কলকাতা : সপ্তমীর ( Maha Saptami ) সকালের প্রধান রীতি হল নবপত্রিকা স্নান ( Nabapatrika Snan )। চলতি কথায় কলা বউ ( Kolka Bou )  স্নান। ষষ্ঠীর বোধনের পর সপ্তমীর সকালে নটি গাছের সমন্বয়ে কলা বউ এসে বসে গণেশের পাশে। তাই অনেকেরই ধারণা কলা বউ গণেশের স্ত্রী। এটা এক্কেবারে ভুল ধারণা। নবপত্রিকা আসলে দুর্গারই রূপ। এই গাছ আদৌ গণেশের স্ত্রী নন, বরং মা দুর্গা অর্থাৎ গণেশের জননী। 


 নবপত্রিকা বলতে বোঝানো হয় নটি গাছকে। যাতে মূলত দৃশ্যমান কলাগাছ। এটি ছাড়াও ৮ টি গাছ থাকে। যা জড়িয়ে ফেলা হয়  শ্বেত অপরাজিতার লতা ও ন গাছা হলুদ সুতোয়। তারপর গাছ-গোছাকে গঙ্গায় স্নান করাতে যাওয়া হয়। 
নবপত্রিকার সঙ্গে ফলনের দেবীর বন্দনারও মিল খুঁজে পান অনেকে। কী কী গাছ থাকে এই নবপত্রিকায় ?  কলা গাছ, কচু গাছ, হলুদ গাছ, জয়ন্তী গাছ, বেল গাছ, ডালিম গাছ ,  অশোকের ডাল, মান কচু গাছ এবং ধান গাছ। তাদের পরানো হয় লালপেড়ে শাড়ি। তারপর তাকে  সিঁদুরের টিপ পরানো হয়।   


নবপত্রিকার পুজো প্রকৃতপক্ষে শস্যদেবীর পুজো। এর পিছনে একেবারে স্বতন্ত্র ব্যাখ্যা দিয়েছেন গবেষক নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী। 'দুর্গায়ৈ সপরিবারায়ৈ' গ্রন্থে লেখক ব্যাখ্যা দিয়েছেন, দুর্গাপূজার সপ্তমী  সকালবেলায় উঠেই প্রথম এবং প্রধান কাজটি হল নবপত্রিকার প্রতিষ্ঠা, যাকে লৌকিক ভাষায় বলে কলা-বউ স্নান ।  'নবপত্রিকা বলতে অর্থাৎ নয়টি পাতা মানে আসলে নয়টি গাছ, নয়টি উদ্ভিদ। এই নদী-পুষ্করিনীর বাংলায় যে উদ্ভিদগুলি ভগবতী দুর্গার প্রথম অবয়ব তৈরী করে, তার মধ্যে অনেকগুলি বাংলার অতিসাধারণ মানুষের খাদ্য।' 


নবপত্রিকার প্রধান গাছ হল কলাগাছ, যা কি না'ফার্টিলিটি’ আর ‘ভেজিটেশনের’ প্রতীক। আবার কচু আশ্বিনের প্রথমে হয়। অনেক সাধারণ বাঙালির পেট ভরায়। আবার একই ধরনের  আর এক আনাজ মানকচু। শরতের রোদ্দুর পেলে এটাও খুব সুস্বাদু হয়। ফলের মধ্য আছে আছে বেল ও দাড়িম্ব অর্থাৎ ডালিম। বেলপাতা শিব এবং পার্বতীর প্রিয়তম । ডালিম আশ্বিন মাস থেকে অঘ্রান মাস পর্যন্ত ভাল ফলে। হিমোগ্লোবিন কমে গেলে বা শরীর দুর্বল হলে ডালিম দারুম কাজ করে।  এছাড়া আছে জয়ন্তী এবং অশোক গাছ। এই দুটি বৃক্ষই আয়ুর্বেদের মহৌষধের কাজ করে।  আর জয়ন্তী তো দুর্গার একটি নাম।  এর বীজ  স্ত্রীরোগ নিরাময়ের কাজে লাগে। এরও ফলনও হয় আশ্বিনের শেষে। এছাড়া আছে হলুদ। কাঁচা হলুদ থেকে পাকা হলুদ শরীরের পক্ষে যেমন ভাল, তেমন বহু পুজো উপাচারেও ব্যবহৃত। এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে এই সময়ে ফুলে-ফলে ভরে এমন ফলদায়িনী বৃক্ষের পাতার সমন্বয়েই নবপত্রিকা। আদতে শষ্যের দেবী। 


 নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী লিখছেন, 'নবপত্রিকার প্রত্যেকটি উদ্ভিদ, ফল এবং ফুলের অধিষ্ঠাত্রী দেবীরা এইদিন সকলেই দুর্গার এক-একটি রূপ এবং সমাহারে তাদের নবদুর্গা বলা হয়। পুজোর সময় বলতে হয়— নবপত্রিকার আবাসিনী নবদুর্গাকে আমার প্রণাম — নবপত্রিকা-বাসিন্যৈ নবদুর্গায়ৈ নমঃ।'


আরও পড়ুন :


কেমন ছিল পুজোর প্রথম দিনগুলি? স্মৃতিচারণ করলেন সজল ঘোষ