কলকাতা: করোনা (COVID-19) থাবা বসিয়েছে প্রশাসনের অন্দরেও। অথচ অসতর্কতার ছবি ধরা পড়ছে সর্বত্র। তাতে এ বার কার্যত হাতজোড় বিধিনিষেধ (COVID Rules) মেনে চলতে মানুষকে অনুরোধ করতে দেখা গেল মুখ্যমন্ত্রীর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Mamata Banerjee)।তাঁর যুক্তি, এই মুহূর্তে রোগের প্রভাব মারাত্মক না হলেও, দ্রুত গতিতে তা ছড়িয়ে পড়ছে। এক জন সংক্রমিত হলে, মুহূর্তের মধ্যে তা ছড়িয়ে পড়ছে ১০-১৫ জনের মধ্যে। তাই নিজেদের স্বার্থেই মানুষকে সচেতন হতে হবে।


রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ে বৃহস্পতিবার নবান্ন (Nabanna) থেকে সাংবাদিক বৈঠক করেন মমতা। সেখানে তিনি বলেন, ‘‘রোগের প্রভাব মারাত্মক না হলেও, দ্রুত ছডি়য়ে পড়ছে ভাইরাস। আমি এমনও দেখেছি যে, ১০ জন মানুষের প্রত্যেকেই কোভিড পজিটিভ। বাডি়তে এক জনের হলে তা বাকিদের মধ্যে তো ছড়াচ্ছেই, পাড়া-প্রতিবেশিদেরও সংক্রমিত করছে। তাই সার্বিক সাবধান হওয়া অত্যন্ত জরুরি।’’


একটু অসুস্থ হলেই করোনা নয়, তবে একটানা জ্বর থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত বলে জানান মমতা। তাঁর কথায়, ‘‘কোভিড রোগীদের জন্য ৩০০০ শয্যা প্রস্তুত রেখেছি আমরা। কিন্তু একটুতেই হাসপাতালে ছোটার দরকার নেই। পর পর তিন জ্বর থাকলে ডাক্তার দেখান। কিন্তু জ্বর মানেই করোনা নয়, ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়াও হতে পারে। ভয় পাবেন না। ৭ দিন নিভৃতবাসে থাকুন। ভাল খাওয়া-দাওয়া করুন। সুস্থ থাকার দায় নিজেদেরই।’’


মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, বর্তমানে করোনায় মৃত্যুর হার অনেক কম। তিন থেকে সর্বাধিক ৭ দিন পর্যন্ত জ্বর থাকছে। কেন্দ্রের তরফে ৭ দিন পর্যন্ত কোয়রান্টানিরে সুপারিশ এসেছে। তার পর কাজে যোগ দিতে পারবেন সাধারণ মানুষ।


আরও পড়ুন: Covid-19 : প্রচারের পরেও নেই সচেতনতা, মাইক্রো কনটেনমেন্ট জোনে বিনা মাস্কেই ঘোরাফেরা ; শিকেয় কোভিড-বিধি


বড়দিন-বর্ষবরণের পর থেকে সংক্রমণ বৃদ্ধি পেতে পেতে এই মুহূর্তে রাজ্যে দৈনিক সংক্রমণ ১৪ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে। পুলিশ-প্রশাসনের নজরদারি সত্ত্বেও অসতর্কতার ছবি উঠে আসছে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। তাই মমতার সাফ যুক্তি, মানুষ সচেতন না হলে, প্রশাসনের সাধ্য নেই তাঁদের সচেতন করে তোলার। মমতার বক্তব্য, ‘‘প্রশাসন জোর করে, জরিমানা করে বা গ্রেফতার করে কাউকে মাস্ক পরাতে পারে না। নিজেকে সচেতন হতে হবে। হাতজোড় করে বলছি, মাস্ক পরুন। হাতে গ্লাভস পরে থাকুন। গ্লাভস না পরলে স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন। চুল থেকেও ছড়াতে পারে সংক্রমণ। বাইরে বেরোলে ছেলেরা টুপি পরুন। কাপড় জড়িয়ে মাথা ঢেকে রাখুন মেয়েরা।’’


বাংলা-সহ গোটা দেশে যে ভাবে কোভিডের প্রকোপ বাড়ছে, তাতে করোনার তৃতীয় ঢেউ নেমে এসেছে বলে মানছেন চিকিৎসকেরা। এমন পরিস্থিতিতে গত ৩ জানুয়ারি থেকেই রাজ্যে আংশিক বিধিনিষেধ চালু হয়েছে। ভিড় এড়াতে লোকাল ট্রেনের সময়সীমাও কমিয়ে সন্ধে ৭টা পর্যন্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু তাতে চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দেওয়ায় এবং বিক্ষোভের মুখে পড়ে শেষ পর্যন্ত রাত ১০টা পর্যন্তই লোকাল ট্রেন চালু রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।


তা নিয়েও সমালোচনার মুখে পড়তে হচ্ছে রাজ্য প্রশাসনকে। যে ভাবে বাসে ট্রেনে-ভিড় উপচে পড়ছে। তাতে সংক্রমণ ঠেকানোর সাধ্য নেই বলে সমালোচনা শুরু হয়েছে। তবে এতে মমতার বক্তব্য, ‘‘আমরা এগোলেও দোষ, পিছোলেও দোষ। ট্রেন বন্ধ করলে বলবেন, কাজে আসতে পারছেন না। চালু করলে বলবেন, গাদাগাদি করে মানুষ আসছেন।’’ তবে পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, ট্রেন বন্ধ হলে মানুষের জীবন-জীবিকা সঙ্কটের মধ্যে পড়বে বলে মেনে নেন মমতা। তাঁর যুক্তি, গত তিন বছর ধরে এই চলছে। কত দিন আর জীবন-জীবিকা বন্ধ করে থাকবেন মানুষ!


করোনা হানা দিয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতেও। তাঁর দুই গাড়িচালকও করোনায় সংক্রমিত। পুলিশ-প্রশাসনের একাধিক কর্তা-ব্যক্তিও আক্রান্ত। এমন পরিস্থিতিতে শুক্রবার নবান্নে না গিয়ে, কালীঘাটের বাড়ি থেকেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করবেন মমতা। একান্ত প্রয়োজন না থাকলে, সাধারণ মানুষকেও বাডডি থেকে কাজ সারার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।


এর আগে, মমতারও কোভিড হয়েছে বলে খবড় ছড়িয়েছিল। সেই খবর যে ভুল, তা আগেই জানা গিয়েছিল। এ দিন মমতাও জানান, সারা বিশ্বের করোনা হচ্ছে। তাই লুকোছাপার কোনও ব্যাপার নেই। তিনি আক্রান্ত হলে, সকলেই জানতে পারবেন।