গোপাল চট্টোপাধ্যায়, বক্রেশ্বর: ৫১ পীঠের মধ্যে অন্যতম পীঠ বক্রেশ্বর সতীপীঠ। কথিত আছে এখানে মায়ের ভ্রু-র মধ্যস্থল "মন" পড়েছিল।
এখানে মনপাত দেবী মহিষাসুরমর্দিনী দুর্গা সিংহবাহিনী অষ্টধাতুর মূর্তি। প্রাচীন কাল থেকেই এখানে কোষ্ঠিপাথরেই পূজিত হতেন মা। পরে খাকিবাবা এখানে মূর্তি স্থাপন করে পুজো শুরু করেন।
প্রতিদিনই ভোগ নিবেদন ও সন্ধ্যারতির মাধ্যমে নিত্যপুজো করা হয়। দুর্গাপুজোর ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত চলে বিশাল আয়োজন।
মহাষষ্ঠীতে দেবী মাকে নতুন বেনারসি শাড়ি এবং সোনার অলঙ্কার, ফুলমালা দিয়ে সাজানো হয়। মহাষষ্ঠীতে ফলভোগ ও পায়েশ ভোগ মাকে নিবেদন করা হয়।
এরপর সপ্তমীতে সুজি, চিঁড়ে ও দই মহাভোগ দেওয়া হয়। মহাঅষ্টমীর সন্ধিক্ষণে শুরু হয় অষ্টমীর পুজো। অষ্টমীর দিন এখানে চাল কুমড়ো ও আখ বলি দেওয়ার রীতি আছে।
নবমীর দিন মায়ের উদ্দেশ্যে খিচুড়ি ভোগ হয়। পাঁঠা বলি দেওয়ার রীতি আছে এই পুজোয়। এরপর খিচুড়ি এবং মহাভোগ ভক্তদের উদ্দেশ্যে বিতরণ করা হয়।
দশমীতে ঘট বিসর্জন করে মাকে বিসর্জিত করা হয়। এই পুজোকে ঘিরে ভক্তদের সমাগম থাকে চোখে পড়ার মতো। কিন্তু এই পুজোর ক'দিন মায়ের গর্ভগৃহে প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকে ভক্তদের।
অন্যদিকে, বীরভূমের কীর্ণাহারে সরকার বাড়ির পুজো প্রায় ৩৫০ বছরের পুরনো। সরকার বংশের পূর্বপুরুষ কিশোর কুমার সরকার এই পুজো শুরু করেছিলেন।
এখানকার প্রতিমার বৈশিষ্ট্য এখানে দেবী দুর্গার দশটি হাত থাকলেও আটটি হাত হয় ছোট এবং দুটি হাত বড়। তাই এই দুর্গা প্রতিমা সরকার বাড়ির ছোট হাতের দুর্গা নামে পরিচিত।
এক কাঠামোর দুর্গা প্রতিমায় যেমন থাকে কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী, সরস্বতী ও মহিষাসুর। তবে এখানে শুধু কার্তিকের বাহন ময়ূরকে দেখা যায়। তাছাড়া লক্ষী বা সরস্বতীর বাহনকে এখানে দেখা যায় না। এছাড়া, এখানে সিংহের পরিবর্তে নরসিংহকে দেখা যায়।
সরকার বংশের এগারতম বংশধর রাজা সরকার জানান, মহালয়ার পরদিন অর্থাৎ প্রতিপদের দিন থেকেই ঘট পুজোর মধ্যে দিয়ে এখানে শুরু হয়ে যায় দুর্গাপুজো।
এখানকার পুজোর আরও এক বৈশিষ্ট্য হল সপ্তমীর দিন থেকেই এখানে হোমযজ্ঞ শুরু করা হয়। সেই হোমের আগুন জ্বলতে থাকে দশমী অবধি। অর্থাৎ হোমের আগুন জাগিয়ে রেখে প্রতিদিন চলে হোম যজ্ঞ।
কর্মসূত্রে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে থাকা সরকার বাড়ির সদস্যরা প্রতিপদের দিন থেকেই শুরু করে কীর্ণাহারের বাড়িতে ফিরতে।
আরও পড়ুন: বাড়ির পুজোয় নিজেই চণ্ডীপাঠ করতেন প্রণব মুখোপাধ্যায়, মৃত্যুতে জৌলুসহীন মিরাটির পুজো