কলকাতা: দিলীপ ঘোষকে (Dilip Ghosh) সাতটা রাজ্য এবং একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে শক্তিশালী বুথ গঠনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বিজেপি-র (BJP) শীর্ষনেতৃত্বের একাংশের ভূমিকা নিয়ে তাঁর স্পষ্ট কথার জেরেই কি এই দায়িত্ব? এটা কি আদতে দিলীপকে বাংলায় নিষ্ক্রিয় করার কৌশল? প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন মহলে। 


সোজা কথা সোজা ভাবে বলার মাশুল!


দিলীপ ঘোষ মানেই খোলামেলা কথা। স্পষ্ট বক্তা। সে রাজ্য বিজেপির অবস্থা নিয়ে হোক, অথবা বঙ্গের প্রতি দিল্লির বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের দৃষ্টিভঙ্গি। সব বিষয়েই সোজা কথা। এই স্পষ্টবাদী মনোভাবের জেরেই কি তাঁকে বাংলা থেকে কার্যত সরিয়ে, ভিন রাজ্যের দায়িত্বে পাঠানো হল?


বিধানসভা ভোটের আগে ভিনরাজ্যের বিজেপি নেতাদের যেভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল তা নিয়ে, এবিপি আনন্দকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মুখ খুলেছিলেন দিলীপ ঘোষ। জানিয়েছিলেন, যতদিন কংগ্রেসের সিদ্ধান্ত কলকাতা থেকে হত, কংগ্রেস বেঁচে ছিল। দিল্লি চলে গেল। তারপর শেষ। বিধানসভা ভোটের ফলাফলি নিয়েও অকপট ছিলেন তিনি। তাঁর বক্তব্য ছিল, "অনেকে ভেবেছিলেন ২০০ পেয়েই গিয়েছি। স্বপ্ন দেখাতে হয়, নিজে স্বপ্নে মশগুল হতে নেই।"



দিলীপ ঘোষকে  রাজ্য বিজেপি সভাপতির পদ থেকে সরানোর পর যে রাজ্য কমিটি তৈরি হয়েছিল, তা নিয়ে দলে বিদ্রোহ মাথাচাড়া দেয়। যা নিয়ে এবিপি আনন্দেই মুখ খুলেছিলেন তিনি। কার্যত প্রশ্ন তুলেছিলেন বর্তমান নেতৃত্বের ভূমিকা নিয়ে। তাঁর বক্তব্য ছিল, "ইলেকশনের আগে একদিনে দু’টো ব্রিগেড করেছি, একটি কলকাতায়, একটি শিলিগুড়িতে। কারা করেছে? এরা। দিনরাত পড়ে থাকত। দায়িত্ব পরিবর্তন হতে পারে। পার্টিকে যারা দাঁড় করাল, এত বছর কাজ করার যে অভিজ্ঞতা, তার লাভ যদি না নিই, তাহলে ক্ষতি তো পার্টির হবে। কার্যকর্তারা কাকে দেখে বেরোত?"


আরও পড়ুন: Nirmal Maji: একের পর এক বিতর্কের মুখে অপসারিত নির্মল মাজি, দায়িত্বে শ্রীরামপুরের তৃণমূল বিধায়ক-চিকিৎসক


নাম না করে মুকুল রায়কে বিজেপি-তে দলে নেওয়া এবং শীর্ষ নেতৃত্বের একাংশের মুকুল-প্রীতির প্রতি কটাক্ষও শোনা গেছিল দিলীপ ঘোষের গলায়। সেই সময় দিলীপ বলেন, "এই যে অনেক লোক চলে গেল, বড় বড় নেতারা, কেউ চাণক্য, কেউ কৌটিল্য, আমাদের নেতারা কাঁধে করে নিয়ে ঘুরতেন। এখানে আমরা লড়াই করছি, দিল্লি গিয়ে বলত দিলীপ হঠাও। চায়ের দোকান থেকে প্রতিদিন দিলীপ ঘোষকে হঠাতে বলত। আমি দিলীপ ঘোষ আছি। ওরা ফুটপাতে আছে।"


এবিপি আন্দকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে দিলীপ ঘোষ খোলামেলাভাবেই জানিয়েছিলেন, জে পি নাড্ডার সঙ্গে বৈঠকে তিনি রাজ্য বিজেপির জন্য কী চেয়েছিলেন। তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছিল, "আমি বলে এসেছি, সিনিয়র কাউকে পাঠান। আমরা পার্টি দাঁড় করিয়ে নিয়েছি। চালিয়ে নেব। কিন্তু, যাঁরা চালাবে, তাঁদের বুঝবে এমন লোক পাঠান। সব মালুম হ্যায়, এটা বললে হবে না।"


দিলীপ কি বঙ্গ বিজেপি-তে নিষ্ক্রিয়!


এর আগে দিলীপ ঘোষকে রাজ্য সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে সর্বভারতীয় সহ সভাপতি করার পরও প্রশ্ন উঠেছিল এটা কি বাংলায় তাঁকে নিষ্ক্রিয় করার কৌশল? এবিপি আনন্দকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দিলীপ ঘোষ সেই নিয়ে তাঁর অবস্থান স্পষ্ট করেছিলেন। জানিয়েছিলেন, এখানে যে ধরনের কাজের সুযোগ আছে, যে ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়, সেটা ওখানে হয় না। আগামী বছর রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোট। তার পরের বছর লোকসভা ভোট। সেখানে দিলীপ ঘোষকে বাংলায় কতটা সক্রিয় ভূমিকায় দেখা যায়, সেটা এখন বড় প্রশ্ন।