শান্তনু নস্কর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা : ওড়িশার বালেশ্বরে দুর্ঘটনার কবলে শালিমার থেকে চেন্নাইগামী করমণ্ডল এক্সপ্রেস, হাওড়া-যশোবন্তপুর হামসফর এক্সপ্রেস এবং একটি মালগাড়ি। ভয়াবহ দুর্ঘটনায় এ পর্যন্ত ২৩৮ জনের মৃত্যু হয়েছে, জানাল রেল। আহতর সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৬০০। এরই মধ্যে চারজনের মৃতদেহের নিচে চাপা পড়ে কার্যত বেঁচে গেলেন ক্যানিংয়ের এক মহিলা। 


মৃতদেহের নিচে চাপা পড়ে ছিলেন বলেই হয়তো প্রাণে বেঁচেছেন !


ত্রস্ত  পারুল বিবি বলছেন, মৃতদেহের নিচে চাপা পড়ে ছিলেন বলেই হয়তো প্রাণে বেঁচেছেন। ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে শুয়ে এমনইটাই মনে হচ্ছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসন্তীর নেবুখালির বাসিন্দা এক মহিলা।


স্বামী ব্যাঙ্গালোরে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করেন। সেখানে কাজ করেন খুড়শ্বশুর শহিদুল ইসলাম মোল্লাও। করমণ্ডল এক্সপ্রেসে চড়ে খুড়শ্বশুরের সঙ্গে ব্যাঙ্গালোরে যাচ্ছিলেন পারুল। দুর্ঘটনার পর গাড়ি ভাড়া করে এখানে ফেরেন। শ্বশুর-বৌমা দু’জনেই ভর্তি রয়েছেন হাসপাতালে। গোসাবা থেকে কাজের খোঁজে চেন্নাই পাড়ি দিয়েছিলেন ১২ জন পরিযায়ী শ্রমিক। এখনও কারও খোঁজ মেলেনি। 


মেয়েকে আঁকড়ে প্রাণ বাঁচলেন মা !


১১ বছরের মেয়ের জন্মদিন পালন করে চেন্নাইয়ে স্বামীর কাছে ফিরছিলেন। বালেশ্বরে ভয়াবহ অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হলেন পিকনিক গার্ডেনের বাসিন্দা মা-মেয়ে। একবার নয়, দু’-দু’বার ধাক্কা। পাশের কামরার শৌচাগার ভেঙে ঢুকে যায় তাঁদের কামরায়। মেয়েকে আঁকড়ে কীভাবে ফিরেছেন, তা ভাবলেই শিউরে উঠছেন সেই মহিলা।  


ওড়িশার বালেশ্বর যেন মৃত্যুপুরী


শুক্রবার দুর্ঘটনার কবলে পড়ে শালিমার থেকে চেন্নাইগামী করমণ্ডল এক্সপ্রেস, হাওড়াগামী যশোবন্তপুর হামসফর এক্সপ্রেস এবং একটি মালগাড়ি। ভয়াবহ দুর্ঘটনায় এ পর্যন্ত ২৩৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহতর সংখ্যা প্রায় সাড়ে ছ’শো। মৃত ও আহতর সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা। সকালে ঘটনাস্থলে যান রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব ও ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক। 


উদ্ধারকাজে নেমেছে বায়ুসেনা, এনডিআরএফের ৯টি টিম। হেলিকপ্টারের সাহায্যে চলছে উদ্ধারকাজ। ট্রেনের দরজা ভেঙে, গ্যাস কাটারের সাহায্যে উদ্ধারকাজ চালানো হচ্ছে। ড্রোন উড়িয়ে, স্নিফার ডগ এনে চলছে তল্লাশি। উদ্ধারকাজ জোরদার করতে মালদা ডিভিশনের ২২৪ জন আরপিএফ জওয়ানকে দুর্ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে। গতকাল ৩টি ট্রেনের সংঘর্ষে লাইনচ্যুত হয় করমণ্ডলের ১৫টি ও হাওড়া-যশোবন্তপুর হামসফর এক্সপ্রেসের ৩-৪টি কামরা। দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেনের কামরায় এখনও অনেক যাত্রী আটকে রয়েছেন।ফলে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা। অক্ষত কামরাগুলিতেও স্নিফার ডগ নিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছে এনডিআরএফ। রাতেই ঘটনাস্থলে গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করে ওড়িশা পুলিশের ফরেন্সিক দল। রাজ্য সরকারের তরফে রাতে দুর্ঘটনাস্থলে যান মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া ও সাংসদ দোলা সেন।