সৌভিক মজুমদার ও সমীরণ পাল, কলকাতা: সিঙ্গল বেঞ্চের পর ডিভিশন বেঞ্চেও ধাক্কা খেলেন বনগাঁ দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রের পরাজিত তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী আলোরানি সরকার। এই মামলা রক্ষণীয় নয়, সেকথা জানিয়ে তাঁর দায়ের করা নির্বাচনী মামলা খারিজ করে দিল ডিভিশন বেঞ্চ।
গত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী স্বপন মজুমদারের কাছে ২০০৪ ভোটে পরাজিত হন আলোরানি সরকার। তারপরেই হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন তিনি। ২০২২সালে ২০ মে মামলা খারিজ করে দেন বিচারপতি বিবেক চৌধুরী। বাংলাদেশের ভোটার লিস্টে আলোরানির নাম, তাই তিনি নিজেকে ভারতীয় নাগরিক বলে দাবি করতে পারেন না, নির্দেশে জানিয়েছিলেন বিচারপতি বিবেক চৌধুরী। জাতীয় নির্বাচন কমিশনকে পদক্ষেপের নির্দেশ দেন তিনি। সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হন আলোরানি সরকার।
ভোটের লড়াইয়ে পরাজিত হয়েছিলেন, হাইকোর্টে আইনি লড়াইয়েও ফের ধাক্কা খেলেন! তৃণমূল নেত্রী আলোরানি সরকারের ইলেকশন পিটিশন খারিজ করে দিল আদালত। সিঙ্গল বেঞ্চের পরে ডিভিশন বেঞ্চেও ধাক্কা খেলেন তিনি। মামলা খারিজ করে আদালতের রায় - এই মামলা রক্ষণীয় নয়।
২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে উত্তর ২৪ পরগনার, বনগাঁ দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী স্বপন মজুমদারের কাছে ২০০৪ ভোটে পরাজিত হন তৃণমূল প্রার্থী আলোরানি সরকার।এর পর জয়ী বিজেপি প্রার্থীর বিরুদ্ধে শিক্ষাগত যোগ্যতার ভুয়ো হলফনামা-সহ একাধিক অভিযোগ তুলে আলোরানি সরকার মামলা করেন হাইকোর্টে। পাল্টা আলোরানি সরকারের নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলে হাইকোর্টে যান বিজেপি বিধায়ক স্বপন মজুমদার। গত বছর ২০ মে, সেই মামলায় বিচারপতি বিবেক চৌধুরীর পর্যবেক্ষণ ছিল,
বাংলাদেশের ভোটার লিস্টে আলোরানি সরকারের নাম আছে। তাই তিনি নিজেকে ভারতীয় নাগরিক বলে দাবি করতে পারেন না। এই বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে পদক্ষেপের নির্দেশ দেন বিচারপতি বিবেক চৌধুরী। সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হন আলোরানি। সেই মামলাতেই শুক্রবার বিচারপতি সুব্রত তালুকদার ও বিচারপতি সুপ্রতিম ভট্টাচার্যর ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, আলোরানি সরকারের করা মামলাটি রক্ষণীয় নয়।
তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়, ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে উত্তর ২৪ পরগনার বীজপুরে বিজেপি প্রার্থী হন আলোরানি সরকার। ভোট পেয়েছিলেন ১১ শতাংশ। পরাজিত তৃণমূল প্রার্থী ও মামলাকারী আলোরানি সরকারের কথায়, ২০১৬ সালে বিজেপির হয়ে বীজপুর বিধানসভায় আমি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছি এবং ইলেকশন করেছি। তখন আমি নথি সব দিয়েছি। নির্বাচন কমিশনকে। আমি এখন টিএমসি করায়, এরকমভাবে কথাগুলো বলছে বিজেপির এমএলএ স্বপন মজুমদার। এটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এটা করছে এবং সময়টা যাতে কাটিয়ে যায়, এই জন্যই এই ছল-চাতুরি চলছে।
তরজার এখানেই শেষ নয়। বাংলাদেশি ইস্যুতে পরস্পরের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ তুলেছেন তৃণমূল নেত্রী আলোরানি সরকার ও বনগাঁ দক্ষিণের বিজেপি বিধায়ক স্বপন মজুমদার।বনগাঁ দক্ষিণের বিজেপি বিধায়ক স্বপন মজুমদার বলছেন, তাঁর নামে এফআইআর করে, তাঁকে কাস্টডিতে নিয়ে, তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা, সে বাংলাদেশে জামাতে ইসলামির সঙ্গে যোগসাজশ আছে কি না সেটা আমাদের তদন্ত করা দরকার। ভোটে লড়ে পশ্চিমবঙ্গের সব তথ্য কি বাংলাদেশ বা বিভিন্ন জঙ্গিগোষ্ঠীর কাছে পাচার করার চেষ্টা করছিল কি না, সে বিষয়ে তদন্ত করা দরকার।
স্বপনের অভিযোগে আলোরানির জবাব। পরাজিত তৃণমূল প্রার্থী ও মামলাকারী আলোরানি সরকারের কথায়, উনি সোনা পাচার, হেরোইন পাচার, বিভিন্ন দ্রব্যাদী উনি পাচার করার দায়ে গ্রেফতার হয়ে জেল খেটেছেন। উনি নিজে একজন জঙ্গি, এজন্য উনি অন্যকেও জঙ্গি মনে করেন। কলকাতা হাইকোর্টে ডিভিশন বেঞ্চ এই রায়ের পরে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানিয়েছেন আলোরানি।