রাজা চট্টোপাধ্যায়, জলপাইগুড়ি: প্রবল বর্ষায় বিপন্ন ডুয়ার্সের বন্যপ্রাণ। গৃহস্থের ঘরেই আশ্রয় অজগরের। অন্যান্য বারের মতো এবারেও বর্ষার প্রথম দাপটে কার্যত বিপন্ন ডুয়ার্সের বন ও বন্যপ্রাণ। গভীর জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে বইছে পাহাড়ি ঝর্ণার স্রোত। ছোটখাটো সরীসৃপ-সহ হস্তিকুল খুঁজছে নিরাপদ আশ্রয়। এমনই এক পরিস্থিতির চাক্ষুষ সাক্ষী রইল শুক্রবার জলপাইগুড়ি জেলার ময়নাগুড়ি ব্লকের ব্যাংকান্দি গ্রামের মানুষ।


এদিন এক গৃহস্তের টিনের চালা ঘরে হঠাৎ নজরে আসে বিশাল আকৃতির এক রক পাইথন। নিমেষেই আতংক ছড়িয়ে পরে গ্রামজুড়ে, খবর পেয়েই ঘটনা স্থলে পৌঁছয় বন বিভাগের বন্য প্রাণ রেসকিউ দল। দীর্ঘক্ষণ চেষ্টার পর অবশেষে ঘরের টিনের মাঝে শুয়ে থাকা অজগরটিকে উদ্ধার করে।
পর্যবেক্ষণ রাখার পর জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হবে।


মূলত গত মাস থেকেই অতিবৃষ্টি শুরু হয়েছে উত্তরবঙ্গে। যার জেরে সমস্যা বেড়েছে বাসিন্দাদের। লাগাতার বৃষ্টির জেরে কার্যত বিপর্যস্ত উত্তরবঙ্গের জনজীবন। এদিকে সম্প্রতি টানা বৃষ্টিতে তিস্তায় জলচ্ছ্বাস দেখা গিয়েছে গত মাস থেকেই। এদিকে তার উপরে রাম্বি ও কালিঝোরা ড্যামের থেকেও জল ছাড়া হয়েছিল।যার জেরে জলমগ্ন হয়ে পড়েছিল তিস্তা বাজার এলাকা। তিস্তা ব্যারেজ থেকে বারংবার জল ছাড়তেই ফুলে ফেঁপে উঠেছিল।


আরও পড়ুন, গ্রেফতারির ৮ দিন পরে সমান উদ্ধত জয়ন্ত সিংহ


তিস্তার জল ঢুকে প্লাবিত হয়ে পড়ে জলপাইগুড়ির মালবাজারের টোটগাঁও। ৫০টিরও বেশি পরিবার জলবন্দি হয়ে পড়ে। আশ্রয় নেয় স্থানীয় স্কুলে। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, দীর্ঘ কয়েকবছর ধরে পাহাড়ে বৃষ্টি হলেই তিস্তারজলে ভাসছে গ্রাম। বিঘার পর বিঘা চাষের জমি, বাড়ি-ঘর, নদীর গ্রাসে চলে যাচ্ছে। স্থায়ী বাঁধের দাবি বারবার জানিয়েও কাজ হয়নি বলে অভিযোগ। পাশাপাশি, সমতলেও বৃষ্টি হচ্ছে। জলপাইগুড়ি শহরের বেশ কয়েকটি ওয়ার্ড জলমগ্ন।


এদিকে, মাস পড়তে টানা বৃষ্টিতে তো রাশ পড়লই না, উল্টে লাগাতার বৃষ্টিতে এবার উদ্বেগ বাড়ছে।গত কয়েকধরেই একটা বৃষ্টি হয়ে চলেছে উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, উত্তর দিনাজপুর, দার্জিলিং ও কালিম্পঙে। ফের ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এর ফলে তিস্তা, জলঢাকা-সহ একাধিক নদীতে জলস্তর বাড়তে পারে।  গতবছর ৩ অক্টোবর, ভোররাতে প্রবল বৃষ্টিতে ফেটে যায় উত্তর সিকিমের দক্ষিণ লোনক লেক। হ্রদভাঙা সেই বিপর্যয়ে প্রায় ৭০ জনের মৃত্যু হয়েছিল। সর্বগ্রাসী তিস্তা তছনছ করে দিয়েছিল উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকাকে। সিকিমের দুর্যোগে তাই এবারও সিঁদুরে মেঘ দেখছে বাংলা। 


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।