কলকাতা: রামনবমীর (Ram Navami Violence) মিছিল ঘিরে হিংসা ছড়িয়েছে জেলায় জেলায়। হনুমান জয়ন্তী নিয়ে তাই উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। সেই আবহে শান্তি বজায় রাখতে রাজ্য সরকারকে, কেন্দ্রের কাছে আধা সামরিক বাহিনী চাওয়ার নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta High Court)।  এই ব্যাপারে অবিলম্বে সাহায্য করতে বলা হয়েছে কেন্দ্রকেও। আদালতের এই বেনজির সিদ্ধান্ত ঘিরে রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়েছে।


জোড়াফুল এবং পদ্মশিবির বাংলাকে ধ্বংস করতে উঠেপড়ে লেগেছে বলে দাবি বাম-কংগ্রেসের


বুধবার কলকাতা হাইকোর্টের এই নির্দেশের পরই এবিপি আনন্দে মুখ খোলেন সব দলের প্রতিনিধিরা। তৃণমূল এবং বিজেপি এ নিয়ে পরস্পরকে দোষারোপ করলেও, গোটা পরিস্থিতির জন্য তাদেরই আবার কাঠগড়ায় তুলেছে সিপিএম এবং কংগ্রেস। জোড়াফুল এবং পদ্মশিবির বাংলাকে ধ্বংস করতে উঠেপড়ে লেগেছে বলে দাবি বাম-কংগ্রেসের।


আদালতের নির্দেশ নিয়ে প্রতিক্রিয়া চাইলে, এ দিন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরী বলেন, "হাইকোর্টের এই নির্দেশের পর একটা কথা সহজেই অনুমান করা যায় যে, পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ মানুষ যেমন প্রশাসনের উপর বিশ্বাস করেন না, তেমনই রাজ্য প্রশাসনের উপর বিশ্বাস নেই বিচারব্যস্থারও। প্রশাসন যে অযোগ্য, অদক্ষ, আরও একবার তা প্রমাণিত হল। শান্তি, সম্প্রীতি, সৌহার্দ্যের বাংলায় বিশ্বাস করি আমরা। বাংলায় সাম্প্রদায়িক হানাহানি বরদাস্ত করব না। তৃণমূল এবং বিজেপি, উভয় দলকেই বলব, রাজনীতি করা থেকে বিরত থাকুন। নির্বাচনী লাভ-ক্ষতির অঙ্ক থেকে বিরত থাকলে বাংলায় শান্তি ফেরানো সম্ভব হবে বলে বিশ্বাস আমার।"


সিপিএম-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, "বাংলায় এখন কেন্দ্রীয় বাহিনী চাইতে হবে! বুঝতে পারছেন কী হাল? রাজ্য প্রশাসনের এমন হাল করেছেন মুখ্যমন্ত্রী যে তাঁর উপর কেউ ভরসা করতে পারছেন না। কোর্টকে বলতে হল যে, রাজ্য চাইলে যেন কেন্দ্রীয় বাহিনী দেওয়া হয়। আর কোনও কাজ নেই দেশে? লোকের হাজার বিপদ। খাওয়া জুটছে না, কাজ জুটছে না, জিনিসের দাম বাড়ছে। তার মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী দিঘায় জগন্নাথ মন্দির নিয়ে পড়ে রয়েছেন, রামনবমী, হনুমান জয়ন্তী চলছে। গোটা বাংলাকে ধ্বংস করতে নেমেছে তৃণমূল এবং বিজেপি।"


আরও পড়ুন: Rishra Violence : 'রাজ্য পুলিশ না পারলে প্যারামিলিটারির সাহায্য নিন' হাওড়া-রিষড়া অশান্তি প্রসঙ্গে জানাল উদ্বিগ্ন হাইকোর্ট


কেন্দ্রীয় বাহিনী নামানো নিয়ে যদিও বিজেপি-র উপরই দায় চাপিয়েছে তৃণমূল। দলের রাজ্য সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষের কথায়, "এটা হাইকোর্টের নির্দেশ। আমাদের নেতৃত্ব নিশ্চয়ই চুলচেরা বিশ্লেষণ করবেন। তবে এটা তো নতুন নয়! ভোটের সময়ও কেন্দ্রীয় বাহিনী দেখেছি। আট দফা ভোট হয়েছে, কেন্দ্রীয় বাহিনী এসেছে। আসল বিষয়টা হল, মুঙ্গের বাহিনী রিভলভার হাতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এ বার কেন্দ্রীয় বাহিনী বুঝবে। গোটাটাই বিজেপি-র সমস্যা। এখানে আমাদের তৃণমূলের কিছু নেই। পায়ে পা দিয়ে গন্ডগোল পাকাচ্ছে বিজেপি।"


বিজেপি-র সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ যদিও তৃণমূলকেই কাঠগড়ায় তুলেছেন। তাঁর বক্তব্য, "বাংলায় পুলিশকে নিষ্কর্মা করে রাখা হয়েছে। সেটা আমরা সর্বত্রই দেছি। পুলিশের সামনে আগুন জ্বালানো হচ্ছে, মারা হচ্ছে পুলিশকে, গাড়ি জ্বলছে। সেই পুলিশকে কে ভরসা করবে? কেন্দ্র তো সাহায্য় করার জন্যই বসে রয়েছে! বিহারেও এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। সেখানে আধা সেনা নামানো হয়েছে। বাকি সব জায়গা ঠান্ডা হচ্ছে, বাংলা কেন হচ্ছে না? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের অযোগ্যতা ঢাকতে অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছেন। রাজ্য়পাল ট্যুর কাটছাঁট করে চলে এলেন। আর মুখ্যমন্ত্রী শুধু ডায়লগ দিয়ে চলেছেন।"


জনস্বার্থ মামলা করেন বিরোধী দলনেতা শুভেনদু অধিকারী


রামনবমীর মিছিল ঘিরে হাওড়া, ডালখোলা ও রিষড়ায় অশান্তির প্রেক্ষাপটে, জনস্বার্থ মামলা করেন বিরোধী দলনেতা শুভেনদু অধিকারী। সেই মামলার শুনানিতে কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম ও বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের পর্যবেক্ষণ, "যে ধরনের সমস্যার কথা বলা হচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে যে, রাজ্য পুলিশ এক হাতে এই সমস্যার সমাধান করতে পারবে না। রাজ্য পুলিশ না পারলে, প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় বাহিনীর সাহায্য নিন।"


আদালত জানিয়েছে, রাজ্যকে যেমন কেন্দ্রের কাছে আধা সামরিক বাহিনী চাইতে হবে, তেমনই হনুমান জয়ন্তী নিয়ে কোনও রাজনৈতিক নেতা, কোথাও কোনও বক্তব্য পেশ করবেন না। এ দিন হাইকোর্টের রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।