কলকাতা : ' সেবার খুব ভোরে  সন্ধিপুজো। প্রায় আলো ফোটার আগেই আমি আর বাবা এসে বসেছি পুজোর দালানে। তিনজন আদিবাসী মহিলা তখন এলেন দালানে। দুর্গা দালানে অনেকেই আসেন।  সিঁড়িতে ফুল ছড়িয়ে উঠোন নিকিয়ে দিলেন তাঁরা। আমি আর বাবা বলাবলি করছি, এত ভোরে এঁরা কোথা থেকে এলেন। ওঁরা যখন বেরিয়ে যাচ্ছেন, বাবা-আমি দরজা অবধি গেলাম পিছু পিছু ! কী আশ্চর্য কাউকেই দেখতে পেলাম না দরজার বাইরে... বিশ্বাস করুন গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠেছিল। সেই অনুভূতি আজও জীবন্ত !' বাড়ির পুজোর কথা বলছিলেন  অভিনেতা ভাস্বর চট্টোপাধ্যায়। বাঁকুড়ায় তাঁর পারিবারিক ভিটেতে ৬৯ বছর ধরে চলছে পুজো। আগে দ্বিতীয়া-তৃতীয়াতেই চলে যেতেন সেখানে। এখন পুজো উদ্বোধন, বিচারকের ভূমিকা পালন করতে গিয়ে সপ্তমীকে পৌঁছান ভাস্বর। ছোটবেলার পুজো মানেই ভাস্বরের মন জুড়ে বাঁকুড়ার স্মৃতি। 
গায়ে সেলিব্রিটি তকমা লেগেছে ঠিকই। কিন্তু বাড়ির পুজো নিয়ে এখনও ভীষণ ব্যস্ত থাকেন তিনি। 


পুজোর শুরুটা করেন ভাস্বরের প্রপিতামহ। তারপর ৬৯ বছর ধরে চলছে পুজো। প্রথম দুই বছর মৃন্ময়ী মূর্তিতে পুজো হলেও তারপর থেকে অষ্টধাতুর দুর্গা পূজিতা হন চট্টোপাধ্যায় পরিবারের দালানে। বাঁকুড়ায় বেশিরভাগ জায়গার শিবদুর্গা মূর্তি পূজিত হলেও এই বাড়িতে মহিষাসুরমর্দিনী রূপেই পূজিত হন মা দুর্গা। কলা বৌ স্নান করে আসেন পালকিতে শোভাযাত্রা করে। বৈষ্ণব মতে পূজিত হন দেবী। ' 
বলির প্রচলন নেই এখানে। সন্ধিপুজোর ক্ষণে সারা এলাকা জুড়েই পোড়ে শব্দবাজি। কালীপুজোতেও বোধ হয় এত বাজি পোড়ে না। বাজি পোড়ানোর প্রতিযোগিতাও হয় ! ছোট বেলায় আমরাও কম্পিটিশন করতাম, স্মৃতিতে ডুব দিলেন ভাস্বর। 
চট্টোপাধ্যায় পুজোয় খাওয়া দাওয়া হয় এলাহি। তবে সকালে মায়ের ভোগারতি হওয়ার আগে পর্যন্ত উপোশ থাকেন প্রত্যেকেই। এরপর ভোগের পর অঞ্জলি দিয়ে খাওয়া দাও হয় ঢালাও ভাবে। দুপুরে উঠোনে বসে সকলে মিলে সবজি কাটা চলে একসঙ্গে। তারপর ফের সন্ধেবেলার পুজোর আয়োজন হয়। 
' ছোটবেলার পুজোটা বড় নির্মল ছিল । এখন তো অভিনয়ের সৌজন্যে আমি পরিচিত মুখ। হয়ত অনেকে আমাকে দেখতেই চলে আসেন বাড়িতে । খোঁজ খবর রাখেন কবে আমি যাচ্ছি।  অনেকে পাঁচিলে উঠে বসে থাকেন।' বলছিলেন ভাস্বর। তবে এইবছরই করোনায় তুতো দাদাকে হারিয়েছেন তিনি। তাই এবার পুজোটা কাটবে মনমরা ভাবেই।