পূর্ব মেদিনীপুর: ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় মোন্থা, রাতের মধ্যেই অন্ধ্রপ্রদেশে ল্যান্ডফল। 'মোন্থা'র প্রভাবে দক্ষিণবঙ্গ জুড়ে বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি, উপকূলে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। কলকাতা-সহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় ঝোড়ো হাওয়া, ভারী বৃষ্টির সতর্কতাও জারি করেছে আইএমডি। এদিকে ঠিক এমনই এক মুহূর্তে তমলুকে ঝড়ে ভাঙল কালীপুজোর মেলার আলোর বাঁশের কাঠামো। দমকা হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টি, ভাঙল কাঠের কাঠামো। তমলুক-পাঁশকুড়া রাজ্য সড়কে ব্যাহত যান চলাচল।
মঙ্গলবার রাতে অন্ধ্রপ্রদেশ আছড়ে পড়বে তীব্র ঘূর্ণিঝড় মোন্থা। অন্ধ্রপ্রদেশ এবং ওড়িশার উপকূলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। দুই জায়গায় পর্যাপ্ত ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। প্রশাসনকে সব রকম ভাবে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু। মঙ্গলবার রাত ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে অন্ধ্রপ্রদেশ উপকূলের মছলিপত্তনম ও কলিঙ্গপত্তনমের মধ্যে কাঁকিনাড়া সংলগ্ন এলাকায় আছড়ে পড়বে তীব্র ঘূর্ণিঝড় মোন্থা। ল্যান্ডফলের সময়ে ঘণ্টায় ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ থাকতে পারে সর্বোচ্চ ১১০ কিলোমিটার। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে অন্ধ্রপ্রদেশ এবং ওড়িশার উপকূলে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। মৌসম ভবন সূত্রে খবর, মূলত অন্ধ্রপ্রদেশে উপকূলীয় এলাকায় প্রভাব ফেলবে ঘূর্ণিঝড় মোন্থা। অন্ধ্রপ্রদেশের ৩৯টি জায়গায় ভারী থেকে অভি ভারী বৃষ্টির সতর্কতা জারি করা হয়েছে। দুর্যোগ মোকাবিলায় সব বিধায়ক ও সাংসদদের প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু। উপকূলবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে গেছে স্থানীয় প্রশাসন। কাঁকিনাড়া এবং উপ্পাডার সমুদ্র সৈকতের রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ত্রাণ শিবির গুলোতে পর্যাপ্ত খাবার ও জল মজুত রাখা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় মোন্থার প্রভাবে চেন্নাই, তিরুভাল্লুর, কাঞ্চিপুরম এবং চেঙ্গালপাট্টু সহ বেশ কয়েকটি জেলায় ভারী বৃষ্টিপাত চলছে।
বৃষ্টির সঙ্গে বেশ কিছু এলাকায় প্রতি ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইছে। চেন্নাই, তিরুভাল্লুর, কাঞ্চিপুরম এবং রানিপেট জেলায় ভারী বৃষ্টির কমলা সতর্কতা জারি করেছে প্রশাসন। চেন্নাইতে সব সরকারি ও বেসরকারি স্কুলের একদিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। টানা বৃষ্টির জেরে চেন্নাইয়ের একাধিক এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। পাম্প বসিয়ে দ্রুত জল বের করার চেষ্টা চলছে। চেঙ্গালপাট্টু, চেন্নাই, কাঞ্চিপুরম, কন্যাকুমারী, রানিপেট, টেনকাসি, তিরুভাল্লুর, থুথুক্কুডি, তিরুনেলভেলি, তিরুপথুর, তিরুভান্নামালাই, ভেলোর, ভিলুপ্পুরম, বিরুধুনগরে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টির সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
ঘুর্ণিঝড়ের কারণে বিশাখাপত্তনম বিমানবন্দর থেকে ৩২টি বিমান বাতিল করা হয়েছে। বিশাখাপত্তনমের মধ্য দিয়ে যাওয়া ৩২টি ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। অন্ধ্রপ্রদেশ, ওড়িশা এবং তেলেঙ্গানায় রেলের প্রস্তুতি জানতে বৈঠক করেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। রেল সূত্রে খবর, টাটানগর-এর্নাকুলাম এক্সপ্রেসের গতিপথ পরিবর্তন করা হয়েছে। ভুবনেশ্বর-জগদলপুর এক্সপ্রেস এবং রাউরকেলা-জগদলপুর এক্সপ্রেসের গতিপথ সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে।
টাটানগর-এর্নাকুলাম এক্সপ্রেস,ভুবনেশ্বর-জগদলপুর এক্সপ্রেস এবং রাউরকেলা-জগদলপুর এক্সপ্রেস গতিপথ পরিবর্তন করা হয়েছে। ওড়িশা দক্ষিণের আটটি জেলায় ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। গঞ্জাম জেলায় সমুদ্র উত্তাল। মঙ্গলবার সকাল থেকে সেখানে ভারী বৃষ্টি চলছে। ওড়িশায় ২ হাজারের বেশি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। ১১ হাজার ৩৯৬ জনকে ত্রাণ শিবিরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী মোহন চরণ মাঝি। ঘূর্ণিঝড় মোন্থার প্রভাবে দক্ষিণ ও পূর্ব রাজস্থানের বেশ কিছু অংশে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সতর্কতা জারি করা হয়েছে। উদয়পুর, কোটায় ভারী বৃষ্টি চলছে। ঘূর্ণিঝড় মোন্থার প্রভাবে উত্তরবঙ্গে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সতর্কতা জারি করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার অক্টোবর ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে মালদা উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর, দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুড়ি জেলায়। শুক্রবার দার্জিলিং, কালিম্পং, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার, জলপাইগুড়িতে ২০০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টি হতে পারে বলে আবহাওয়া দফতর সূত্রে খবর। মালদা এবং উত্তর দিনাজপুরেও ওইদিন ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুর, বাঁকুড়া মঙ্গলবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত বিক্ষিপ্ত ভারী বৃষ্টি চলবে দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলোতে। উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান, বীরভূম, মুর্শিদাবাদে ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে।