প্রকাশ সিন্হা, বীরভূম: গরু পাচার মামলার তদন্তে নেমে সিউড়ির সমবায় ব্য়াঙ্কে গ্রামবাসীদের নামে ভুয়ো অ্য়াকাউন্টের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে। সেই তদন্তেই বেরিয়ে আসছে আরও চমকপ্রদ তথ্য। 


সেই অ্যাকাউন্টগুলি খুলতে ব্যবহার করা হয়েছিল অন্যদের ছবি। কিন্তু সেই ব্যক্তিরা কারা? তাঁদের অজান্তেই কি ছবি ব্য়বহার করা হয়েছিল? নাকি এখানেও রয়েছে কোনও লেনদেনের খেলা? সেই বিষয়ে খোলসা করতে এবার সেই ব্য়ক্তিদের চিহ্নিত করার চেষ্টা হচ্ছে বলে সিবিআই সূত্রে দাবি।


গ্রামবাসীদের জিজ্ঞাসাবাদ করছিল সিবিআই।  তখন নথির ছবি দেখিয়ে জিজ্ঞেস করা হচ্ছিল এটা তাঁদের ছবি কিনা। তাঁরা না করেন। নথির সই দেখিয়েও জানতে চাওয়া হয়, তখনও তাঁরা দাবি করেছিলেন এটা তাঁদের সই নয়।     


সিবিআইয়ের প্রশ্ন:
সিউড়ির সমবায় ব্য়াঙ্কে শয়ে শয়ে বেনামি অ্য়াকাউন্ট কেন খোলা হয়েছিল? এই অ্য়াকাউন্টের মাধ্য়মে কি গরু পাচারের কালো টাকা সাদা হয়েছিল? গ্রামবাসীদের নামে অ্য়াকাউন্ট খোলা হয়েছিল কীভাবে? কাদের ছবি ব্য়বহার করা হয়েছিল? 


এবার এনিয়ে আরও গভীরে গিয়ে তদন্ত শুরু করলেন গোয়েন্দারা। সিবিআই সূত্রে দাবি, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, যার নামে অ্য়াকাউন্ট, তার সই জাল করা হলেও ছবি ব্য়বহার করা হয়েছে অন্য় কারও।  গোয়েন্দারা জানতে চাইছেন, এই ছবি কাদের? এই ঘটনার সঙ্গে কি তাঁদের যোগ রয়েছে? তাঁদের অজান্তে কি ছবি ব্য়বহার করা হয়েছে? নাকি এক্ষেত্রেও টাকার লেনদেন হয়েছে? সিবিআই সূত্রে দাবি, যাদের ছবি ব্য়বহার করা হয়েছে, তাদের চিহ্নিত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।


এই ঘটনায় একে অপরের দিকে আঙুল তুলেছে শাসক ও বিরোধীরা। গরু পাচার মামলায় অনুব্রত মণ্ডল এখন জেলে। তাঁরই জেলা বীরভূমের সিউড়িতে, এই সমবায় ব্য়াঙ্কে, জানুয়ারির শুরুতে। ১৭৭টি বেনামি অ্য়াকাউন্টের হদিশ পায় সিবিআই। 


প্রায় আড়াই সপ্তাহ পর, বুধবার এই সংক্রান্ত সূত্র খুঁজতে বীরভূমের প্রত্য়ন্ত গ্রামে পৌঁছোয় সিবিআই। একটি ক্লাবের সামনে, টেবিল-চেয়ার পেতে কার্যত অস্থায়ী ক্য়াম্প তৈরি করেই, শুরু হয় তদন্ত। সেখানেও উঠে আসে চমকপ্রদ তথ্য, যিনি গ্রামবাসী তিনি জানেননই না যে তাঁর নামে কোনও ব্যাঙ্কে কী অ্যাকাউন্ট রয়েছে। একজনকে ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করা হয় ব্যাঙ্ক অ্য়াকাউন্ট আছে? তখন তিনি বলেন, 'ব্যাঙ্ক অ্য়াকাউন্ট একটা ইউকোতে আছে, আর বন্ধনে আছে।' তখন তদন্তকারী অফিসার জানান, কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কে নেই? তখন গ্রামবাসী বলেন, নেই। জিজ্ঞেস করা হয় কাউকে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য নথি দেওয়া হয়েছে? তখন ওই গ্রামবাসী বলেন, 'নথি নিয়েছে, নথি হয়তো পার্টির ছেলেরা নিয়েছে, কোনও কাজের জন্য।'


ঘুরপথে টাকা: 
সিবিআই সূত্রে দাবি, সমবায় ব্য়াঙ্কের বেনামি অ্য়াকাউন্ট ব্য়বহার করে গরু পাচারের কালো টাকা সাদা করা হয়েছে। কিন্তু, সেটা কীভাবে? গোয়েন্দা সূত্রে দাবি, গরু পাচারের কালো টাকা দিয়ে প্রথমে কমদামে ধান কেনা হত। তারপর তা চড়া দামে FCI'এর গুদামে পাঠানো হত। খাদ্য় দফতর থেকে টাকা নেওয়ার জন্য় গ্রামবাসীদের অজান্তেই তাদের নামে অ্য়াকাউন্ট খোলা হত। তারপর সেই অ্য়াকাউন্টে টাকা ঢুকত।  এভাবেই কালো টাকা সাদা হত বলে সিবিআই সূত্রে দাবি! বুধবার গ্রামবাসীদেরও এই সংক্রান্ত প্রশ্ন করা হয়। 


আরও পড়ুন: প্রতীকী হাতেখড়ি নিয়ে বিদ্রুপ বিজেপি-র, উল্টো অবস্থান তথাগতর, মুগ্ধ হলেন রাজভবনের অনুষ্ঠান দেখে!