সৌভিক মজুমদার, কলকাতা: রাজ্যের ‘দুয়ারে রেশন’ (Duare Ration) প্রকল্প নিয়ে বড় ঘোষণা কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court)। আদালতের জানাল, রাজ্যের ‘দুয়ারে রেশন’ প্রকল্প জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা আইনের পরিপন্থী। আইনের চোখে এই প্রকল্পের কোনও গ্রহণযোগ্যতা নেই। বাংলার সরকারের এই প্রকল্প দেশের 'জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা আইন'-এরও পরিপন্থী বলে মত আদালতের।


'দুয়ারে রেশন' প্রকল্প আইনের পরিপন্থী, মত কলকাতা হাইকোর্টের


বাড়ি বাড়ি বিনামূল্যে রেশন পৌঁছে দেওয়ার রাজ্য সরকারের প্রকল্প 'দুয়ারে রেশন'-এর বিরোধিতা করে রেশন ডিলাররা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। সেই মামলার শুনানিতে এ দিন আদালত জানায়, 'দুয়ারে রেশন' প্রকল্প 'জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা আইন - ২০১৩'-র পরিপন্থী। আইনের চোখে এই প্রকল্পের কোনও গ্রহণযোগ্যতা নেই। কোনও কার্যকারিতাও নেই এই প্রকল্পের।


মামলার শুনানিতে বুধবার এই মন্তব্য করে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি চিত্তরঞ্জন দাশ এবং বিচারপতি অনিরুদ্ধ রায়ের ডিভিশন বেঞ্চ। এ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না নেওয়া হলেও, দুয়ারে রেশন প্রকল্পকে আইনের পরিপন্থী বলেই বিষয়টিকে সীমাবদ্ধ রেখেছেন বিচারপতিরা। তবে তাদের মন্তব্য নিয়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। 


'দুয়ারে রেশন' প্রকল্প চালু হওয়ার পর, রাজ্যের এই প্রকল্পের বিরোধিতায় আদালতের দ্বারস্থ হন রেশন ডিলাররা। কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গলবেঞ্চের দ্বারস্থ হন তাঁরা। তাঁদের বক্তব্য ছিল, বাড়িতে রেশন পৌঁছে দেওয়াটা কখনও আইন মেনে হতে পারে না। কিন্তু সিঙ্গল বেঞ্চে হেরে যান রেশন ডিলাররা। এর পর আদালতের ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হন তাঁরা। সেই মামলার শুনানিতেই এমন নির্দেশ দিল আদালত।


এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বিজেপি-র সর্বভারতীয় সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, "ভোটের রাজনীতি করতে চেয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজনৈতিক স্বার্থে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জোর করে লোকের উপকার করতে যান বার বার। কে বলেছে বাড়িতে রেশন পৌঁছে দিয়ে যাও? এটা হয়ত কলকাতার ফ্ল্যাটের লোকেরা, বয়স্করা চাইবেন, তাঁরা রেশন নেন না। গ্রামের লোকেরা ঘরবন্ধ করে কাজ করতে যান দিনের বেলা। রেশন নেবেটা কে? অর্ধেক লোক রেশন নেবেন না, রেশন লুঠ হবে, এই চক্রান্ত ছিল। ডিলাররা বুঝেছিলেন খরচে পোষাবে না, তাই মদ বিক্রি করতে চাইছেন তাঁরা।"


কিন্তু তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় বলেন, "হাইকোরেট মত দিতেই পারে, কিন্তু এর সঙ্গে একমত নই আমি। বাংলায় প্রথম নয়, এর আগে দিল্লিতে প্রয়োগ হয়েছে। এটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় করেছিলেন মানুষের সুবিধার কথা ভেবে। এখন হাইকোর্ট করতে না দিলে... কিন্তু সরকারের তো দু'টো প্রকল্প, একটি জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা, আর একটি গরিব কল্যাণ যোজনা। সেটা ওরা চালাবে না বলছে। তাই দরিগ্র মানুষকে যে সুবিধা দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল, দিতে পারবে রাজ্য সরকার"


আরও পড়ুন: Anubrata Mandal : আয়-ব্যয়ের হিসেব সংক্রান্ত নথি সিবিআইয়ের কাছে জমা দিলেন অনুব্রত কন্যা সুকন্যা


২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে ‘দুয়ারে রেশন’ প্রকল্পের ঘোষণা করেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার আওতায় বিনা পয়সায় বাড়ি বাড়ি রেশন পৌঁছে দেওয়া হবে বলে জানান তিনি। তার পর বিপুল জন সমর্থনে তৃতীয় বার রাজ্যে ক্ষমতায় ফেরেন মমতা। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পালন করে নভেম্বর মাসে প্রকল্পের সূচনা করেন নিজে হাতেই। এতে রাজ্যের ১০ কোটি মানুষ উপকৃত হবেন বলে জানান তিনি। 


এই প্রকল্পের আওতায় মাসে একবার সাধারণ মানুষের বাড়ির দোরগোড়ায় খাদ্যশস্য় পৌঁছে দেওয়ার কথা বলা হয়। জানানো হয়, শনি-রবিবার রেশন দোকান খোলা থাকবে। দোরগোড়ার রেশন কোনও কারণে না নিতে পারলে, দোকানে গিয়েও সংগ্রহ করতে পারবেন সকলে। এই প্রকল্পকে সফল করতে রাজ্যের ২১ হাজার রেশন ডিলারকে গাড়ি কেনার জন্য ১ লক্ষ টাকা করে অর্থ সহায়তা দেওয়া হবেও বলে জাাননো হয়। 


এই প্রকল্পকে সফল করতে রেশন ডিলারদের সার্বিক সহায়তা প্রার্থনা করেন মমতা। কিন্তু বাড়ি বাড়ি রেশন পৌঁছে দেওয়া নিয়ে গোড়া থেকেই আপত্তি করতে থাকেন ডিলাররা। এই প্রকল্প চালাতে গিয়ে রাজ্য সরকারের ভাঁড়ার থেকে বাড়তি ২৫ হাজার কোটি খরচ নিয়েও প্রশ্ন তোলেন অনেকে। তার পর আদালতে পৌঁছন ডিলাররা। 


একাধিক রাজ্যে এমনই প্রকল্প দেখা গিয়েছে


বিনামূল্যে রাজ্যবাসীকে খাদ্যপণ্য সরাবরাহের বাংলা সরকারের এই প্রকল্প দেশের মধ্যে বৃহত্তম হলেও, দেশের অন্যত্রও এই ধরনের প্রকল্প রয়েছে। অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টি সরকারও দিল্লিতে এমনই প্রকল্পের সূচনা করে। সেখানেই দিল্লি হাইকোর্ট প্রকল্পটিকে আটকে দেয়। আদালত জানায়, কেন্দ্রের দেওয়া খাদ্যশস্য এ ভাবে নিজেদের প্রকল্পের জন্য ব্যবহার করতে পারে না রাজ্য। ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে কর্নাটক সরকারও এমনই প্রকল্পের ঘোষণা করে।