করুণাময় সিংহ, মালদা: শুধু কালীপুজো নয়, মালদায় বিখ্যাত দশমাথা কালীর পুজো (Diwali 2022)। ইংরেজ শাসনে তখন পরাজিত দেশ। লড়াই করতে প্রয়োজন ছিল মানসিক শক্তিও। তার জন্যই দশমাথা কালীর পুজো শুরু হয়। তাই এই কালীপুজোর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ইতিহাসও। কালীপুজো নয় শুধু, এই কালীপুজো পরিচিত মহা-কালীপুজো হিসেবেই।
ইংরেজবাজারের দশমাথা কালী রাজ্যে বিখ্যাত
মালদার (Malda News) ইংরেজবাজারের (English Bazar) গঙ্গাবাগের পুজোই পরিচিত মহা-কালীপুজো হিসেবে। আগে পুজো হত পুড়াটুলিতে। পরে স্থান পরিবর্তন করা হয়। এখানে প্রতিমার ১০টি মাথা রয়েছে। তাই দশমাথা কালীপুজোও বলা হয়। চতুর্দশীতে মহা সমারোহে পুজো হয়। তাতে যোগ দেন এলাকার মানুষ জন। গোট বাংলাতেও এই কালীপুজো দশমাথা কালীপুজো নামেই পরিচিত।
শোনা যায়, ১৯৩০ সাল নাগাদ এই পুজোর সূচনা। দেশে তখন ইংরেজ শাসন কায়েম রয়েছে। মালদাও তাদের অত্যাচার থেকে রেহাই পায়নি। দিনের পর দিন তা সইতে সইতে হতোদ্যম হয়ে পড়েন সাধারণ মানুষ। পুড়াটুলির কাছে তাই ইংরেজ শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেন সকলে। কিন্তু নানবিধ অস্ত্রে সুসজ্জিত শক্তিশালী সাসকের বিরুদ্ধে লড়াই করতে প্রয়োজন শক্তি এবং সাহসও।
সেই মতো একটি ব্যায়ামকেন্দ্র গড়ে তোলা হয়। মন শক্ত করতে শুরু হয় কালীর আরাধনা। এখানে দেবীর প্রতিমার দশটি মাথা এবং দশটি হাত ও পা রয়েছে। প্রতিমার সঙ্গে সিবের কোনও অস্তিত্ব নেই। দেবীর পায়ের নিচে রয়েছে শুধু কাটা মুণ্ড। প্রতি হাতে রয়েছে অস্ত্রশস্ত্র।
পুজোর আয়োজকরা জানিয়েছেন, শ্রী শ্রী চণ্ডী গ্রন্থে এই দশমাথা দেবীমূর্তির উল্লেখ মেলে। বিহারের বিন্দুবাসিনীতে পাহাড়ের গায়ে প্রাচীন কালে খোদাই করা এমন মূর্তিও রয়েছে। গঙ্গাবাগ এলাকায় মন্দিরটি নির্মিত হয় ১৯৮৫ সালে। মন্দির নির্মাণ নিয়েও নানা কাহিনি রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, এখন যেখানে মহাকাল মন্দির রয়েছে, সেখানে তন্ত্রসাধনা করতেন স্থানীয় বাসিন্দা প্রফুল্লধন মুখোপাধ্যায়। সাধনার জন্য় পঞ্চমুণ্ডের আসন তৈরি করান তিনি। সেই আসনের উপরই বেদী তৈরি করে বসানো হয়েছি মূর্তি। প্রফুল্লর মৃত্যুর পর তাঁর বংশধর এবং স্থানীয়রা মিলে এই পুজো চালিয়ে যাচ্ছেন। ইংরেজবাজার ব্যায়াম সমিতি এই পুজোর দায়িত্বে রয়েছে।
স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় পুজোর সূত্রপাত
ইংরেজবাজার ব্যায়াম সমিতির সদস্য পাপান চৌধুরী জানান, প্রথম থেকেই অমাবস্যার পরিবর্তে চতুর্দশী তিথিতে অনুষ্ঠান এবং পুজো হয়ে আসছে। পাঠা বলি দিয়ে রক্ত উৎসর্গের মাধ্যমে পুজো শুরু হয়। বলির শেষে শোল মাছের টক রান্না করে দেওয়া হয় মাকে। চতুর্দশীর সকালে মৃৎশিল্পীর ঘর থেকে শোভাযাত্রা সহকারে মন্দির পর্যন্ত মাকে নিয়ে এগোয় শোভাযাত্রা। শোভযাত্রায় বিভিন্ন ধরনের বাজনা থাকে। পাশাপাশি পাঁচ দিন ধরে চলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। শেষের দিন নরনারায়ণ সেবা। করোনা এখনও পুরোপুরি না যাওয়ায় সতর্কতা সহকারে পুজো হবে এ বার।