মনোজ বন্দ্যোপাধ্যায়, পশ্চিম বর্ধমান: একাধিক মফস্বল এলাকায় আদ্যাশক্তি দেবী দুর্গার আবির্ভাব নিয়ে প্রচুর অলৌকিক কাহিনি প্রচলিত আছে। তার মধ্যে অন্যতম অণ্ডালের উখরার মহান্তস্থল সংলগ্ন ভট্টাচার্য বাড়ির দুর্গাপুজো। বেশ কয়েক দশক আগে বাংলায় রাজাদের শাসন চলত। তৎকালীন বর্ধমানের রাজার প্রধান পুরোহিত ছিলেন ভট্টাচার্য পরিবারের অষ্টম প্রজন্মের গঙ্গা নারায়ণ ভট্টাচার্য মহাশয়। কথিত আছে সেই সময় রাজার সঙ্গে কোনও কারণে মনোমালিন্য হওয়ায় গঙ্গা নারায়ণ ভট্টাচার্য মহাশয় এই উখরা এলাকায় আসেন। 


ভট্টাচার্য পরিবারের বর্তমান প্রজন্ম শর্মিষ্ঠা ভট্টাচার্য মহাশয়া জানান, কথিত আছে তাঁদের অষ্টম প্রজন্ম গঙ্গা নারায়ণ ভট্টাচার্য মহাশয় এখানে আসার পর তিনি মা দুর্গার স্বপ্নাদেশ পান। স্বপ্নাদেশে মা দুর্গা একটা গাছের নিচে মাকে পাওয়ার কথা বলেন  গঙ্গারাম ভট্টাচার্য্যকে। মায়ের আদেশ মতো গঙ্গারাম বাবু সেই গাছতলায় গিয়ে মায়ের দেখা পান এবং দর্শন দিয়ে মা গঙ্গারাম বাবুকে বলেন তিনি 'ক্ষ্যাপা মা' রূপে ভট্টাচার্য পরিবারে পূজিত হতে চান। তারপর থেকেই ভট্টাচার্য পরিবারে শুরু হয় ক্ষ্যাপা মায়ের পুজো। যা এখনও অব্যাহত রয়েছে।


তবে এই ক্ষ্যাপা মা সম্পর্কে বেশ অনেক অলৌকিক কাহিনিও শোনা যায়। এমন শোনা যায়, হঠাৎ একদিন এক শাঁখারি ভট্টাচার্য বাবুকে এসে জানান তাঁর মেয়ে শাঁখা পরেছে ফলে সেই শাঁখার দাম দিতে হবে। অবাক হয়ে ভট্টাচার্য বাবু শাঁখারিকে জানান তিনি বিয়েই করেননি। তাহলে তাঁর মেয়ে আসবে কোথা থেকে। তাহলে শাখাই বা কে পরল? শাঁখারি তখন ভট্টাচার্য মহাশয়কে একটা পুকুরের কাছে নিয়ে গিয়ে দেখান এখানেই তাঁর মেয়ে শাঁখা পরেছে। পণ্ডিত ভট্টাচার্য মহাশয় বুঝতে পারেন এটা নিশ্চয়ই মা দুর্গার ছলনা। তিনি কাতর কণ্ঠে মাকে ডাকতে শুরু করেন। শোনা যায়, হঠাৎ সেই মুহূর্তেই জল থেকে ছোট্ট ছোট্ট দুটো শাঁখা পরা হাত বেরিয়ে আসে। মা প্রমাণ দেন তিনি কন্যারূপে শাঁখারির থেকে শাঁখা পরেছেন এবং তারপর থেকেই এই ক্ষ্যাপা মা দুর্গার দশটি হাতের মধ্যে দুটি হাত বড়, বাকি আটটি হাত ছোট্ট ছোট্ট। এরকম দুর্গা সম্ভবত গোটা পশ্চিম বর্ধমান জেলায় আর কোথাও নেই। এমনটাই জানান শর্মিষ্ঠা দেবী। 


এছাড়াও আরও এক অলৌকিক কাহিনির সাক্ষী এই ভট্টাচার্য পরিবার। কথিত আছে কোনও একসময় ডাকাত দল মায়ের অলঙ্কার চুরি করার উদ্দেশ্যে মন্দিরে আসে। শোনা যায় আশ্চর্যভাবে ডাকাত দলের প্রত্যেককেই অন্ধ অবস্থায় সকালে মন্দির থেকে উদ্ধার করা হয়। সকলের ধারণা হয় মা দুর্গা নিজেই ডাকাত দলকে শাস্তি দিয়েছেন। ডাকাতরা মায়ের কোনও অলঙ্কার নিয়ে যেতে পারেনি।


আরও পড়ুন: Durga Puja 2021: বক্রেশ্বরের সতীপীঠে দুর্গারূপে পূজিত মনপাত দেবীর অষ্টধাতুর মূর্তি


অন্যান্য দুর্গা ঠাকুরের মতোই ভট্টাচার্য পরিবারের দুর্গাও জাঁকজমকের সঙ্গে পূজিত হন। এই ভট্টাচার্য পরিবারে বোধনের দিন থেকেই মায়ের পুজো শুরু হয়ে যায়। ভট্টাচার্য পরিবারের একেবারে কনিষ্ঠ প্রজন্ম আর্যবি ভট্টাচার্য জানান,পুজো কয়েকদিন তাঁরা বাড়ি থেকে বেরোতেই চান না। বাড়ির সকলে মিলে একসঙ্গে থেকে যে আনন্দ হয় সেটা বাইরে কখনওই হয় না, বলে বক্তব্য তাঁর। বন্ধুদের সঙ্গে বাইরে বেরোলেও মন পড়ে থাকে বাড়ির পুজোতেই।