সৌভিক মজুমদার ও দীপক ঘোষ, কলকাতা: এসএসসির (SSC) গ্রুপ সি ও ডি (Group C and D) কর্মী নিয়োগে ব্যাপক দুর্নীতির উল্লেখ করা হয়েছিল অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি রঞ্জিতকুমার বাগ কমিটির রিপোর্টে (Bag Committee Report)। তার ভিত্তিতে এসএসসির নিয়োগ দুর্নীতির ৭টি মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ বহাল রাখল ডিভিশন বেঞ্চ। হাইকোর্টের নির্দেশে সিবিআইয়ের কাছে হাজিরা দিতে হল প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী থেকে এসএসসির উপদেষ্টা কমিটির ৫ সদস্যকে।
কমিশনে বেনিয়ম!
একদিকে বেকারত্বের জ্বালা, বয়স চলে যাচ্ছে, অথচ চাকরি মিলছে না! লাগাতার আন্দোলন! অন্যদিকে পেঁয়াজের খোসার মতো স্কুল সার্ভিস কমিশনের নিয়োগে পরতে পরতে বেনিয়ম প্রকাশ্যে আসছে!
বুধবার সেই সংক্রান্ত ৭টি মামলাতেই CBI তদন্ত বহাল রাখার নির্দেশ দিল ডিভিশন বেঞ্চ। CBI-এর কাছে হাজিরা দিতে হল প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী ও তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে।
আর SSC-এর নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে যত জলঘোলা হচ্ছে, ততই আরও বেশি করে সামনে উঠে আসছে, হাইকোর্ট গঠিত অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি রঞ্জিতকুমার বাগ কমিটির রিপোর্ট। যার ছত্রে ছত্রে দুর্নীতি-বেনিয়মের ছবি।
গত ১১ এপ্রিল, বাগ কমিটি গ্রুপ D নিয়োগের মামলায় ডিভিশন বেঞ্চে প্রথম রিপোর্ট পেশ করে। রিপোর্টে বলা হয়, দুর্নীতিতে সরাসরি যুক্ত SSC-র প্রাক্তন উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ সিন্হা এবং মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়। তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের অনুমতিতে যুগ্মসচিব যে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করেছিল তা বেআইনি।
হাইকোর্ট নিযুক্ত অনুসন্ধান কমিটির রিপোর্টে, ৬০৯টি ভুয়ো সুপারিশপত্র উল্লেখ করা হয়। দুর্নীতির প্রসঙ্গে রিপোর্টে বলা হয়, স্কুল সার্ভিস কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান সুবীরেশ ভট্টাচার্য স্কুল সার্ভিস কমিশনের আরেক প্রাক্তন চেয়ারম্যান শর্মিলা মিত্র SSC-র আধিকারিক মহুয়া বিশ্বাস, শুভজিৎ চট্টোপাধ্যায় ও শেখ সিরাজউদ্দিনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত করা উচিত।
আরও পড়ুন: TMC: প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতার চাকরি দেওয়ার নামে ৮৩ লক্ষ হাতানোর অভিযোগ, কাঠগড়ায় তৃণমূল নেতা
অনুসন্ধান কমিটির রিপোর্টে স্কুল সার্ভিস কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান সৌমিত্র সরকার, স্কুল সার্ভিস কমিশনের প্রাক্তন সচিব অশোককুমার সাহা, SSC-র প্রোগ্রাম অফিসার সমরজিৎ আচার্য, SSC-র প্রাক্তন উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ সিন্হা-র নাম উঠে আসে।
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর মন্তব্য, 'মহামান্য বিচারপতি রঞ্জিত বাগের রিপোর্ট যে পাবলিক ডোমেনে এসেছে, তাতে সবার অভিযোগে সিলমোহর পড়ে গেছে।'
তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, 'আইন আইনের পথে চলবে, তদন্ত তদন্তের পথে চলবে। আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে আদালত যাঁদের নাম উচ্চারণ করছেন, তাঁদের যা যা বক্তব্য, বা তাঁদের যা যা আইনি পদক্ষেপ, সেটা করার পূর্ণ স্বাধীনতা তাদের রয়েছে।'
গত ১৩ মে, গ্রুপ C মামলাতে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি রঞ্জিৎকুমার বাগ কমিটির রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পরও নিয়ম ভেঙে ৩৮১ জনকে চাকরির সুপারিশপত্র দেওয়া হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে ২২২ জন তো লিখিত পরীক্ষায় পাসই করেননি। প্যানেল বা ওয়েটিং লিস্টেও নাম ছিল না। অথচ তাঁদের সুপারিশপত্র দেওয়া হয়। সই স্ক্যান করে এসএসসির অফিস থেকেই দেওয়া হয়েছিল সেই সব সুপারিশপত্র। তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের অনুমোদনের ভিত্তিতে SSC-র যে উপদেষ্টা কমিটি তৈরি হয়েছিল, তাকেও বেআইনি বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়।
সব মিলিয়ে SSC-নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে বিচারপতি বাগ কমিটির রিপোর্ট ঝড় তুলেছা রাজ্যজুড়ে।