যেমন প্রেম, প্রকৃতি, একেশ্ববাদ নিয়ে লিখেছেন তেমনই কবিতার ধারালো শব্দে এসেছে রাজনৈতিক প্রসঙ্গও। শঙ্খ ঘোষ থেকে শুরু করে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতাতেও এক নব অধ্যায় দেখেছে বাংলা। তবে সাম্প্রতিককালে ওড়িশার ট্রেন দুর্ঘটনার পর ইতিমধ্যেই বিতর্কের ঝড় বয়ে গিয়েছে সারা দেশেই। যার আঁচ বয়ে গিয়েছে কলকাতাতেও। আর এবার সেই আবহেই ফের কবিতা লিখলেন মমতা। 


তবে এবারের কবিতা আগের কবিতাগুলি থেকে পুরো আলাদা। 'ট্রেন দুর্ঘটনা', নাম দিয়ে মমতা লিখেছেন,' এক অজানা দীর্ঘশ্বাস, ব্যথা-বেদনায় শোকাতুর নাভিশ্বাস।' সম্প্রতি নবান্ন থেকে সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ' আমি ভেবেছিলাম এই সময়টা রাজনৈতিক কথা বলব না।হঠাৎ আমার কাছে একটা ম্যাসেজ এল। তাতে তাঁরা একটা লিস্ট দিয়েছে আমার সময় কত মারা গেছে রেল দুর্ঘটনায়  আমি যে আধুনিক করে দিয়ে এসেছিলাম রেলকে তার জন্যই দুর্ঘটনা কমেছে। যে তথ্য ওরা দিয়েছে ওটা ভুল  ইনফরমেশন। আমি তো এখন রেলমন্ত্রকে নেই।'