অভিজিৎ চৌধুরী, মালদা: দেশ থেকে বিদেশ। নানা কারণে নানা ভাবে হিংসা-হানাহানির ঘটনা সামনে এসেছে। কোথাও ধর্মের নামে, কোথাও জাতির নামে। এই হিংসা-হানাহানির আবহে বারবার সম্প্রীতির ছবি দেখায় বাংলা। দুর্গাপুজো ঘিরেও তেমনই ছবি দেখা যায় মালদায়। 


মালদার (Malda) চাঁচল। এখানেই রয়েছে চাঁচল রাজবাড়ি (Chanchal Rajbari)। প্রাচীন এই পুজোর ছত্রে ছত্রে জড়িয়ে সম্প্রীতির নানা নিদর্শন। বিশেষ করে বলতে হয় চাঁচল রাজবাড়ির বিসর্জনের নিয়মের কথা। বাংলাতে একটা স্লোগান অনেকেই বলে থাকেন- 'ধর্ম যার যার-উৎসব সবার'। এই ছবিটাই বাস্তবে দেখা যায় চাঁচল রাজবাড়ির দুর্গাপুজোর বিসর্জনে। হিন্দুদের এই উৎসবে, দেবী দুর্গার বিসর্জনের সময় এখানে হাতে আলো নিয়ে পথ দেখান মুসলিম সম্প্রদায়ের সহ-নাগরিকরা। মালদার চাঁচল রাজবাড়ির পুজোর এই রীতি বহু পুরনো। নদীর ওপারে তখন বিসর্জনের প্রস্তুতি চলছে আর এপাড়ে দেবীকে লন্ঠনের আলোয় বিদায় জানাচ্ছেন সইফুদ্দিন, আকবর আলিরা। দশমীর দিন এই ছবি ধরা পড়েছে মালদার চাঁচলের সতীঘাটে।                           


রাজবাড়ির পুজো নামে পরিচিত এই পুজো প্রায় সাড়ে তিনশো বছরের পুরনো। শোনা যায়, রাজা রামচন্দ্র রায় বাহাদুর এই পুজো শুরু করেন। এখন রাজাও নেই, নেই তার রাজপাট। কিন্তু রাজার আমলের সব রীতিই রয়ে গিয়েছে। দশমীর দিন গোধূলি লগ্নে চাঁচল পাহাড়পুরের চন্ডী মন্দিরের সামনে, ঠিক দুশো মিটার দূরে, মহানন্দা নদীতে বিসর্জন দেওয়া হয় দেবীপ্রতিমাকে। আর সেই সময় নদীর অন্য় পাড়ে বেশকিছু সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ লণ্ঠনের আলো জ্বালিয়ে মা কে বিদায় জানায়। এবারও তাই হয়েছে।         


স্থানীয় বাসিন্দা শেখ সইফুদ্দিন বলেন, 'বহু প্রাচীন প্রথা। প্রতিবছর আলো দেখায়। আগে আরও ছিল। এখন কমেছে। ছোটবেলা থেকে শুনেছি এখান থেকেই চন্ডীর উৎপত্তি।' পুরোহিত ভোলানাথ পান্ডে বলেন, 'প্রতিবছর এভাবেই মাকে পুজো করি। সংখ্য়ালঘুরা লন্ঠন দেখায়। তারপর মাকে জলে দেওয়া হয়। এটাই প্রথা। রাজার সময় থেকে চলে আসছে।'                    


সময়ের সঙ্গে সঙ্গে লণ্ঠনের জায়গা নিয়েছে চার্জার, লাইট। কিন্তু সম্প্রীতির ঐতিহ্যে ছেদ পড়েনি।


আরও পড়ুন: পুজোর মধ্যেই ঘর ভাঙচুর, ফের প্রকাশ্যে TMC-র গোষ্ঠী কোন্দল, কী বার্তা কুণালের ?