কলকাতা: পরিবর্তন আনতে গেলে প্রশাসনের অন্দরে থাকতে হবে। বরাবর এমনই বিশ্বাস করে এসেছেন। সেই বিশ্বাস থেকেই ভারতের আইএএস হওয়ার দৌড়ে নাম লেখান। তার পর থেকে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সামলেছেন। তবে এ বার কেরিয়ারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক ছুঁলেন সিভি আনন্দ বোস। বাংলার রাজ্যপাল হিসেবে স্থায়ী দায়িত্ব পেলেন তিনি।

বৃহস্পতিবার স্থায়ী ভাবে আনন্দকে নিয়োগের কথা জানানো হয় রাইসিনা হিলের তরফে। লিখিত বিবৃতি প্রকাশ করে বলা হয়, ‘স্থায়ী ভাবে বাংলার রাজ্যপাল হিসেবে ডঃ সিভি আনন্দ বসুকে নিয়োগ করলেন রাষ্ট্রপতি। যে দিন দায়িত্ব গ্রহণ করবেন উনি, সে দিন থেকেই ওঁর কার্যকাল শুরু হবে’।

এই মুহূর্তে মেঘালয় সরকারের উপদেষ্টা আনন্দ। প্রশাসনিক আধিকারি হওয়ার পাশাপাশি লেখক এবং সুবক্তা হিসেবেও নাম রয়েছে। ইংরেজি, মলয়ালি এবং হিন্দি ভাষায় উপন্যাস, ছোট গল্প, কবিতা এবং প্রবন্ধ মিলিয়ে ৪০টি বই লিখেছেন। স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার প্রবেশনারি হিসেবে প্রথম চাকরিতে কলকাতাতেই কর্মজীবন শুরু।

ভারত সরকারে সচিব, মুখ্য সচিব, জেলাশাসক, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদও অলঙ্কৃত করেছেন আনন্দ। রাষ্ট্রপুঞ্জের হ্যাবিট্যাট গভর্নিং কাউন্সিলেরও সদস্য ছিলেন আনন্দ। জওহরলাল নেহরু ফেলোশিপের প্রাপক আনন্দ, লালবাহাদুর শাস্ত্রী ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন মুসৌরিরও প্রথম সদস্য, যা কিনা ভবিষ্যতের সিভিল সার্ভেন্টদের প্রশিক্ষণে দেশের মধ্যে শীর্ষে।

কেরলের মুখ্যমন্ত্রীর সচিব, শিক্ষা, বন, পরিবেশ, শ্রম, প্রশাসনিক এবং রাজস্ব বোর্ডের প্রধান সচিব হিসেবেও কর্মরত ছিলেন দীর্ঘ দিন। সুদীর্ঘ কর্মজীবনে দেশ-বিদেশ থেকে অংসখ্য সম্মান ও পুরস্কার পেয়েছেন। ভারত সরকার তাঁকে ন্যাশনাল (স্পেশ্যাল) হ্যাবিট্যাট পুরস্কারে সম্মানিত করে। বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন ১৫টি সোনার মেডেল পেয়েছেন। আইএএস হিসেবে প্রশিক্ষণ নেওয়ার সময় বিতর্ক প্রতিযোগিতায় তিন তিন বার শীর্ষ স্থান দখল করেন।। 

প্রশাসনিক কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও, নিজের ব্যক্তিগত রাজনৈতিক আদর্শও রয়েছে আনন্দের। ভারতীয় জনতা পার্টির সদস্য তিনি। তবে বিজেপি-তে থেকে দলের সমালোচনা করতেও পিছপা হন না আনন্দ। কেরলে দলের সমস্যা সমাধানে তাঁকে নিয়োগ করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেখানে গিয়ে সরাসরি রাজ্যে নেতৃত্ববদলের দাবি জানান আনন্দ। কে সুরেন্দ্রণকে কেরল বিজেপি সভাপতির পদ থেকে সরানোর দাবি জানান।

গরিব মানুষের মাথার উপর ছাদ গড়ে দেওয়ার প্রধানমন্ত্রীর যে প্রকল্প, সেই প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনাও আনন্দের মস্তিষ্কপ্রসূত। তাঁর প্রশংসায় পঞ্চমুখ দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহও।

চলতি বছরের ৭ অগাস্ট দেশের উপরাষ্ট্রপতি নিযুক্ত হন জগদীপ ধনখড়। উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে অংশ নিতে বাংলার রাজ্যপাল পদ ছাড়েন তিনি। তার প্রায় পাঁচ মাস পর স্থায়ী রাজ্যপাল পেল বাংলা। এর আগে, লা গণেশনকে অন্তর্বর্তীকালীন রাজ্যপাল নিযুক্ত করা হয়। 

রাজ্যে নির্বাচিত প্রশাসনিক প্রধান থাকতে আলাদা করে রাজ্যপাল নিয়োগের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন আজকের নয়। সাংবিধানিক পদে থেকে রাজ্যের প্রশাসনিক কাজে রাজ্যপালের হস্তক্ষেপ ঘিরে অসন্তোষও নতুন কিছু নয়। গোপালকৃষ্ণ গাঁধী থেকে কেশরীবনাথ ত্রিপাঠী এবং হালফিলে জগদীপ ধনখড়, বার বার এই বাংলাতেই রাজ্য-রাজ্যপাল দ্বৈরথ দেখা গিয়েছে।

ধনখড়ের পর অন্তর্বর্তীকালীন দায়িত্ব পেয়ে লা গণেশন আসার পর কিছুটা স্থিতাবস্থা ফিরেছিল। ধনখড়ের সঙ্গে যেমন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের সঙ্গে বার বার সংঘাত বেধেছে, গণেশনের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ উল্টোটাই ঘটেছে। রাজ্যপালের দাদার জন্মদিনে যোগ দিতে দক্ষিণে পর্যন্ত উড়ে যান মমতা। এ বার বাংলার রাজ্যপাল হিসেবে স্থায়ী ভাবে সিভি আনন্দ বোস নিযুক্ত হলেন। দীর্ঘদিন ধরে বিজেপি-র সঙ্গে যুক্ত তিনি। তাঁর সঙ্গে মমতা সরকারের সমীকরণ কী হয়, সেদিকে তাকিয়ে সকলে।