কলকাতা: একদিন আগেই বঙ্গ সফর সেরে দিল্লি ফিরে গিয়েছেন দ্রৌপদী মুর্মু (Draupadi Murmu)। তার পরই আসন্ন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ক্রস ভোটিংয়ের জল্পনা উস্কে দিলেন বিজেপি-র সর্বভারতীয় সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh)। তাঁর দাবি, তৃণমূলের অনেকেই বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ প্রার্থী দ্রৌপদীকেই ভোট দেবেন। তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) এ নিয়ে রাজনীতি করছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
দিলীপের মন্তব্যে জোর জল্পনা
জনজাতি নেত্রী দ্রৌপদীকে রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী ঘোষণা করেছে এনডিএ পক্ষ। অন্য দিকে বিরোধীদের তরফে প্রার্থী করা হয়েছে যশবন্ত সিন্হাকে (Yashwant Sinha)। তা নিয়ে সম্প্রতি মুখ খোলেন মমতা। জনজাতি নেত্রীকে রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী করা হচ্ছে বলে বিজেপি-র তরফে জানানো হলে তিনি ভেবে দেখবেন বলে মন্তব্য করেন। তার পরই থেকেই তৃণমূলের (TMC) অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করে বিজেপি। তাতে আরও ইন্ধন জোগালেন দিলীপ।
দিলীপের কথায়, "একজন আদিবাসী মহিলা এই প্রথম দেশের রাষ্ট্রপতির আসন অলঙ্কৃত করবেন। বিদেশের মাটিতে ভারতের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করবেন। গোটা দুনিয়া দেখছে, কী ভাবে একেবারে শূন্য থেকে উত্থান ঘটছে ভারতের। বিবেকানন্দ বলেছিলেন, শূদ্রের উত্থান ঘটলে, তবেই দেশের উত্থান সম্ভব। মোদিজি সেই কাজ করছেন। মুখ্যমন্ত্রী এখন বলছেন, আগে জানলে ভেবে দেখতেন। অথচ আগেই নিজের দলের সহ সভাপতিকে মনোনীত করেছেন। কে রাজনীতি করছেন, এ থেকেই বোঝা যায়। দিদিমণির কষ্ট করার দরকার নেই। ওঁর দলের অনেকেই দ্রৌপদী মুর্মুকে ভোট দেবেন।"
বিজেপি-র সঙ্গে সম্পর্ক তিক্ততায় পৌঁছলেও, মহারাষ্ট্রের উদ্ধব ঠাকরেও সম্প্রতি দ্রৌপদীকে সমর্থনের কথা জানিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে বিরোধীদের মধ্যে থেকে আর কেউ অবস্থান বদলান কিনা, সে নিয়ে জল্পনা চলছেই। সেই আবহে দিলীপের মন্তব্য তাতে আরও ইন্ধন জোগাচ্ছে। প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ক্রস ভোটিং হতে পারে?
২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের পর বর্তমানে ভোটের সমীকরণ অনেকটাই বদলেছে। বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল ২১৩টি আসনে জিতেছিল। বিজেপি পেয়েছিল ৭৭টি আসন। উপনির্বাচনে দিনহাটা এবং শান্তিপুর আসনদু’টি বিজেপি-র কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয় তৃণমূল। ফলে তৃণমূলের বিধায়ক সংখ্যা বেড়ে হয় ২১৫। আর বিজেপির বিধায়ক সংখ্যা কমে হয় ৭৫। এর পর মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জ এবং জঙ্গিপুর কেন্দ্রদু’টিতেও উপনির্বাচনে জেতে তৃণমূল। ফলে তৃণমূলের বিধায়ক সংখ্যা আরও বেড়ে হয় ২১৭। বিজেপির বিধায়ক সংখ্যা থেকে যায় ৭৫।
এর পাশাপাশি, কৃষ্ণনগর উত্তরের বিধায়ক মুকুল রায়কে নির্বাচনের পর তৃণমূলের দফতরে দেখা গিয়েছে। বিষ্ণুপুরের বিধায়ক তন্ময় ঘোষ, বাগদার বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস, কালিয়াগঞ্জের বিধায়ক সৌমেন রায় এবং রায়গঞ্জের বিধায়ক কৃষ্ণ কল্যাণীকেও তৃণমূলের পতাকা হাতে নিতে দেখা যায়। তাঁদের ধরলে বিজেপি-র বিধায়ক সংখ্যা আরও কমে হয় ৭০। তৃণমূলের সংখ্যা বেড়ে হয় ২২২।
একই ভাবে লোকসভা উপনির্বাচনে আসানসোল কেন্দ্রটি বিজেপির থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে তৃণমূল। ব্যারাকপুর কেন্দ্রের সাংসদ অর্জুন সিংহ বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। সেই হিসেব অনুযায়ী, বর্তমানে বিজেপি-র সাংসদ সংখ্যা ১৮ থেকে কমে হয়েছে ১৬। তৃণমূলের সাংসদ সংখ্যা ২২ থেকে বেড়ে হয়েছে ২৪। তাই দিলীপের দাবি খারিজ করে দিয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব।
তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, "শুভেন্দু অধিকারী এবং সুকান্ত মজুমদারের জমানায় দিলীপ ঘোষ এত অপমানিত বোধ করছেন যে, আমি নিশ্চিত উনি এবং ওঁর লোকেরা ক্রসভোট করবেন বলে ঠিক করে নিয়েছেন। তাই আগে থেকে রাস্তা করে রাখছেন। আমরা পুরোটাই বুঝতে পারছি।" এবং ওঁর লোকেরা ক্রমভওট করবেন ঠিক করে ফেলেছেন. তাই আগে থেকে পরাস্তা করে রাখছেন। আমরা পুরোটাই বুঝতে পারছি।"
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের আগে তুঙ্গে তরজা
আগামী ১৮ জুলাই রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। ২১ জুলাই ভোট গণনা। দ্রৌপদী না যশবন্ত, কে বিজয়ী হন, সে দিকে তাকিয়ে গোটা দেশ। তবে আপাত ভাবে, এনডিএ-প্রার্থীর পক্ষেই পাল্লা ভারী। মহারাষ্ট্রে ফের বিজেপি-র সরকার প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর দ্রৌপদীর জয়ের রাস্তা আরও মসৃণ হয়েছে।