বিশ্বজিৎ দাশ, খড়গপুর : দক্ষিণ কলকাতা জুড়ে রহস্যময় হোর্ডিং। লেখা ‘নতুন তৃণমূল’। সেখানে রয়েছে শুধুমাত্র অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি। নেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি ! হাজরা ও রাসবিহারী মোড়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি দেওয়া হোর্ডিংয়ে লেখা রয়েছে...আগামী ছ’মাসের মধ্যে সামনে আসবে নতুন তৃণমূল। আর এই হোর্ডিং নিয়েই রাজনৈতিক মহলে এখন জল্পনার শেষ নেই।
' বোকা বানানোর একটি নতুন ফান্ডা '
যদিও, এই হোর্ডিংয়েও ছবি শুধু অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়েরই! এই বিষয়টিতে কেমনভাবে দেখছেন বিরোধীরা ? খড়গপুরের ইন্দা বাজারে চা-চক্রে দিলীপ ঘোষ জানালেন, ' দুর্নীতির হাত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। ইঞ্চি সাইজ থেকে ফুট সাইজ তৃণমূলের সব নেতাই দুর্নীতিগ্রস্ত। তাই মানুষকে বোকা বানানোর একটি নতুন ফান্ডা তৈরি করা হয়েছে। ' অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি দেওয়া নতুন তৃণমূল পোস্টার প্রসঙ্গে মন্তব্য বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষের।
নতুন বোতলে পুরনো মদ : সুজন
অন্যদিকে, সিপিএম কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর শাণিত কটাক্ষ, ' গ্রামে পোস্টার পড়ে না... যাত্রা-পার্টি আসছে, অভিষেক আসছে, নতুন বোতলে পুরনো মদ। তৃণমূলের নীতির কোনও পরিবর্তন হতে পারে? লুঠেরার পার্টি...পিসির কন্ট্রোল বেশি হবে না...ভাইপোর? '
বামফ্রন্ট আমলে শোনা যেত, ‘বামফ্রন্টের বিকল্প- উন্নততর বামফ্রন্টে’র কথা। আর এখন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি দেওয়া হোর্ডিংয়ে লেখা...নতুন তৃণমূল! যা নিয়ে ফের একবার তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে বিভেদের জল্পনা উস্কে দিয়েছে বিরোধীরা।
এদিকে আবার তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষের বক্তব্য, রবীন্দ্রনাথের উদ্ধৃতি ব্যবহার করলে কী নজরুলের ছবি দেওয়া যাবে? প্রসঙ্গত, কুণাল ঘোষ একবার ফেসবুক পোস্টে দাবি করেন, ' মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরে মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসবেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।' তবে কি এই পোস্টার তারই ইঙ্গিতবাহী ?
সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখেন, 'তৃণমূল কংগ্রেসের এক সৈনিক হিসেবে বলতে পারি, ২০৩৬ সাল পর্যন্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন মমতাদি। আর সেই ২০৩৬ সালে তিনি অভিভাবকের মত উপস্থিত থাকবেন এমন অনুষ্ঠানে, যেখানে মুখ্যমন্ত্রীর পদে শপথ নেবেন অভিষেক'। অপরূপা আবার লেখেন, 'আমি চাই, আমাদের দিদি ২০২৪-এ প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেবেন আরএসএস মনোনীত রাষ্ট্রপতির থেকে'।
মমতার বদলে হোর্ডিংয়ে শুধু অভিষেক কেন, জল্পনা তুঙ্গে
তাই দুর্নীতির মামলায় পার্থ এবংঅনুব্রতর গ্রেফতারির পর, হোর্ডিংয়ে শুধু অভিষেকের ছবি দিয়ে কি তাহলে বিকল্পের বার্তা দেওয়া হচ্ছে, উঠছে প্রশ্ন। এ নিয়ে প্রশ্ন করলে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জাদ মামুদ বলেন, "এটা স্পষ্ট যে দু’টো ঘটনার পর পারসেপশন এমন তলানিতে, যে নতুনের কথা বলতে হচ্ছে। অভিষেকের নেতৃত্বে নতুনের কথা বলে, পুরনো আসলে খারাপ, নতুন শুরু হচ্ছে, এগুলো হবে না, বার্তা দেওয়া হচ্ছে। বার্তা অভিষেকের নেতৃত্বে। নতুনের দ্বারা ড্যামেজ কন্ট্রোলের চেষ্টা।" ইঙ্গিতপূর্ণ এই হোর্ডিং ঘিরে এখন রাজ্য রাজনীতিতেও জোর জল্পনা চলছে।