অমিত জানা, পশ্চিম মেদিনীপুর: পায়ে পায়ে সাড়ে চার শতাব্দী পার। এখনও একই প্রথা, একই নিয়ম মেনে হয়ে আসছে পশ্চিম মেদিনীপুরের ভুঁইয়া বাড়ির পুজো। এই পুজোর আরও একটি পরিচয় রয়েছে। এটি রাজ্যের মন্ত্রী মানস ভুঁইয়ার বাড়ির পুজো।


পশ্চিম মেদিনীপুরের সবং কোলন্দা গ্রামে ভুঁইয়া বাড়ির পুজো। এখানে দেবীর আরাধনায় মিশে রয়েছে ঐতিহ্য ও সাবেকিয়ানা। এই পুজো  মন্ত্রী মানস রঞ্জন ভুঁইয়ার বাড়ির ত্রয়োদশ প্রজন্মের পুজো বলে পরিচিত। এই পুজোকে ঘিরে পরিবারে সদস্যরা তো বটেই, গ্রামের মানুষরা হুল্লোড়ে মেতে উঠেন। পরম্পরা ও রীতি মেনেই সাড়ে চারশো বছরেরও বেশি সময় ধরে চলে আসছে কোলন্দা ভূঁইয়া বাড়ির গড়ের পুজো।


পুজোর ইতিহাস:
কথিত আছে কন্দর্পনারায়ণ ভূপাল দাস ভূঁইয়া বর্গীদের অত্যাচার থেকে বাঁচতে কেলেঘাই নদীর পাড়ে বসবাস শুরু করেন। সেখানেই শুরু হয় এই দুর্গাপুজো। বছরের পর বছর ধরেই সেভাবেই চলে আসছে ওই পুজো। স্থানীয়দের বিশ্বাস, দেবীর কাছে যাঁরা যা মানত করেন তাঁদের মনস্কামনা দেবী পূর্ণ করেন। ভুঁইয়া গড়ের বাড়ির পুজোয় প্রতিদিনই ভিড় দমান স্থানীয় বাসিন্দারা। দুর্গা মণ্ডপের পাশেই রয়েছে ভুঁইয়া পরিবারের কুলদেবতা শ্যামসুন্দর জীউ ও শ্রী রাধিকার মূর্তি। দীর্ঘদিন ধরেই পুজো চলে আসছে। কথিত রয়েছে, ওই পরিবারের কোনও একজন স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন যে কুলদেবতা পরিবারের সঙ্গেই থাকতে চান। তারপরে কুলদেবতাকে দুর্গা মন্দিরেই নিয়ে আসেন পরিবারের সদস্যরা। সেই সময় থেকেই দুর্গামূর্তির পাশেই কুলদেবতার দৈনন্দিন পূজা আর্চনা চলে।


বন্দুক চালিয়ে সন্ধিপুজো:
মন্ত্রী মানস রঞ্জন ভুঁইয়া বলেন, 'আমরা যতটুকু প্রামাণ্য দলিল পেয়েছি তাতে আমাদের এই গড়ের পুজো কন্দর্পনারায়ণ ভুঁইয়ার ত্রয়োদশ প্রজন্ম। আমরা ছোটবেলা ষষ্ঠীর দিন থেকে বাড়ির পুজোয় অংশ নিতাম। ছোটবেলায় মনে পড়ে বাবা বন্দুক চালানোর পরে সন্ধিপুজো এবং কুমারী পুজো শুরু হতো। অনেক গ্রামের মানুষ আসতেন এবং সবাই প্রসাদ খেয়ে যেতেন। এটা একটা ঐতিহ্য। রাজ্যের বাইরে, বিদেশে যারা আছেন তারা এই পূজোর সময় মিলিত হন। কুলদেবতা রয়েছেন তাই প্রতি বছর দুর্গা পুজোর সময় বাড়ির পুজোতে কিছুক্ষণের জন্য হলেও অংশগ্রহণ করতে যাই।'পরিবারের আর এক সদস্য গীতা রানি ভুঁইয়া বলেন, 'বাড়ির এই পুজোতে ঠাকুরের প্রসাদ বাড়িতেই তৈরি করে নিবেদন করা হয়। আর সেই অনুযায়ী প্রথা চলে আসছে বরাবর। আমরা যে যেখানেই থাকি না কেন, পুজোর সময় মিলিত হয়ে আনন্দ উপভোগ করি। চারটে দিন সকলে মিলে আনন্দ উপভোগ করি।' এই বাড়ির বৈশিষ্ট্য, যে বাইরের কোনও মিষ্টি ঠাকুরকে দেওয়া হয় না। বাড়িতেই তৈরি করে মিষ্টান্ন ভোগ দেওয়া হয়। নবমীতে বিশেষ আকর্ষণ কুমারী পুজো। আমাদের এই বাড়ির পুজো হলেও বাইরের লোকজন ভিড় জমান এবং পুজো দেখতে আসেন।


আরও পড়ুন: বিসর্জনে ঢাকের তালে নাচে মাতলেন কল্যাণ, সঙ্গ দিলেন প্রবীর