দীপক ঘোষ ও অনির্বাণ বাগচী, কলকাতা: রাজ্যটার পরিচিতি নষ্ট হয়ে যাবে। বাংলায় কথা বলার লোকও খুঁজে পাবেন না। ফুটপাথ দখল থেকে সরকারি জমি দখল নিয়ে, পুলিশ-প্রশাসন এবং দলীয় নেতা ও কাউন্সিলরদের ভূমিকায় তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করতে গিয়ে এই ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেন মুখ্যমন্ত্রী (Mamata Banerjee)। এনিয়ে তুঙ্গে উঠেছে রাজনৈতিক তরজা।


লোকসভা ভোটে (Lok Sabha Election) অনেকটাই এগিয়ে থাকলেও শহুরে ভোটার তৃণমূলের 'হাতছাড়া'। তারপরেই কি তৃণমূলের হাতিয়ার 'বাঙালি জাত্য়াভিমান'? মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, 'আমাদের ঘাড়ের ওপরে আমি দেখছি যত বোঝা, এরপরে তো রাজ্যটার পরিচিতি নষ্ট হয়ে যাবে,বাংলায় কথা বলার লোকও খুঁজে পাবেন না।'


ফুটপাথ দখল থেকে সরকারি জমি দখল, পুলিশ-প্রশাসন এবং দলীয় নেতা ও কাউন্সিলরদের ভূমিকায় তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। বিধাননগর, হাওড়া, বালি, শিলিগুড়ি-সহ একাধিক পুরসভার ভূমিকায় সরব হয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এসবের মাঝেই আগেরদিন নবান্ন সভাঘরে তাঁর মুখে শোনা গেছে এই ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য। রাজ্যের পরিচিতি নষ্টের আশঙ্কা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, 'মনে রাখবেন, প্রত্যেকটা স্টেটের একটা নিজস্ব পরিচিতি আছে। একটা সংস্কৃতি আছে। অন্য সংস্কৃতিকেও আমরা ভালবাসি, সম্মান জানাই। কিন্তু বাংলার পরিচিতিকে নষ্ট করে দেওয়ার চক্রান্তে যারা লিপ্ত, আমি তাদের সকলকে সাবধান করে দিয়ে বলছি, অর্থের বিনিময়ে বাংলার আইডেন্টিটি যেন নষ্ট না হয়। এটাই আমার প্রথম এবং শেষ সতর্কবার্তা।'


জাতিসত্ত্বার রাজনীতি ভারতে নতুন নয়। 'মারাঠি মানুস'-এর কথা বলে একটা সময় গোটা মুম্বই শাসন করেছেন বাল ঠাকরে। গুজরাতি অস্মিতাকে সামনে রেখে প্রায় দুই দশক ধরে গুজরাতে ক্ষমতায় বিজেপি। দ্রাবিড়ীয় সত্তাকে সামনে রেখেই বিজেপিমুক্ত তামিলনাড়ু করেছে ডিএমকে। এবার কি বাংলাতেও পরোক্ষে বাংলা ও বাঙালি - এই বিষয়টিকে সামনে রেখে কৌশলী রাজনীতি করতে চাইছে তৃণমূল?  


বিষয়টি নিয়ে তোপ দেগেছে বিজেপি। বিজেপি নেতা রাহুল সিনহা বলেন, 'মমতা ভুলে যাচ্ছেন দেশের নাম ভারত, এখানে বৈচিত্রের মধ্যেই ঐক্য।' তিনি তুলে এনেছেন ছটপুজোয় ২দিন ছুটি দেওয়ার প্রসঙ্গও।


তোপ দেগেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (CM Mamata Banerjee) দিকে। পাশাপাশি, তাঁদের কটাক্ষ, মমতার দলই বাংলার বাইরের লোককে বাংলা থেকে প্রার্থী করেছে। বিহারের ভূমিপুত্র, অধুনা মুম্বই নিবাসী শত্রুঘ্ন সিনহাকে আসানসোল থেকে প্রার্থী করে জিতিয়েছেন মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়। বিহারেরই ভূমিপুত্র, এখন দিল্লিবাসী কীর্তি আজাদকে বর্ধমান-দুর্গাপুর থেকে সংসদে পাঠিয়েছেন তৃণমূল নেত্রীই। গুজরাতের বাসিন্দা ইউসুফ পাঠানকেও বহরমপুরের ভূমিপুত্র অধীর চৌধুরীর বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে জিতিয়েছেন তিনিই। সব মিলিয়ে বিতর্ক এখন জোরাল।


এরই মধ্যে হকার উচ্ছেদ নিয়ে আজ নবান্নে ফের বৈঠকে বসবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সাতটি কর্পোরেশনের মেয়র, পুরসভার চেয়ারম্যান, জেলাশাসক, পুলিশ সুপারদের বৈঠকে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। যদিও বৈঠকে ডাক পায়নি তাহেরপুর ও ঝালদা পুরসভা।


আরও পড়ুন: বিমা কভারেজের সঙ্গে বিনিয়োগও! এক প্রিমিয়ামেই জোড়া সুবিধা! কীভাবে?