রঞ্জিত সাউ, কলকাতা: এসএসসি গ্রুপ সি নিয়োগ মামলায় বাগ রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতে এবার তোপ দাগলেন বিজেপির সর্ব ভারতীয় সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষ। এদিন তিনি বলেন, “সিবিআই, ইডি ডাকলে আদালতে চলে যান, হাসপাতালে ভর্তি হয়ে যান।’’ “যতগুলো এনকোয়ারি কমিটি তৈরি হয়েছে, সেগুলোর রিপোর্ট সামনে আসলে এই ধরনের আরও অনেক রাঘব বোয়াল ধরা পড়বে।‘’ এসএসসি-র গ্রুপ সি নিয়োগ-দুর্নীতি মামলায় অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি রঞ্জিতকুমার বাগের নেতৃত্বাধীন অনুসন্ধান কমিটির রিপোর্ট প্রসঙ্গে মন্তব্য দিলীপ ঘোষের।
পাস না করেই গ্রুপ C-তে চাকরি: পাস না করেই চাকরি। নিয়োগ নিয়ে সামনে এল আরও এক বিস্ফোরক রিপোর্ট। ছত্রে ছত্রে ভয়ঙ্কর দুর্নীতির উল্লেখ। কলকাতা হাইকোর্টে স্কুল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে গ্রুপ C কর্মী নিয়োগ মামলায় অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি রঞ্জিৎকুমার বাগ কমিটির রিপোর্ট জমা পড়ল কলকাতা হাইকোর্টে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পরও নিয়ম ভেঙে ৩৮১ জনকে চাকরির সুপারিশপত্র দেওয়া হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে ২২২ জন তো লিখিত পরীক্ষায় পাসই করেননি। প্যানেল বা ওয়েটিং লিস্টেও নাম ছিল না। অথচ তাঁদের সুপারিশপত্র দেওয়া হয়। সই স্ক্যান করে এসএসসির অফিস থেকেই দেওয়া হয়েছিল সেই সব সুপারিশপত্র। পাশাপাশি তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের অনুমোদনের ভিত্তিতে SSC’র যে উপদেষ্টা কমিটি তৈরি হয়েছিল, তাকেও বেআইনি বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।
অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি বাগের রিপোর্টে SSC ও মধ্য শিক্ষা পর্ষদের একাধিক প্রাক্তন ও বর্তমান কর্তার নাম আছে। বেআইনি সুপারিশপত্র দেওয়ার ক্ষেত্রে নাম জড়িয়েছে SSC’র প্রাক্তন চেয়ারম্যান সৌমিত্র সরকার এবং SSC’র প্রাক্তন উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ সিন্হার নাম! অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির কমিটির রিপোর্টে বলা হয়েছে, শান্তিপ্রসাদ সিন্হা ভুয়ো সুপারিশপত্র দিতেন মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়কে। কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায় সেই সুপারিশপত্রের ভিত্তিতে পর্ষদের কর্মী রাজেশ লায়েককে দিয়ে তৈরি করাতেন নিয়োগপত্র! রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, CD, পেন ড্রাইভ এবং ই-মেল মারফৎ পাঠানো হত সুপারিশপত্র! বেআইনি সুপারিশপত্র ছাপানোর কাজে যুক্ত ছিলেন SSC’র প্রোগ্রামিং অফিসার সমরজিৎ আচার্য।
গ্রুপ সি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির রিপোর্টে সুপারিশ করা হয়েছে, মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায় এবং SSC’র প্রাক্তন উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ সিন্হার বিরুদ্ধে ১২০বি অর্থাৎ অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের ধারায় মামলা রুজু করা উচিত। প্যানেলের পুনর্মূল্যায়ণের মাধ্যমে RANK বদলানোয় SSC’র প্রাক্তন চেয়ারম্যান সৌমিত্র সরকার, প্রাক্তন সচিব অশোককুমার সাহা এবং SSC’র প্রাক্তন উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ সিন্হার বিরুদ্ধে 120-B ধারায় অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের মামলা করার সুপারিশ করা হয়েছে রিপোর্টে।এছাড়াও নিয়ম বহির্ভূতভাবে কাজের জন্য সার্ভিস কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান সুবীরেশ ভট্টাচার্য, অতীতে একই দায়িত্বে থাকা ও স্কুল সার্ভিস কমিশনের সাউদার্ন রিজিয়নের বর্তমান চেয়ারপার্সন শর্মিলা মিত্র, SSC’র ইস্টার্ন রিজিয়নের প্রাক্তন চেয়ারপার্সন মহুয়া বিশ্বাস, সাউথ-ইস্টার্ন রিজিয়নের প্রাক্তন চেয়ারপার্সন চৈতালি ভট্টাচার্য, SSC’র সাউথ-ইস্টার্ন রিজিয়নের প্রাক্তন চেয়ারম্যান শুভজিৎ চট্টোপাধ্যায়এবং নদার্ন ও ইস্টার্ন রিজিয়নের চেয়ারম্যান শেখ সিরাজুদ্দিনের বিরুদ্ধে, শৃঙ্খলাভঙ্গের জন্য বিভাগীয় তদন্তের সুপারিশ করা হয়েছে বাগ কমিটির রিপোর্টে। ১৮ মে এই মামলায় রায় ঘোষণা করবে কলকাতা হাইকোর্ট।
আরও পড়ুন: Price Hike: মুরগির মাংস থেকে আলু, টমেটো, দামের মূল্যবৃদ্ধির ছ্যাঁকায় জেরবার মানুষ