নয়াদিল্লি: একজন হলেন পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন রাজ্যপাল। একসময় যার একটা ট্যুইটের তোপের মুখে পড়ে প্রায় রোজদিন অস্বস্তির মুখে পড়ত শাসকদল (TMC)। একুশের বিধানসভা ভোট থেকে শুরু করে ভোট পরবর্তী হিংসা, জন বার্লার বিতর্কিত বক্তব্য হোক, কিংবা উত্তাল উত্তরবঙ্গ, রাজ্যের একাধিক ইস্যুতে তাঁকে কথা বলতে দেখা গিয়েছে বারবার। তবে যা নিয়ে শাসকদলের ক্ষোভেরও অন্ত ছিল না। 'বিজেপির হয়ে কাজ করছেন', বলে বারবার ক্ষোভও প্রকাশ করতে শোনা গিয়েছিল, একটা সময় রাজ্যের তৃণমূলের শীর্ষনেতাদেরকে। রাজ্য-রাজ্যপাল সংঘাত মূলত তখন ছিল নিত্যদিনের ঘটনা। পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন এই রাজ্যপালের নাম জগদীপ ধনখড়। আর এই মুহূর্তে তিনিই হলেন দেশের উপরাষ্ট্রপতি। কিন্তু এতো গেল একটা দিক। মুদ্রার অপরপিঠে কী আছে লুকিয়ে ? মূলত যাকে নিয়ে এতকথা বাংলার অলিগলিতে, লোকসভা ভোটের আগে দেশের উত্তাল পরিস্থিতির আবহে, তাঁর সঙ্গেই দেখা করলেন খোদ অভিনেতা তথা তৃণমূল সাংসদ দেব। স্বাভাবিকভাবেই এই সাক্ষাৎ নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ। ফিসফিস-গুঞ্জন রাজনৈতিক মহলে। এদিকে এমনই একটা সময় ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে প্রাক্তন রাজ্যপালের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে দেব বলেছেন,' এটি সম্পূর্ণ একটি অরাজনৈতিক আড্ডা।'



এবার একটু যাওয়া যাক বরং মুদ্রার অপরপিঠে। 'দ্য কেরালা স্টোরি' পশ্চিমবঙ্গে দেখানো নিয়ে বিতর্কের ঝড়। চলতি বছরেই মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে প্রেক্ষাগৃহে দেখানো বন্ধ করা হয়। পরে আদালতের নির্দেশে তা তুলে নেওয়া হয়। যে ছবিকে ঘিরে মূলত ছিল রাজনৈতিক বিতর্কিত ইস্যু। কিন্তু এখানে দেবের সঙ্গে তাহলে যোগাযোগ কোথায় ?  এবার তাহলে আরও একটু ফ্ল্যাশব্যাকে যাওয়া যাক। ২০২৩ সালের একেবারে গোড়ার দিক। দেব ও মিঠুনের ছবি 'প্রজাপতি' মুক্তি পেয়েছে। এই অবধি ঠিকই ছিল। দুজনেই অভিনেতা। কিন্তু দুজনেরই রাজনৈতিক পরিচয়টা পুরোটাই আলাদা। বাধ সাধে কি এখানেই ? দেব হলেন তৃণমূল সাংসদ। ওদিকে মিঠুন চক্রবর্তী গেরুয়া শিবিরের। আচমকাই ছন্দপতন। সরকারি প্রেক্ষাগৃহ নন্দনে ডানা মেলে উড়তে পারেনি 'প্রজাপতি।'  উঠেছে বিতর্কের ঝড়।  তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষও, মিঠুন চক্রবর্তীকে তোপ দেগতে ছাড়েননি। কারণ ওই  বিজেপির সিলমোহর। তবে, ছবি বিষয় না হলেও, রাজ্যের ভোটের মুখে একাধিকবার শাসকদলকে তোপ দাগতেও দেখা গিয়েছে মিঠুনকেও। তবে বাংলা ছবি 'প্রজাপতি', এসব কিছু নিয়েই ছিল না। বরং একেবারেই বাবা-ছেলের সহজ-সরল একটা সম্পর্ককেই ফ্রেমে ধরেছিলেন পরিচালক। যদিও সেই সহজ বিষয়টা আর সহজ থাকেনি। রাজনৈতিক পরিচয় কখন যেনও এসে, 'প্রজাপতি'-র স্বাধীনতায় সীমা এঁকে দিয়েছিল।  


আরও পড়ুন, 'দুধ চা খেয়েছি, বিস্কুট খাইনি', রাজভবন থেকে বেরিয়ে বললেন মুখ্যমন্ত্রী


অপরদিকে, তৎকালীন রাজপালের সঙ্গে কমবার সৌজন্য সাক্ষাৎ সারেননি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মিষ্টি উপহার থেকে শুরু করে নিজের হাতে আঁকা ছবিও পর্যন্ত তৎকালীন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়কে উপহার দিয়েছিলেন।  এই কুশল বিনিময় এবং সৌজন্য সাক্ষাৎ-র ছবি সংবাদ মাধ্যমে আসতে না আসতেই,পট বদলেছে। চিড়ে ভেজেনি। বরং ফের ট্যুইটে রাজ্যের শাসকদলের বিতর্কিত বিষয় নিয়ে ফের তোপ দাগতে দেখা গিয়েছিল ধনখড়কে। কিন্তু এখানে দুটো সমান্তরাল রেখা আছে। প্রথমত, অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তীর সঙ্গে কোনও দিনও বিজেপি নেতা মিঠুন চক্রবর্তীকে মিলিয়ে দেননি তৃণমূল সাংসদ দেব। বরং সেসময় মিঠুনের পাশে থেকেই তাঁকে উত্তর দিতে দেখা গিয়েছিল। আর দ্বিতীয় রেখাটা সেই রাজ্য এবং রাজ্যপাল সংঘাত। মাঝে গঙ্গায় অনেক জল বয়ে গিয়েছে ঠিকই। রাজ্যে রাজ্যপাল হয়ে এসেছেন সিভি আনন্দ বোস। কিন্তু ছবিটা কি বদলিয়েছে ? বরং সংঘাতটা যেনও 'বিরতির পর ফিরে আসছি'-র মতোই ধারাবাহিকতা নিয়েছে। আর এই মুহূর্তে মালদা বনাম মণিপুর ইস্যু নিয়ে তৃণমূল ও বিজেপির মধ্য়ে তোপ-পাল্টা নিশানার চলছে। আর এমনই এক আবহে ধনখড়ের সঙ্গে দেবের এই সাক্ষাৎ শুধুই কি নিছক 'অরাজনৈতিক আড্ডা'  নাকি সিনামেটিক রিলিফ ? উত্তরটা সময়ই বলবে।